‘ডম্’ ধাতু+ অচ্ প্রত্যয় করে ‘ডম’ শব্দ নিষ্পন্ন হচ্ছে৷ ‘ডম’ শব্দটি ব্যুৎপত্তিগত স্বীকৃতি পাচ্ছে কিন্তু ‘ডোম’ শব্দটি সে স্বীকৃতি না পেলেও বৈবহারিক স্বীকৃতি পাচ্ছে৷ তাই সংস্কৃতে ডম/ডোম দুই-ই শুদ্ধ৷ ‘ডম্’ ধাতুর অর্থ বাদ্যযন্ত্রে ধবনি সঞ্চার করা৷ প্রাচীনকালে যারা ৰাঁশ কেটে ৰাঁশী তৈরী করত, ‘ধবনিসৃষ্টিকারী’ এই অর্থে তাদের ‘ডম’ বা ‘ডোম’ ৰলা হত৷ ডোম-রমণীরা বাঁশের ট্যাচারি দিয়ে নবজাত শিশুর নাড়ি কেটে দিতেন৷ ৰাঁশের সঙ্গে ডোমেদের ছিল এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক৷ এখনও লোকে ৰলে থাকে ‘বাঁশ’ ৰনে ডোম কাণা৷ প্রাচীন ৰাংলায় ডোমের জন্যে ‘ডোম্ব’ (পুং) ও ‘ডোম্বী’ (স্ত্রী) শব্দের ব্যবহার ছিল৷
‘‘নগর বাহিরি রে ডোস্বী তোহর কুড়িয়া’’৷
ৰৌদ্ধযুগের শেষের দিকে এই ডোমেদের একটা সামাজিক প্রতিষ্ঠা ঘটেছিল৷ বুদ্ধের পূজা না করে যখন ৰাঙলার মানুষ অপর রত্ন ধর্মের (ধর্ম) নামে বুদ্ধেরই পুজো চালিয়ে যেতে থাকে, (বুদ্ধ শিষ্যদের ত্রিরত্ন হচ্ছে বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি, সংঘং শরণং গচ্ছামি, ধম্মং শরণং গচ্ছামি) সে সময় বুদ্ধমন্দিরে সোজাসুজি বুদ্ধের পুজো না করে গোলাকার (বৌদ্ধ শূন্যবাদের প্রতীক) ধর্মঠাকুরের পুজো শুরু হয়েছিল৷ এই ধর্মঠাকুরের পূজারী হতেন সর্বক্ষেত্রে অব্রাহ্মণ জাত-ৰাঙ্গালী-বিশেষ করে সদ্গোপ, জালিক কৈবর্ত্ত ও ডোমেরা ৷ এঁরা তাঁৰার পৈতেও পরতেন৷ পরবর্ত্তীকালে ধর্মঠাকুর শিবে বা ৰুড়োশিবে রূপান্তরিত হলেন৷ ডোমেরা এই ধর্মঠাকুররূপী বুদ্ধমন্দিরে পৌরোহিত্য করতেন ৰলে তারাও ‘পণ্ডিত’ নামে সম্বোধিত হতেন৷ এখনও ডোমেদের মধ্যে ‘পণ্ডিত’ পদবী প্রচলিত রয়েছে৷ ৰাংলা ভাষায় প্রামাণ্য বৌদ্ধপুস্তক ‘শূন্যপুরাণ’-এর রচয়িতা রামাই পণ্ডিত এই ডোম-গোষ্ঠীর মানুষ ছিলেন৷ ইনি ছিলেন পশ্চিম রাঢ়ের বাঁকুড়া জেলার মানুষ৷ পরবর্ত্তীকালে ডোমেদের মধ্যে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাব বেড়ে যায়৷ ‘চৈতন্যচরিতামৃত’-য়ে বর্ধমান জেলার কুলীনগ্রাম সম্বন্ধে ৰলা হয়েছে---
‘‘কুলীনগ্রামের ভাগ্য কথনে না যায়৷
শূকর চরায় ডোম সেও কৃষ্ণ নাম গায়৷!’’
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)