ইতিহাসের  পুনরাবৃত্তি  নয়, নব ইতিহাস  তৈরীর  চৌকাঠে  দাঁড়িয়ে বাঙালী

লেখক
মনোজ দেব

৪৬-এর দাঙ্গা, আজও দগদগে  ঘা বাঙালীর বুকে৷ মাতৃভূমির  বুকচিরে স্বাধীনতা---তাতেও কি পেল বাঙালী? তবু ওপারের ২১শে ফেব্রুয়ারি, এপারের ১৯শে মে ইতিহাসে একটা নিদর্শন  তৈরী করেছে------ অন্ধ ধর্মীয় গোঁড়ামি অপেক্ষা  বাঙালীর  কাছে তার ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি অনেক বেশী মর্যাদার৷ সেই মর্যাদা রক্ষার জন্যে বাঙালী জীবন দিতে পারে৷ ওপার  তো উর্দু সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে  লড়াই করে ৫০ লক্ষ জীবন দিয়ে স্বাধীন বাঙলাদেশ রাষ্ট্র তৈরী করেছে৷ বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে৷ আজ যদি  হিন্দী-সাম্রাজ্যবাদ  ভারতের ১৩ কোটি বাঙালীকে মেরে কেটে, বিদেশী  বানিয়ে দলদাসে পরিণত করে শেষ করে দেয়, তবু বাংলা ভাষা  কৃষ্টি সংস্কৃতি বেঁচে থাকবে, তখন পুঁজিবাদী শোষক ও সাম্রাজ্যবাদী  শাসকের আতঙ্ক থাকবে৷ গান্ধী-নেহেরু নয়, স্বাধীনতা সংগ্রামে অনেক  বেশী অবদান বঙ্কিমচন্দ্র-শরৎচন্দ্রের আনন্দমঠ- পথের দাবির৷ তাই বাঙালী চেতনা আবার জেগে উঠবে৷ ভাষা কৃষ্টি সংস্কৃতির সঙ্গে বাঙালী তার অখণ্ড বাঙলার  সীমানাটাও (পূর্বে আরাকান থেকে পশ্চিমে পরেশনাথ পাহাড়, উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর) বুঝে নেবে৷ বার বার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে না৷ বর্গী আক্রমণের সময় কিছু বাঙালী বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল৷ ওই বিশ্বাস ঘাতকদের  সাহায্যে কয়েক লক্ষ বাঙালীকে হত্যা করেছিল, অবাধে  লুটপাট করেছিল৷ অর্থনৈতিক স্বাধীনতার দাবী তোলায় সুভাষচন্দ্র ঘৃণ্য চক্রান্তের  শিকার হয়েছিল ওই সাম্রাজ্যবাদী দালালদের হাতে৷ সেদিনও তারা কিছু বিশ্বাসঘাতক  বাঙালীকে পাশে পেয়েছিল৷ ৪৬-এর  দাঙ্গা বাঙালীকে দিয়ে করিয়েছে এই দেশেরই  দুই নেতা  জিন্না ও গান্ধী৷ আজ আবার দাঙ্গার পটভূমি তৈরী হচ্ছে  উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে৷ ডায়মণ্ডহারবার নিয়ে এক রকম মিথ্যা প্রচার করছে কিছু ফেসবুক দুষৃকতী৷ এখানেও দাদার ভূমিকায় সেই দস্যুরা৷ অবশ্যই সাথে বিশ্বাসঘাতকরা আছেই৷  তবে এবার অন্য ইতিহাস হবে৷ সব শুরুরই শেষ আছে, ১৭৪১ সালে বর্গী-বিশ্বাসঘাতকদের  অশুভ জোট  বাঙলা দখলের যে পথ তৈরী করেছিল, সেই পথেই সুভাষচন্দ্র বিতাড়িত হয়েছে, ৪৬ এর দাঙ্গা হয়েছে, দেশ ভাগ হয়েছে৷ তারপরেও তৈরী  হয়েছে অন্য ইতিহাস, ৫২,৬১-এর ইতিহাস৷ বিশ্বাসঘাতকদের বাহিরে আরও অনেক বাঙালী আছে৷ মৃত্যুর গর্জন যাদের কাছে সঙ্গীতের মত৷ আদর্শের  জন্যে বলিপ্রদত্ত বাঙলা মায়ের দামাল ছেলে তারা৷ ৫২,৬১ মিলিয়ে  মিশিয়ে নোতুন ইতিহাস তারা তৈরী করবেই৷ সেইদিন আর বেশী দূর নয়৷ বাঙালী অদৃষ্ট কর্তৃক  অপমানিত হয়ে মরবে না৷ মারের ওপর মাথা তুলে সে দাঁড়াবেই৷ আর সেই দিন মনে পড়বে....কোন কপটাচারী অহিংসার  পূজারীর জন্যে নয়, ব্রিটিশ ভারত ছেড়েছে নেতাজী সুভাষচন্দ্র ও বাঙলার দামাল ছেলেদের পাল্টা মারে৷ সুভাষচন্দ্রকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করলেও  প্রাউট-প্রবক্তাকে বিষপ্রয়োগে  হত্যা করা যায়নি৷  সব চক্রান্ত ব্যর্থ করে তাঁর কাজ তিনি করে গেছেন৷ পথ তিনি  করে দিয়ে গেছেন৷ তাই এবার  অন্য ইতিহাস৷ শুধু বাঙলা নয়, ভারত নয়,  সর্ব গ্লানিমুক্ত কলুষ মুক্ত শোষণ মুক্ত নতুন বিশ্ব রচনার রণ দামামা বেজে  উঠবে বাঙলার  মাটি থেকে৷ বন্ধ হবে ধর্মের নামে বজ্জাতি, স্তব্ধ হবে ধর্মীয় মুখোষের  আড়ালে  থাকা অসুরের গর্জন, সংস্কৃতির অঙ্গণে বেলেল্লাপনা, রাজনীতির ঝান্ডা ধরে জনকল্যাণের  ভণ্ডামি, পুঁজিপতি অসুরের অবাধ শোষণ৷ সামনে গাঢ় অন্ধকার, মহাসংগ্রামের প্রস্তুতি, শেষ রাতের ইঙ্গিত৷  স্বর্ণোজ্জ্বল সুপ্রভাত  আর বেশী দূরে নয়৷