(এর আগে ‘অর্থনৈতিক ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার অ৷ হিসেবে স্থানীয় জনসাধারণের সার্বিক কর্মসংস্থান, সার্বিক শিল্প বিকাশ, বহির্পণ্যের আমদানী এড়িয়ে চলা ও যোগাযোগের প্রাথমিক মাধ্যম হিসেবে স্থানীয় ভাষার ব্যবহার নিয়ে প্রবক্তার বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছেঙ্গ এখন স্থানীয় ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ ও স্থানীয় সামাজিক–র্থনৈতিক দাবী সম্পর্কে প্রবক্তার কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হ’লঙ্গ – সম্পাদক)
স্থানীয় ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম রূপে গ্রহণ ঃ
স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে আত্মমর্যাদা–বোধ ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলার জন্যে স্থানীয় ভাষাকেই শিক্ষার মাধ্যম করতে হবে৷ স্থানীয় ভাষা ছাড়া অন্য ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করার অর্থ হ’ল স্থানীয় ভাষার প্রতি অবদমন৷ এর ফলে স্থানীয় সংস্কৃতিও অবদমিত হয়–পরিণতিতে ওই জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা দেয় নৈতিক অবক্ষয়, হীনম্মন্যতাবোধ ও পরাজিত সুলভ মনোভাব৷ যদি কোন জনগোষ্ঠীর ‘সেণ্টিমেণ্টাল লিগ্যাসি’ (সাংবেদনিক উত্তরাধিকার)–এর* ওপর আঘাত হানা হয়, তাতে ওই জনগোষ্ঠী সহজেই কায়েমী স্বার্থবাদীদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও মানস–র্থনৈতিক শোষণের শিকার হয়ে পড়ে৷ এই সাংস্কৃতিক অবদমনেরই কৌশল অবলম্বন করেছিল ব্রিটিশ, ফরাসী, ডাচ্, স্পেনীয়, মার্কিন ও অন্যান্য ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি৷ তবে স্থানীয় জনসাধারণ যদি নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি পরিপূর্ণভাবে সচেতন হয়ে ওঠে, তাহলে স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক সমস্ত হীনম্মন্যতাবোধ থেকেও তারা মুক্ত হতে পারবে৷ প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত স্থানীয় ভাষায় শিক্ষাদান করা হ’লে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ওপর স্থানীয় জনসাধারণ তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে, ও এইভাবে শোষকশ্রেণী কর্ত্তৃক শিক্ষার মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়া অসংস্কৃতি,** কুসংস্কার প্রভৃতি থেকে তারা মুক্ত হতে পারবে৷২৩
মাতৃভাষা হ’ল মানুষের অভিব্যক্তির স্বাভাবিক মাধ্যম৷ কাজেই বাঙলার স্কুলগুলিতে বাংলাকেই শিক্ষার মাধ্যম করা উচিত৷ আজকের দিনে স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে ইংরেজীকেও দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে পড়ানো উচিত৷ উচ্চশিক্ষা ইংরেজীর মাধ্যমেই পরিচালিত হওয়া উচিত৷১৮
শিক্ষা–সংক্রান্ত ব্যাপারে নিজের মাতৃভাষা ছাড়া অন্যান্য ভাষাতে জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোন বিধি–নিষেধ থাকা উচিত নয়৷ মোটের উপর বৈবহারিক ক্ষেত্রে যেখানে বিশেষ ধরণের বা প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে–সে সরকারী হোক, বা বেসরকারী হোক, সে সব ক্ষেত্রে শুধু মাতৃভাষায় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করলে তা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে৷ সে রকম পরিস্থিতিতে এক সর্বজন–গ্রাহ্য ভাষা ব্যবহার করা যেতে পারে৷২৪
স্থানীয় সামাজিক–র্থনৈতিক দাবী
সর্বত্র স্থানীয় পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, ও স্থানীয় প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে৷ উদাহরণস্বরূপ–জার্মানী, আয়ার্ল্যাণ্ড ও কোরিয়ার সামাজিক–র্থনৈতিক গোষ্ঠী–সমূহের ক্ষেত্রে বিভক্ত–নেশানগুলিক ঐক্যবদ্ধ করার দাবীই সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে৷ (এই মন্তব্য করার সময় জার্মানী পূর্ব–পশ্চিমে বিভক্ত ছিল৷ –সম্পাদক) স্থানীয় মানুষেরা নোতুন নোতুন শিল্প–বিকাশের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কাঁচামাল পরিবহনের সুবিধার্থে সেতু ও রাস্তাঘাট নির্মাণের দাবী করতে পারে৷ আবার কৃষিনির্ভর–ঞ্চলগু বছরে আরও বেশীবার ফসল ফলানোর জন্যে প্রয়োজনীয় সেচের জল পেতে ক্ষুদ্রসেচ–প্রকল্পের্ আশু প্রয়োজন হতে পারে৷ এইভাবে স্থানীয় এলাকার সামাজিক–র্থনৈতিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করার জন্যে প্রয়োজনীয় সমস্ত দাবীগুলিই এসে যাচ্ছে৷২৩
এছাড়াও, সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষার্থীর শিক্ষাকে অবৈতনিক করতে হবে সমস্ত যুবক–যুবতীর কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করতে হবে কর্ষকদের সেচের জল দিতে হবে চাল–ডাল–আটা–চিনি–ভ্ ইত্যাদি অত্যাবশ্যক পণ্যগুলি বর্তমানে রেশনে যে দরে সরবরাহ হচ্ছে, তার থেকে সস্তাদরে সমস্ত শ্রমিকদের সরবরাহ করতে হবে ও বুদ্ধিজীবীদের ওপর থেকে আয়কর বিলোপ করতে হবে
* * *
জাতি–বর্ণ–ধর্মমত নির্বিশেষে শোষিত জনগণের অনুকূলে প্রাউট সব সময় সমস্ত প্রকারেরই শোষণের বিরোধিতা করে ও করবে৷ কিন্তু আজ যেহেতু পৃথিবীতে দারিদ্র্যই প্রধান সমস্যা, তাই প্রাউট অর্থনৈতিক–শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামকেই অগ্রাধিকার দেয়৷
দারিদ্র্য ও সেই সঙ্গে অন্যান্য সমস্ত প্রকার গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক–র্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের জন্যে আজ বিশ্বজুড়ে শোষণ–বিরোধী গণআন্দোলন শুরু করা উচিত৷ এইরূপ আন্দোলন সমস্ত প্রকার অর্থনৈতিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক ও মানস–র্থনৈতিক শোষণেরই বিরোধিতা করবে৷ এর সঙ্গে সঙ্গে জনগণের সর্বাত্মক কল্যাণকে ত্বরান্বিত করতে উপযুক্ত বাস্তব কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে৷
আনন্দমার্গ ইয়ূনিবার্র্সল রিলিফ টীমের শিলিগুড়ি শাখার কর্মীরা দ্রুত ঘটনা স্থলে চলে যান৷ তারা দুর্ঘটনা স্থান পরিদর্শন করে হাসপাতালে গিয়ে আহতদের পাশে দাঁড়ান৷ তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে প্রায় ৪০০ মানুষের হাতে দুধ, বিস্কুট, ফল, মিষ্টি এছাড়া বিভিন্ন শুকনো খাবার ও জল তুলে দেওয়া হয়৷
এছাড়া আহতদের আত্মীয় পরিজন যারা দুর্ঘটনা স্থলে ও হাসপাতালে এসে উঠেছেন, তাদের রাত্রিকালীন আহারেরও ব্যবস্থা করা হয় আনন্দমার্গ ইয়ূনিবার্র্সল রিলিফ টীমের পক্ষ থেকে৷ সমগ্র ত্রাণকার্যের পরিচালনায় ছিলেন শিলিগুড়ি আনন্দমার্গ প্রাইমারী স্কুলের অধ্যক্ষ আচার্য কর্মেশ্বরানন্দ অবধূত, এ্যামার্ট প্রতিনিধি অভিজিৎ দাস, আচার্য প্রমোথেশানন্দ অবধূত প্রমুখ৷