সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের ‘‘আনন্দমঠ’’ উপন্যাসের মুখবন্ধে বঙ্গজননীর রূপ বর্ণনা করে লিখিয়াছিলেন ‘‘মা যেমনটা ছিলেন, ঐশ্বর্যশালীনী, যেমন হয়েছেন রিক্ত নিঃস্ব আর যেমন হবেন৷’’ আর এই উক্তিটির রেশ ধরে আমার প্রশ্ণ ‘‘আমরা বাঙালীরা কি ছিলাম, কি হয়েছি, আর কি হব? আর এই প্রশ্ণের উত্তর খুঁজে পাব প্রত্যেক বাঙালীর আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে৷ বর্তমান অবস্থার এই গতানুগতিক ধারা অব্যাহত থাকলে একদিন হয়তো আমরা যাবো কালের অতল তলে৷ ঔদাশীন্যতাই হোক, জাতীয় চেতনার অভাবেই হোক আজ বাঙালী জাতির জীবনে নেমে এসেছে এক অন্ধকারময় পরিস্থিতি৷ বাঙালী জাতির একতা হারিয়ে ক্রমশই যেন ভুলে যাচ্ছে তার ঐতিহ্যবাহী জাতিসত্তা কে৷ স্বার্থান্বেষী শক্তির আবির্ভাব, হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, কুটীল রাজনীতির আবর্তে পড়ে বাঙালী আজ সাঁড়াশী আক্রমণের সম্মুখীন৷ এযেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সপ্তরথীর চক্রবূহের মধ্যে অভিমুন্যের অবস্থা৷ এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে ‘আমরা বাঙালী’দের ঐক্যবদ্ধভাবে৷ চাই পুনর্জাগরনের জন্য সংঘটিত প্রস্তুতি৷ স্বাধীনতার ৭৩ বছরের পরেও কেন বাঙালীকে বারবার পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তাও আবার বিশ্বাসঘাতক দেশদ্রোহীদের কাছে? বিশ্ব কবির ভাষায় ‘‘বাঙালী অদৃষ্ট কর্তৃক অপমানিত হয়ে মরবে না, সাংঘাতিক মার খেয়েও বাঙালী মারের উপর মাথা তুলে দাঁড়াবে’’৷ সেই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের সম্মুখীন আমরা বাঙালীরা৷ আসুন শপথ গ্রহণ করি, মাষ্টার দা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের,ক্ষুদিরামের, বিনয় বাদল দীনেশের, নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের বংশধরেরা আর কত আবেদন নিবেদন করবে৷ আর কত পড়ে পড়ে মার খাবে বহিরাগত সংখ্যালঘু জনজাতীদের হাতে৷ ত্রিপুরার ভূমিপুত্র সংখ্যা গরিষ্ট বাঙালী কে মার খেতে হবে আমাদেরই বোটে নির্বাচিত সরকারের পক্ষপাতিত্ব দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে৷ এই সরকার বোটের আগে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাজ্যবাসীর কাছে তার একটিও দাবি এই সরকার পূরণ করেননি৷ উপরন্তু ১০৩৪৩ জন শিক্ষকদের চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে৷ শূন্যপদ খালি অথচ নিয়োগের ব্যাপারে সরকারের কোন সিদ্ধান্ত নেই৷ রাজ্যে শিল্প সংস্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেই৷ আইনের কোনো শাসন নেই৷ করোনার অজুহাতে সুকলগুলো বন্ধ৷ অথচ হাট, বাজার যান চলাচল, অফিস আদালত সর্র্বেপরি মদের দোকান ও মাছ মাংসের বাজারে ভীড় সবই ঠিক ঠাক চলছে৷ শুধু ছাত্র-ছাত্রাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত৷ কাঞ্চনপুরের বহিরাগত সন্ত্রাসী মিজোরামের রিয়াংদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রাজ্যবাসীর বিরুদ্ধে একটা গভীর ষড়যন্ত্র৷ আজও অপহৃত লিটন দেবনাথকে উদ্ধারের জন্য কোনো কার্যকরী ভূমিকা নেয়নি রাজ্য প্রশাসন৷ এককথায় এই সরকার সর্বোতো ভাবে ব্যর্থ৷ কথায় বলে ‘ভাত কাপড়ের নাম নাই কিল মারার গোঁসাই৷’’ সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে৷ সময়ের মধ্যে যদি সমস্যাগুলির আশু সমাধান করা না হয়, তা হলে রাজ্যের পরিস্থিতি অগ্ণিগর্ভ হয়ে উঠবে৷ বাঙালীর উদারতা কে অন্যান্যরা দুর্বলতা ভাবছে৷ এই অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না৷ অধিকার ভিক্ষা লব্ধ বস্তু নয়৷ সংগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার ও প্রাপ্য কেড়ে নিতে হয়৷ দয়া করে রাজ্যের মানুষের ধৈর্য্যের পরীক্ষা আর নেবেন না৷
- Log in to post comments