ঢঃ (১) বৈদিক ভাষায় ‘ঢম্’ একটি প্রাচীন ধাতু যার অর্থ একত্রিত করা বা একত্রিত হওয়া, যূথৰদ্ধ বা দলবদ্ধ হওয়া, অনেকের সঙ্গে মিলে মিশে থাকা, বক্রতাপ্রাপ্ত হওয়া বা বেঁকে যাওয়া বা স্বভাবগতভাবে বাঁকা হয়ে থাকা৷ এই ‘ঢম্’ ধাতুর ণিজন্তে তদুত্তরে ‘রক্’ প্রত্যয় করে পাই ‘ঢাম্র’৷ পৃষীদীর্ঘে পাই ‘ঢামর’৷ ‘ঢামর’ শব্দের ভাবারূঢ়ার্থ ঃ যে একত্রিত হয় বা একত্রিত করে, যে বা যারা যুথবদ্ধ হয়ে থাকে বা বেঁকে যায় বা বাঁকা হয়ে থাকে৷ যোগারুঢ়ার্থে ‘ঢামর’ শব্দের অর্থ হাতী৷ এই ‘ঢম্’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ঢ’ শব্দ পাচ্ছি তার একটি মানে হচ্ছে হাতী৷ হাতীর পর্যায়বাচক শব্দ হস্তী, করী, গজ, বারণ, ঐরাবত (বৃহৎ), কুঞ্জর প্রভৃতি৷ হাতী যুথবৰদ্ধ বা দলবদ্ধ হয়ে থাকে৷ সে বাঘের মত এককভাবে বিচরণকারী বা অসামাজিক জীব নয়৷
(২) যোগারূঢ়ার্থে ‘ঢামর’ ৰলতে সিংহকেও বোঝায়৷ সিংহও যুথবদ্ধ জীব৷ সিংহের পর্যায়বাচক শব্দ কেশরী, হরি প্রভৃতি
‘হরির উপরে হরি, হরি শোভা পায়৷
হরিকে দেখিয়া হরি হরিতে লুকায়৷’’
‘হরি’ শব্দের একটি অর্থ ‘জল’, একটি অর্থ ‘পদ্ম’, একটি অর্থ ‘ব্যাঙ’, একটি অর্থ ‘সাপ’ একটি অর্থ ‘সিংহ’৷ ছড়াটির মানে হচ্ছে, জলেতে পদ্ম রয়েছে, পদ্মের ওপর ব্যাঙ বসে রয়েছে, জলে সাপ আর ডাঙ্গায় সিংহ দেখে ভয়ে ব্যাঙ ছপাৎ করে জলেতেই লুকিয়ে পড়ল৷ তাই ‘ঢম্’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ঢ’ শব্দ পাই তার একটি মানে ‘সিংহ’৷
(৩) ভেড়া যার সংস্কৃত মেষ, গড্ডাল, মেঢ্র (মেঢ্র> মেঢ্ঢ> মেঢা> মেঢ়া৷ রাঢ়ের একটি গ্রামের নাম মেঢ়তলা) একটি যুথৰদ্ধ জীব৷ তাই ‘ঢামর’ শব্দের একটি যোগারূঢ়ার্থ হচ্ছে ভেড়া৷ ‘ঢম্+ ড= ঢ শব্দেরও একটি মানে ভেড়া৷ ভেড়ার মত যূথৰদ্ধ জীব পৃথিবীতে বিরল৷ যখন ভেড়ার পাল চলতে থাকে তখন একটি ভেড়ার পর আরেকটি ভেড়া, তারপর অগুণতি ভেড়া---দেখে মনে হয় যেন ঢেউয়ের পর ঢেউ চলছে৷ একে সংস্কৃতে ৰলে ‘গড্ডালিকা প্রবাহ’৷ ‘গড্ডাল’ মানে ভেড়া ‘গড্ডালিকা প্রবাহ’ মানে ভেড়ার ঢেউ৷ এই ‘গড্ডাল’ শব্দ থেকে গাডল/গাড়র প্রভৃতি শব্দগুলি এসেছে৷ ৰাংলাতেও পরুষবাক্য হিসেৰে ‘গাড়োল’ শব্দের অল্পস্বল্প ব্যবহার আছে৷ ‘গাড়োল’ শব্দটিও ওই ‘গড্ডাল’ শব্দ থেকে এসেছে যার মানে ভেড়া৷ উত্তর ভারতে যে সকল জনগোষ্ঠীর জীবিকা ভেড়া পালন করা তাদের ৰলা হয় ‘গড়েরী’৷ ৰলা হয়েছে ঃ
‘‘ঐসী গতি সংসার কী সব গাড়র কী ঠাট৷
এক জৰ গাঢ় মে গিরে সব জাত তেহি ৰাট৷৷’’
পৃথিবীর সাধারণ মানুষের অবস্থা হচ্ছে গড্ডালিকা-প্রবাহের মত৷ একটি গড্ডাল যখন গর্ত্তের মধ্যে পড়ে ৰাকি গড্ডালরাও বুদ্ধিবিচার না করে আক্কেল দাঁতের আক্কেল খুইয়ে সেই গর্ত্তেই পড়ে যেতে থাকে৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)