সম্পাদকীয়

আত্মনির্ভরতার অসার বুলি

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

প্রধানমন্ত্রীর কন্ঠে এখন শুধু আত্মনির্ভর দেশ গড়ার আহ্বান৷ কিন্তু তিনি দেশকে আত্মনির্ভর করার উপায় নিয়ে একটি বাক্যও বলেননি৷ বরং অর্থমন্ত্রী ২০২১-২২ আর্থিক বছরের বাজেট সংসদে পেশ করে আত্মনির্ভরতার  বিপরীত পথে চলার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে ব্যাপকভাবে পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া হবে৷ এর অর্থ দেশের সমস্ত সম্পদ মুষ্টিমেয় কয়েকজন পুঁজিপতিদের হাতে কুক্ষিগত হয়ে যাবে৷

অমর দধীচি লহ প্রণাম

আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত

যাঁরা মানবতার জন্যে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁরা হলেন দধীচি৷ বাংলা ভাষায় যে শহীদ শব্দটি ব্যবহার করা হয় এর উৎস সন্ধান করলে আমরা দেখবো, মধ্যযুগে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে অন্য ধর্মাবলম্বীদের লড়াইয়ে যে সমস্ত মুসলিম মৃত্যু বরণ করতেন তাঁদের আরবী ভাষায় বলা হতো শহীদ৷ আর এই যুদ্ধের পরে যাঁরা জয়ী হয়ে ফিরে আসতেন তাঁদের বলা হতো গাজী৷ তেমনি খ্রীষ্ট ধর্মের হয়ে লড়াইতে যাঁরা প্রাণ বিসর্জন করতেন তাঁদের বলা হতো মার্ট্যার (Martyr)৷ শহীদ ওMartyr শব্দ দুটির সঙ্গে তাই বিশেষ বিশেষ রিলিজিয়ন বা মতবাদের স্বার্থে লড়াইয়ের সম্পর্ক জড়িত৷ যদিও বর্তমানে এই দুটি শব্দ ব্যাপক অর্থে প্রযুক্ত হয়৷

কেন্দ্রীয় আয়-ব্যয় মাত্রিকার উদ্দেশ্য

আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত

আগামী ২০২১-২২-এর কেন্দ্রীয় আয - ব্যয়-মাত্রিকার (বাজেট) সবচেয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি চোখে পড়ল, তারমধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখনীয় হ’ল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ঘোষণা করলেন, কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে ব্যাপকভাবে পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া হবে৷ কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত,সংস্থাগুলির মধ্যে ৪টি মাত্র ষ্ট্রাটেজিক (জাতীয় স্বার্থে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ,শিল্পের ক্ষেত্রে সরকার সামান্য অংশীদাদায়িত্ব রাখবে,বাকি সবগুলির বেসরকারীকরণ করা  হবে৷

কুসংস্কার, ধর্ম ও সমাজ

আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত

সুস্থ বিচারবুদ্ধি তথা বিবেকের প্রেরণাতে মানুষ এগিয়ে চলে’ শ্রেষ্ঠ জীবের শিরোপা লাভ করেছে ও ক্রমশঃ সভ্যতার পথে এগিয়ে চলেছে৷

কিন্তু ধর্মের নামে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, ভাবজড়তা বা ডগ্‌মা মানুষের সেই সুস্থ বিচারবুদ্ধি-তথা বিবেবকে আচ্ছন্ন করে,ঢেকে দেয়,প্রকাশ হতে দেয় না৷ তখন মানুষ ধীরে ধীরে পশুত্বের পর্যায়ে নেমে যায়৷

প্রকৃত ধর্মের সহায়তায় কিন্তু মানুষ পশুপ্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়, আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতাকে বিশ্বকেন্দ্রিক করে মানুষকে দেবত্বের মহিমায় ভাস্কর করে তোলে৷ তাই ধর্মের প্রধান শত্রু এই অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার তথা ও ভাবজড়তা৷

ভারতের সংবিধান ঃ নীতিও প্রয়োগের বিরোধ

আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত

১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট ভারত ব্রিটিশের  কবল থেকে মুক্ত হয়৷ এরপর ভারতের রাষ্ট্রনীতি কী হবে, কীভাবে আমাদের দেশের শাসন ব্যবস্থা চলবে তা নির্ধারণের জন্যে ডঃ বি.আর. আম্বেদকরের নেতৃত্বে এক কমিটি তৈরী করা হয়, তার ওপর ভারতের সংবিধান  লেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ সংবিধান হল সেই নির্দেশক পুস্তক যাতে রাষ্টের আচরণ বিধি, আইন ও আদর্শ লিপিবদ্ধ থাকবে৷ যথারীতি ওই কমিটি তাদের লিখিত সংবিধান তৈরী করে ও ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়৷

নেতাজী জয়ন্তী

আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত

আমাদের ছেলেবেলায় নেতাজীর কয়েকটি বাণী মহত্তর জীবনাদর্শের পথে এগিয়ে চলবার ক্ষেত্রে অফুরন্ত প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করত৷ নেতাজী জয়ন্তীর এটাই ছিল সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি৷ বর্তমানেও নেতাজী জয়ন্তী পালন করা হয়, এমনি বিভিন্ন মহাপুরুষের  জন্মজয়ন্তী ঘটা করে’ পালন করা হয়, নাচ-গান-বত্তৃণতা-মিছিলের  আয়োজন করা হয়, কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় তাঁদের জীবন ও বাণীকে অন্তর দিয়ে উপলদ্ধি করার চেষ্টা করা হয় না৷ কে বা কারা কত বড় করে’ কত জাঁকজমক করে অনুষ্ঠান করল, তারই প্রতিযোগিতাটাই এখন মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কাদের মিছিল কত বড় হয়েছে এখন সেটা নিয়েই সবাই মাথা ঘামায়৷ তোতাপাখির মত বত্তৃণতা দিয়ে বক্তারা শেষে একটা আত্মতৃপ্তি অনুভব

চুক্তিচাস শুরু ঃ অশনি সংকেত

আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত

কেন্দ্রের আনা কৃষিবিল বাতিলের দাবীতে প্রায় ২মাস ধরে দিল্লির রাস্তা দিবারাত্র অবরোধ করে হাজার হাজার কর্ষক এই প্রচণ্ড শীতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ৷

কেন্দ্র কর্ষকদের দাবী মানতে নারাজ৷ উত্তেজনা ক্রমে তুঙ্গে উঠছে৷ একের পর এক কর্ষক তাদের দাবীতে অনড় থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে৷ গত ৯ই জানুয়ারী সিংঘুতে কর্ষকদের প্রতিবাদ মঞ্চের সামনেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে পঞ্জাবের অমরেন্দ্র সিংহ৷

এরই মধ্যে খবর পাওয়া গেল, কর্ণাটকের রায়চূড়ে রিলায়েন্স কোম্পানীর তরফে ‘স্বাস্থ্য ফার্মাস প্রডিউসিং কোম্পানী’ নামে সংস্থা স্থানীয় কর্ষকদের সঙ্গে চুক্তি করেছে৷

আগুন নিয়ে খেলা ভাল নয়

আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত

গত নবেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে দিল্লির উপকন্ঠে প্রায় দেড়মাস ধরে কেন্দ্রের কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে৷ গত ১লা জানুয়ারী তীব্র ঠাণ্ডায় মৃত্যু হ’ল এক কর্ষকের৷ দিল্লি-উত্তর প্রদেশের গাজিপুর সীমানায় মৃত কর্ষক গলন সিং তোমর উত্তর প্রদেশের  মজিদাবাদের বাসিন্দা৷ ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে,তীব্র ঠাণ্ডার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে৷ বয়স সত্তরোধর্ব৷

আহ্বান---নোতুন দিনের রক্তিম ঊষার পানে

আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত

২০২০-এর অন্তিমলগ্ণে দেখছি রাজ্য রাজনীতিতে দলবদলের হিড়িক পড়ে গেছে৷ এ রাজ্যে কিছুদিন আগে পর্যন্ত বিভিন্ন দল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে দলবদল করে আসার একটা প্রবণতা দেখা গিয়েছিল৷ এখন বিজেপি দলে ঢোকার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে৷ গত কয়েকদিন আগে তৃণমূল  কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতা শুভেন্দু অধিকারী যিনি তিন তিনটে বিভাগের মন্ত্রী ছিলেন, যাঁকে এক সময় মনে করা হ’ত মমতার পরই এঁর স্থান তিনিও বিজেপি-তে নাম  লেখালেন৷ একই দিনে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের ৯জন বিধায়ক, ১জন সাংসদ ও একজন প্রাক্তন মন্ত্রীকেও বিজেপিতে নিয়ে এলেন৷ অন্যদিকে আদর্শগত দিক থেকে  যে সব দলের  স্থান একেবারে বিপরীত  মেরুতে সেই সিপিএম ও সিপিআই দলের যথাক্রমে তা

কেন্দ্রিত  অর্থব্যবস্থার পরিবর্তন চাই

আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত

সম্প্রতি সংবাদে প্রকাশ ২০২০ সালে সারা দেশের অর্থনীতি যেখানে বিধবস্ত, বহু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে, কোটি কোটি সাধারণ মানুষ দারিদ্র্য ও বেকারত্বের জ্বালায় জ্বলে পুড়ে মরছে অনাহারে৷ মৃত্যু অভাবে, ঋণশোধ করতে অসমর্থ হয়ে আত্মহত্যার বহু সংবাদও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে,সেখানে এই বছরেই এই দেশেরই সাতজন ধনকুবেরের সম্পত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে ৪,৭১,২৯৬ কোটি টাকা৷ কী অদ্ভূত বৈপরিত্ব!