প্রশাসনিক ব্যর্থতা বিশেষ কোন মন্ত্রীর হয় না৷ যেহেতু যৌথ দায়িত্ব থাকে ক্যাবিনেটের তাই নিয়ম হিসাবে ব্যর্থতা বা সার্থকতার দাবিদার হয় সরকার সামগ্রিকভাবে৷ বর্তমানে যে চরম দ্রব্যমূূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে সারা দেশে, যে চরম বেকার সমস্যায় সারা দেশ ধুঁকছে, আইন–শৃঙ্খলার যে অবনতি, উগ্রপন্থী কার্য চরমে উঠেছে, এর জন্যে মূল দায়িত্ব বর্তায় সরকারের ওপর৷ এর জন্যে বিশেষ কোন মন্ত্রী দায়ী থাকেন না৷ কেন্দ্রে ও রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে মন্ত্রী কাজ করে থাকেন৷ তাই সব ব্যাপারে সরকারই দায়ী হন৷ গণতন্ত্রে সেবার সুযোগ পাবে দেশের সকল মানুষ৷ এ ব্যাপারে জাতপাত, নারী–পুরুষ, বিভিন্ন ধর্মমতের বিশ্বাসের ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করে কখনো কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নিয়ম করতে পারে না৷ ভেদাভেদ করাটাও যেখানে আইনের চোখে সকল মানুষ সমান সেখানে এই ধরনের কাজ করাটাই হ’ল নিছক মানুষের মনে নিম্নমানের সুড়সুড়ি দেওয়া৷
যেখানে বলা হয় যে সকল মানুষই সমান তাহলে সেই মানুষগুলি যাতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যাপারে নাগরিক হিসাবে স্বাধীন মতামত দান করতে পারে সেদিকে সরকার অবশ্যই নজর দেবেন৷ তা না করে দলীয় স্বার্থে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে যাতে নির্বাচনে জিতে গদীর মোহান্ধ হওয়া যায় সেদিকেই শুধু নজর রেখে চলাটা যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়, এটা এদেশের রাজনৈতিক নেতারা বুঝেও বুঝতে চান না৷ আর্থিক, সামাজিক দিক থেকে যারা বঞ্চিত তাদের কথা দেশের সংবিধানে বর্ণিত আইনের মাধ্যমে করতে হবে৷ দেখা গেল নানা কমিশনে ও আরো অনেক আইন করে শাসক দল মানুষের সমাজকে টুকরো টুকরো করে এক জটিল সমস্যা সৃষ্টি করে বসল৷ ফলে দেখা গেল যুগ যুগ ধরে একদল মানুষ সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে নিছক জাতের ভিত্তিতে কিন্তু এমনও দেখা গেছে উচ্চবর্ণের বলে যাদের চিহ্ণিত করা হচ্ছে তাদের অনেকের থাকা–খাওয়া এমনকি বাঁচার সুযোগ পর্যন্ত নেই৷ আজকের শাসকবর্গ যারা একদিন বলত যে মানুষের জাত একটাই, এমনকি সরকারী সুযোগ সুবিধা তাৎক্ষণিকভাবে তারাই পাবে যারা আর্থিক দিক থেকে ও সামাজিক দিক থেকে অনগ্রসর৷ বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় যার টাকা আছে সেই সব ক্ষেত্রে কল্কে পায় কিন্তু উচ্চবর্ণে জন্ম হলেও যদি অর্থ না থাকে তামাশা করাটা যে সঠিক পথ নয় তা অনেকেই অনুভব করে থাকেন৷ সংবিধানে খুবই বিজ্ঞানসম্মতভাবেই বলা আছে যারা সমাজে সামাজিক–র্থনৈতিক দিক থেকে অনগ্রসর তাদের সুযোগ–সুবিধা দেওয়া হবে৷ সেটা অবশ্যই সমীক্ষা করে দেখা হবে বেশ কয়েক বছর অন্তর৷ যারা সুযোগ–সুবিধা পেয়ে আর্থিক স্বচ্ছলতা পেয়ে সমাজে দাঁড়িয়ে যাবে তখন জীবন ভোর তারা সেই সুযোগ পাবে না৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় বছরের পর বছর অনেক পরিবার সেই সুযোগ পেয়ে চলেছে যারা আজ আর অনগ্রসর নয়৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এক সময়ে যাঁরা বিরাট জমিদার, রাজা, মহারাজা ছিলেন তাঁরা আজ এমন পর্যায়ে এসে পড়েছেন যার দরুণ তাঁরা খেতে পরতে পর্যন্ত পান না৷ ভিখারী অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছেন৷ বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে তাঁদের কথা তো ভাবতে হবে৷ ভারতবর্ষের শেষ বাদশাহের বংশধরের বেগম নাকি আজ চায়ের দোকান করে বেঁচে আছেন৷ এঁদের কথা ভাবা উচিত৷ আবার দেখা গেছে সংরক্ষণ করা হয়েছে যাদের জন্যে তাদের মধ্যে থেকে সেই সব আসন পূরণ হচ্ছে না৷ তখন সেগুলির জন্যে প্রশাসনকে সমস্যায় পড়তে হয়৷ অনেক ক্ষেত্রে মেধার প্রশ্ণ থাকে যদি নিম্নমানের ব্যষ্টিদের নিয়োগ করা হয় তাহলে সেই সব আসনের প্রার্থীরা সঠিক সেবা দিতে পারে না৷ মান নিম্নমুখী হয়, তাতে দেশের ক্ষতি হয়৷
তাছাড়া এমনও দেখা গেছে ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডাক্তারী পড়াশুনার ক্ষেত্রে অনেক ছাত্রছাত্রা সংরক্ষণের সুবিধা নিয়ে পড়তে যাচ্ছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত বুদ্ধির অক্ষমতার জন্যে পড়াশুনা ছেড়ে চলে যাচ্ছে৷ এতে ক্ষতি হচ্ছে দেশের৷
মোদ্দা কথা হ’ল পাইয়ে দেওয়ার মানসিকতা থেকে সরে এসে সেবা দেবার কথা ভেবে যোগ্য ব্যষ্টি যাতে উপযুক্ত স্থানে যায় ও দেশের কল্যাণ হয় সেটা দেখতে হবে৷ ঠিক তেমনই দেখতে হবে সকল মানুষ জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যাতে কাজ পায় নিজ নিজ সামর্থ হিসাবে সেটারও বিচার বিবেচনা করতে হবে৷ ৭৭ বছর দেশ স্বাধীন হয়েছে৷ আজও অনগ্রসরদের সংখ্যাই বেশী৷ প্রগতি কি ঠিক মতো হচ্ছে না এর জন্যে দায় প্রশাসনের কোন বিশেষ মন্ত্রীর বা ব্যষ্টির নয়৷ যোগ্যস্থানে যোগ্য ব্যষ্টির যাতে স্থান হয় সেটা দেখতে হবে৷ আর গণতন্ত্রে সকল মানুষই মর্যাদার৷ জাতপাত, ধর্মমতের বেড়া দিয়ে নোতুন ভাবে ভাগাভাগি করাটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়৷
সকলের জন্যে পাঁচটি বিষয় (অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান) আবশ্যিক যাতে করে সবাই সেটা পায়, কেউ যাতে বঞ্চিত না হয় সেটা দেখাই হ’ল সরকারের কর্ত্তব্য৷
সংরক্ষণ শব্দটার মধ্যে রয়ে গেছে অনুকম্পা একদিকে, আর একদিকে বঞ্চনা৷ যোগ্যতার মাপকাঠিতে পড়ছে টান৷ দেশ শাসনে সংবিধান যেটা দিশারী, সেখানে নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সকলকেই একই মর্যাদায় দেখা হয়৷ ভেদাভেদ কিছু নেই৷ গণতন্ত্রে নির্বাচনের মাধ্যমে যাঁরা আসবেন তাঁরাই শাসনের সুযোগ পাবেন৷ তিনি পুরুষও হতে পারেন আবার মহিলাও হতে পারেন৷ বর্তমানে ৩৩ শতাংশ মহিলাদের জন্যে আসন সংরক্ষণ করা হচ্ছে৷ এতে ওই ৩৩ শতাংশ আসনে পুরুষ বঞ্চিত হচ্ছে৷ কিন্তু বাকি ৬৭ শতাংশ আসন সকলের জন্যে সেখানে মহিলারাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন৷ তাহলে একদিন তো এমন হতে পারে যে মহিলারা ওই সব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পুরুষ প্রার্থীদের পেছনে ফেলে এলেন তাহলে পুরুষ প্রার্থীরা হঠে গেলেন৷ এই ধরনের সংরক্ষণ গণতন্ত্রের পক্ষে স্বাস্থ্যকর হবে বলে ভবিষ্যতে মনে হয় না৷ মোদ্দা কথা হ’ল গণতন্ত্রে সংরক্ষণের অর্থই হ’ল কেউ না কেউ বঞ্চিত হবে৷ সকলের জন্যে সকল দরজা খোলা থাকবে৷ সকলকে উপযুক্ত হিসাবে যার যা ক্ষমতা তা গড়ে তোলার সুযোগ দেওয়াটাই হ’ল সার্থক প্রশাসনের কাজ৷ জোড়াতালি মারাটাই ক্ষতিকারক৷ কোন অবস্থায় সংকীর্ণতা যেন স্থান না পায়৷
- Log in to post comments