মানুষের ক্ষুধা অনন্ত৷ এই অনন্ত ক্ষুধাকে সে যদি জাগতিক ভোগ্য বস্তুর দিকে ছুটিয়ে দেয় তাহলে মানুষে-মানুষে সংঘর্ষ বাধবেই৷ কারণ জাগতিক সম্পদ সীমিত৷ একজনের প্রাচুর্য ঘটলে অন্যের অভাব দেখা দেবে৷ মানুষের এই ক্ষুধা মানস তথা অধ্যাত্ম সম্পদেই মেটাতেই হবে৷ ব্রহ্ম অকৃপণভাবে অনন্ত মানস তথা অধ্যাত্ম সম্পদ মানুষের সামনে সাজিয়ে রেখেছেন৷ মানুষকে সেই সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে হবে৷
একতা ও সুবুদ্ধি মানুষকে সার্থকতার পথে নিয়ে যায়৷ এই শুভবুদ্ধি জাগাতে গেলে দর্শনের মোটা মোটা বই পড়ে কোনো কাজ হবে না, এজন্যে ব্যষ্টিগত জীবনে যম-নিয়মের অনুশীলন করতে হবে৷ ঐক্য স্থাপনা করতে হলে এমনই একাটি আদর্শ বেছে নিতে হবে দৈশিক, কালিক বা পাত্রিক ভেদ যাকে প্রভাবিত করতে পারবে না তাই ভূমা-আদর্শকেই---ব্রাহ্মী আদর্শকেই জীবনের ধ্রুবতারা রূপে গ্রহণ করতে হবে৷ যারা যম-নিয়মে প্রতিষ্ঠিত---যারা ভূমার সাধক, আগেই বলেছি তারাই সদবিপ্র৷ মানুষের প্রতিনিধিত্ব কেবল তারাই করবে৷ নিংস্বার্থ ভাবে জীবসেবা কেবল তারাই করতে পারে৷ মানুষ সদবিপ্রকে চিনে নেবে তার আচরণ থেকে, তার সেবাপরায়ণতা থেকে, তার কর্মনিষ্ঠা থেকে, তার চারিত্রিক দৃঢ়তা থেকে৷
এই সদ্বিপ্ররা দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করবে---‘‘সকল মানুষের একজাত’’, ‘‘প্রত্যেক মানুষেরই সমান-অধিকার ‘‘মানুষ-মানুষ ভাই-ভাই’’৷ এরা বজ্রকণ্ঠে সমাজ-শোষকদের জানিয়ে দেবে---‘‘মানুষকে শোষণ চলবে না’’, ‘‘ধর্মের ভণ্ডামী চলবে না’’৷ শতধাবিচ্ছিন্ন মানুষ-সমজকে সেবা-ত্যাগের প্রতীক গৈরিক পতাকার নীচে আহ্বান জানিয়ে তারা উদাত্ত কণ্ঠে লবে---‘‘দুনিয়ার মানুষ এক হও’’৷ আর বলবে---
‘‘সংগচ্ছধবং সংবদধবং সংবো মনাংসি জানতাম্৷
দেবাভাগং যথাপূর্বে সংজানানা উপাস্যতে৷৷
সমানী ব আকুতি সমানাঃ হৃদয়ানি বঃ৷
সমানমস্তু বো মনো যথা বঃ সুসহাসতি’’৷৷
[রেনেশাঁ ক্লাবের স্থাপনাদিবস উপলক্ষ্যে ১৯৫৮ (ইং) সালের ২৬শে জানুয়ারী ত্রিমোহান (ভাগলপুর) যুবসম্মেলনে প্রদত্ত অভিভাষণ]