(১) ‘ঘন্’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করে আমরা ‘ঘ’ শব্দ পাই৷ নানান্ অর্থে ‘ঘন্’ ধাতু ব্যবহৃত হয়-‘আঘাত হানা’, ‘থুড়ে থুড়ে কাটা’ n), ‘হত্যা করা’, ‘টুংটুং মধুর শব্দ করা’, ‘ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেওয়া’, ‘আবরণ দেওয়া’, ‘পুরু করে বিছিয়ে দেওয়া’ প্রভৃতি৷ তাই ‘ঘ’ মানে ‘যে হত্যা করে’ ‘যে আঘাত হানে’, ‘যে থুড়ে থুড়ে কাটে’, ‘ছোট ঘণ্টা’ (ঘণ্টি), ‘হাতে এক সঙ্গে ব্যবহৃত হয়’ ‘এই রকম সরু আকারের চুড়ি’, ‘প্রাচীনকালের মেয়েদের কোমরে ব্যবহৃত চন্দ্রহার’,‘যে কোন কিছুকে ছাড়িয়ে-ছিটিয়ে দেয়’, ‘যে কোন কিছুকে ঢেকে দেয়’ (যেমন-‘মেঘ’), যা পুরু হয়ে বিছিয়ে থাকে (যেমন ‘দুধের সর’)৷
(২) আবার ‘ঘট্’ ধাতুর+ ‘ড্’ প্রত্যয় করেও আমরা ‘ঘ’ শব্দ পাচ্ছি৷ ‘ঘট্’ ধাতুর অর্থ ‘চেষ্টা করা’,‘গড়ে তোলা’, ‘কুড়িয়ে ৰাড়িয়ে একত্রিত করা’, ‘হত্যা করা’ প্রভৃতি৷ তাই এই অর্থে ‘ঘ’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘যে চেষ্টা করে যায়’, ‘যে হত্যা করে’৷ যেমন ‘ঘন্’ ধাতু থেকে জাত ‘ঘন্’ শব্দের মানে ‘মেঘ’ তেমনই ‘ঘট্’ ধাতু থেকে তৈরী ‘ঘটা’ শব্দের অর্থও ‘মেঘ’৷
(৩) ‘ঘঘর্্’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করেও আমরা ‘ঘ’ শব্দ পাই৷ ‘ঘর্ঘ্’ ধাতুর অর্থ হ’ল আবাজ করে ‘হাসা’৷ তাই ‘ঘ’ মানে ‘যে জোরে হাসে’৷
(৪) ‘ঘঘ্ঘ্’ ধাতুর সঙ্গে ‘ড’ প্রত্যয় করেও ‘ঘ’ শব্দ পাই৷ ‘ঘঘ্’ ধাতুর অর্থ হ’ল জোরে দমক দিয়ে হাসা (হা-হা-হা-হা-হা)৷ তা ‘যে দমক দিয়ে হেসে চলেছে’ তাকেও ৰলৰ ‘ঘ’৷
(৫) ‘ঘঘ্’ ধাতুর উত্তর সঙ্গে ‘ড’ প্রত্যয় করেও ‘ঘ’ শব্দ পাচ্ছি৷ ‘ঘঘ্’ ধাতুর অর্থ হ’ল ‘একটানা হেসে যাওয়া’ (হুঁ-হুঁ-হুঁ-হুঁ-হুঁ/হি-হি-হি-হি-হি)৷ তাই ‘যে একটানা হেসে চলেছে’ এই অর্থেও আমরা ‘ঘ’ পাচ্ছি৷ তাই সবদিক থেকে - বিচার করে আমরা এই নিষ্কর্ষে পৌছুচ্ছি যে ‘ঘ’ মানে ‘যিনি গড়ে তুলেছেন, ‘যিনি হাস্যমুখর ব্যবহার করে চলেছেন’ আবার ‘যিনি যথাকালে বিনাশ করে চলেছেন অর্থাৎ সৃষ্টি-স্থিতি-লয় যাঁর হাতে......অর্থাৎ কিনা ‘পরমপুরুষ’৷ তাই ‘ঘ’ শব্দের অনেকগুলি অর্থের মধ্যে অন্যতম হ’ল---‘ঘ’ পরমপুরুষের একটি বিশেষণ৷ -(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)