‘গণেশ’ শব্দটির মানে হ’ল জননায়ক---একই অর্থে গণপতি, বিনায়ক৷ মানুষের স্বাভাবিক মনস্তত্ব হচ্ছে এই যে নিজের জিনিসকে সে একটু ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখায়৷ কারো পুকুরের রুই মাছ যদি বারটা মোষের সমান হয় তাহলে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর পুকুরের ইলিশমাছ অন্ততঃ চবিবশটি মোষের সমান হবেই তাই নিজের গণপতি বা দলপতি যে একজন হেজিৰেজি লোক নন সেটি দেখাবার জন্যে তার মুখটি করে দেওয়া হয়েছে সর্ববৃহৎ জানোয়ারের মুখের মত অর্থাৎ হাতীর মত৷ এতে নিজের দলপতির শ্রেষ্ঠত্বই বিঘোষিত হচ্ছে, দলপতির চেহারাটি নাদুস নুদুস হলে দলের মর্যাদা অবশ্যই বৃদ্ধি পায়, কারণ তাতে প্রমাণিত হয় যে দলের মধ্যে প্রাচুর্যের তথা ঐশ্বর্যের মাধুর্য রয়েছে৷ ৰড় ৰড় গুদামের মালিক যাঁরা তারা জানেন ৰড় গুদামের প্রাচুর্য্যের মধ্যে যে জীবটি বাস করে সে হচ্ছে ‘ইঁদুর’৷ তাই পায়ের কাছে ইঁদুর থাকার অর্থ হ’ল গুদামের মালিকের প্রাচুর্য আছে৷ তাই দলপতির আশেপাশে যদি ইঁদুর থাকে সেটা তার সমৃদ্ধিরই দ্যোতক৷ যাই হোক, প্রাগৈতিহাসিক যুগে দলপতির কল্পনা ঠিক কীভাবে হয়েছিল ৰলা শক্ত৷ তবে এই ধরণের চিত্তা যে তার পরিপুষ্টি ঘটিয়েছিল এমন ৰলা যেতে পারে৷
হাতীর ভোজ্য অল্পস্বল্প নয়৷ এরা যত গাছ খায় তার চার গুণ গাছ নষ্ট করে৷ তাই ৰনের মধ্যে হাতী থাকলে ৰনবিভাগ বেশ বিড়ম্বনাদায়ক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে৷ পৌরাণিক যুগে অনেকেই ভাবত, হাতী যখন সব সময় খোরাক খুঁজে বেড়াচ্ছে নিশ্চয়ই গণেশও একটু ৰেশী মাত্রায় চাল-কলা নৈবেদ্য ভালৰাসেন৷
রাঢ়ের কোথাও কোথাও এককালে হাতীর খুৰ উপদ্রব ছিল৷ এখনও আছে, তবে কমছে৷ সেখানকার গ্রামের লোকেরা ভয়ে-ভক্তিতে হাতীকে হাতী না বলে গণেশ ঠাকুর ৰলত, এখনও বলে৷ তাদের ছড়ায় আছে
‘‘গড় করিলাম গণেশ ঠাকুর ধনেপ্রাণে ৰাঁচাইও৷
ভুট্টা দিৰ, কলা দিৰ, দুধি-ভাতি খাওয়াই দিৰ,
পাণ-সুপারি-পৈতা দিৰ ধনেপ্রাণে ৰাঁচাইও৷’’
যাই হোক, ‘ঢুণ্ঢ’ ধাতুর অর্থ খুঁজে ৰেড়ানো৷ পুরাণকাররা ভাবতেন, যে দেবতা সবসময় চাল-কলা নৈবেদ্য খুঁজে বেড়াচ্ছেন তার.জন্যে ‘ঢুণ্ঢ’ ধাতুর উত্তর ‘ণিনি’ প্রত্যয় করে ‘ঢুণ্ঢি’ শব্দটি ৰেশ চলে৷ তাই ‘ঢুণ্ঢ’ বা ‘ঢুণ্ডিদেব’ মানে গণেশ৷ আর ‘ঢুণ্ঢ্’+‘ড’ করে যে ‘ঢ’ শব্দটি পাচ্ছি তারও একটি মানে ‘গণেশ’৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)