‘ঢেঁকি’ মানে ভারী বস্তু৷ প্রাচীনকালে আর্যরা যখন ভারতে এসেছিল তারা তখন যব, রাই ও অন্যান্য শস্যের খোসা ছাড়ানোর জন্যে উদূখল্ (উখ্ড়ি) ব্যবহার করত৷ ভারতের সাবেকী ৰাসিন্দারা ব্যবহার করত ঢেঁকি৷ উখ্ড়ি চালাতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন ঢেঁকিতে পাট দিতে গেলে তার চেয়ে অনেক কম শক্তির প্রয়োজন৷ তাই কালক্রমে, ঢেঁকি উদূখল্কে স্থানচূ্যত করলে৷ ঢেঁকির কোন সংস্কৃত প্রতিশব্দ নেই৷
ধানের তুষ ছাড়াবার অথবা ধান থেকে চিড়ে তৈরী করবার এক একটি দেশীয় যন্ত্রবিশেষ৷ ঢেঁকি একটি অনার্য উপকরণ৷
অষ্টিক ও দ্রাবিড় গোষ্ঠীভুক্ত মানুষেরা প্রাচীনকাল থেকেই ঢেঁকি ব্যবহার করে এসেছেন৷ আর্যরা ব্যবহার করে এসেছেন উদুখল (উখ্ড়ি)৷ উদুখলে ব্যবহার হাতের---ঢেঁকিতে মুখ্যতঃ পায়ের৷ বাহু শক্তিশালী না হলে উদূখলের ব্যবহার সম্ভব হয় না৷ তাই ধান তৈরীর কাজে ঢেঁকিই ছিল বেশী জনপ্রিয়৷ এখন অবশ্য উন্নত মানের যন্ত্র আবিষৃকত হওয়ায় ঢেঁকির ব্যবহার কমে যাচ্ছে৷
ঢেঁকি ৰড় জিনিস৷ সে তুলনায় তার কাজকর্ম অনেকটা সহজ সরল৷ তাই প্রকাণ্ড আকারের মানুষেরও যদি কোন কর্মতৎপরতা বা বুদ্ধির প্রাখর্য না থাকে তাকে পুরুষ বাক্য হিসেবে ‘ঢেঁকি’ ৰলা হয়৷ ঢেঁকি এমনই একটা বস্তু যা বাড়ীর ভেতরেই থাকে৷ বাড়ীর সবাই ঢেঁকির সঙ্গে বা ঢেঁকি বাড়ীর সবাইকার সঙ্গে পরিচিত৷ তাই কল্পনা করা হত ঢেঁকি যদি কোনকালে কুমীরে রূপান্তরিত হয়ে যায় তাহলে সে অতি সহজেই বাড়ীর সমস্ত মানুষকেই, গোরু-বাছুর-হাঁস-মুরগীকে অতি সহজেই খেয়ে ফেলৰে কারণ সে বাড়ীর সমস্ত অলি-গলি, গলি-ঘুঁজি, ঘাঁৎ-ঘোঁৎ সবই জানে৷ সেই থেকে ৰাংলায় প্রবাদ বাক্য এসেছে---‘ঘরের ঢেঁকি কুমীর’৷ যে মানুষের বুদ্ধি একটু কম, তাচ্ছিল্য করে তাকে ৰলা হয় ‘বুদ্ধির ঢেঁকি’৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)