কৈবর্ত বিদ্রোহ ঃ পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম সুসংগঠিত গণবিদ্রোহ

লেখক
সুকুমার সরকার

সৃষ্টির আদি থেকেই মানুষকে প্রতিকূল পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে সংগ্রাম করতে করতে এগিয়ে আসতে হয়েছে৷ কখনো এককভাবে বিচ্ছিন্ন কখনো সংঘবদ্ধভাবে৷ সেসব সংঘবদ্ধ সংগ্রাম কীভাবে সংঘটিত হতো তার একটি অনুমান আমরা করতে পারি৷ কিন্তু ঐতিহাসিক সূত্র উল্লেখ করে নির্দিষ্টভাবে বলতে পারি না, অমুক সংগ্রাম বা অমুক বিদ্রোহ অমুক সময়ে, অমুক, অমুকের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিল৷ বিশেষ করে মানুষের সমাজে রাষ্ট্র ও রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর রাজার বিরুদ্ধে সাধারণ গণমানুষের গণ-বিদ্রোহের কথা৷ এ ব্যাপারে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম যে গণ-বিদ্রোহের কথা  জানতে পারা যায় সেটা হলো ‘‘কৈবর্ত বিদ্রোহ’’৷ একক কারও নেতৃত্বে প্রজাদেরকে সুসংগঠিত করে কোনো একটি রাজা বা রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে এই কৈবর্ত বিদ্রোহকেই এখনও পর্যন্ত ঐতিহাসিকরা পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম গণ বিদ্রোহ বলে উল্লেখ করেছেন৷ আর এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল বাঙলার মাটিতে৷ বাঙলার সুপ্রাচীন বরেন্দ্রভূমিতে পাল রাজাদের আমলে৷ এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল৷ কিন্তু গোল বেঁধেছে কোন্‌ পাল রাজার সঙ্গে এই কৈবর্ত বিদ্রোহ হয়েছিল এবং এই বিদ্রোহের প্রকৃত নায়ক কে ছিলেন, তা নিয়ে৷ বেশিরভাগ ঐতিহাসিকের মতে, দ্বিতীয় মহিপালের সময় এই কৈবর্ত বিদ্রোহ হয়েছিল৷ কেউ কেউ আবার তৃতীয় বিগ্রহ পালের কথা বলেছেন৷ রামপালের  কথাও অনেকে উল্লেখ করেছেন৷ অবশ্য রামপালের নাম এসেছে কৈবর্ত রাজাকে দমন করে পাল সাম্রাজ্যের পুণঃ প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে৷ আর পালরাজাদের এই বীরত্বগাথা রচনা করার জন্য পরবর্তী পালরাজা মদনলাল কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে সন্ধ্যাকর নন্দী রামচরিতমানস কাব্য রচনা করেছিলেন বলে জানা যায়৷ সেখানেই উল্লেখিত হয়েছে এই কৈবর্ত বিদ্রোহের কথা৷ দিব্যোক-ভীমেদের কথা৷ একইভাবে বিতর্কও এসেছে দিব্যোক-ভীম প্রসঙ্গে৷ এই বিদ্রোহের নায়ক হিসেবে কেউ কেউ বলেছেন, কৈবর্ত নেতা  দিব্যোকের কথা৷ কেউ কেউ বলেছেন, কৈবর্ত নেতা ভীমের কথা৷ কেউ কেউ আবার দিব্যোক-ভীমকে একই ব্যষ্টি বলে উল্লেখ করেছেন৷ সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিতমানস কাব্যের উল্লেখ করে ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাঙলার ইতিহাস গ্রন্থে ‘‘রামপালের সহিত কৈবর্ত-রাজ ভীমের যুদ্ধ কালে লক্ষ্মীশূর রামপালের পক্ষ অবলম্বন করিয়াছিলেন ---(১) বলিয়া উল্লেখ পাওয়া যায়৷ অন্যত্র  আবার তিনি লিখেছেন, ‘‘দিব্য, বরেন্দ্রের কৈবর্ত-বিদ্রোহের অধিনায়ক, ইনি রামচরিতে দিব্যোক নামে অভিহিত হইয়াছেন৷’’

(২) কৈবর্ত বিদ্রোহ ও দিব্যোক সম্পর্কে সন্ধ্যাকর নন্দীর ‘রামচরিতমানস’ কাব্যগ্রন্থ ছাড়া আর কোথাও কিছু উল্লেখ নেই৷ সন্ধ্যাকর নন্দীর ‘রামচরিতমানস’ একটি কাব্যগ্রন্থ৷ এটি তিনি রামায়ণ বর্ণিত রামের চরিত মানস নিয়ে যাঁরা কাব্য রচনা করেছেন, তাঁদের অনুকরণে পাল রাজবংশের প্রশস্তিগাথা রচনা করেছেন৷ এই রচনা কার্য তিনি করেছেন দ্বিতীয় মহীপাল-এর মৃত্যু দুই পুরুষ পরে৷ অর্থাৎ মদন পালের নির্দেশে৷ ঐতিহাসিকদের মতে দ্বিতীয় মহীপালের ভাতুস্পুত্র ছিলেন মদন পাল৷ এই কাব্যের মূল উপজীব্য প্রজানুরঞ্জন রামপালের প্রশস্তি৷ সেখানে কাব্যভাষে সন্ধ্যাকর নন্দী এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছেন৷ মূলত তিনি পাল রাজাদের (রামপালের জ্যৈষ্ঠভ্রাতা দ্বিতীয় মহীপাল বাদে) গুণকীর্ত্তন করলেও, তাঁর আলেখ্যর আন্তর প্রেরণা ছিল পুরুসোত্তম রাম৷ সুতরাং কাব্যাভাষের পালরাজ প্রশস্তি কতটা ইতিহাসকে প্রতিনিধিত্ব করছে সেই প্রশ্ণ ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, নীহারঞ্জন রায়, রমেশচন্দ্র মজুমদার সহ অনেকেই তুলেছেন৷ নীহারঞ্জন রায়ের নিজের কথায়, ‘‘মহীপালের প্রকৃতি, চরিত্র ও রাষ্ট্রবুদ্ধি সম্বন্ধে  সন্ধ্যাকরের সাক্ষ্য কতখানি প্রামাণিক বলা কঠিন৷ দিব্যোক সম্বন্ধেও সন্ধ্যাকরের সাক্ষ্য কতটা গ্রাহ্য বলা কঠিন৷ পাল রাজাদের পারিবারিক শত্রুরপ্রতি সন্ধ্যাকর সুবিচার করিতে পারিয়াছেন বলিয়া মনে হয় না৷

(৩) যে পালরাজার  আদিষ্ট হয়ে রাজ প্রশস্তি রচনা করতে বসেছিলেন সন্ধ্যাকর নন্দী, সেই পাল রাজাদের শত্রুপক্ষের প্রতি সুবিচার করা সত্যিই তাঁর পক্ষে কঠিন ছিল৷  আজকের যুগেও যেখানে রাজ আনুকূল্য পাবার জন্য লেখকরা  সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বলে চালাবার জন্য লেখনী ধারণ করেন, সেখানে সেই প্রাচীন-মধ্যযুগের অবস্থা সহজেই অনুমেয়৷

আর্য-জাত্যাভিমানী আধুনিক যুগের গোড়ার দিকের ঐতিহাসিকরাও অনেকাংশে সেইসব গাথা কথাকে মূল্য দিয়েই ইতিহাসের তুল্য মূল্য বিচার করেছেন৷ সেই বিচারে  বাঙলার এই মহান ‘‘কৈবর্ত বিদ্রোহ’’কে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মনে হয়নি৷ বরং অনেকেই সন্ধ্যাকর নন্দীর সুরেই সুর মিলিয়েছেন৷ ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, ‘‘যে বিদ্রোহের ফলে দ্বিতীয় মহীপাল রাজ্য ও প্রাণ হারাইলেন, কৈবর্তনায়ক দিব্যোর সহিত তাহার  কোন সম্বন্ধ ছিল কিনা তাহা নির্ণয় করা কঠিন৷ রামচরিতের  একটি শ্লোকে (১/৯) এরূপ ইঙ্গিত আছে যে. দিব্য মহীপালের অধীনে উচ্চ রাজকার্যে নিযুক্ত ছিলেন৷ রামচরিতে (১/২৯) ইহাও উল্লিখিত হইয়াছে যে দিব্য মহীপালকে পরাজিত ও সম্ভবত হত্যা করিয়া বরেন্দ্রভূমি অধিকার করিয়াছিলেন৷ সুতরাং প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে যে দিব্যো এই বিদ্রোহের সহিত সংশ্লিষ্ট ছিলেন ইহা অনুমান করা স্বাভাবিক৷ কিন্তু দিব্যের সহিত বিদ্রোহীদের কোন প্রকার যোগাযোগ ছিল কিনা, রামচরিতে তাহার উল্লেখ নাই৷ সুতরাং অসম্ভব নহে যে, দিব্যোক প্রথমে মহীপালের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যোগদান করেন নাই, কিন্তু বিদ্রোহীদের হস্তে পরাজয়ের পর মহীপালকে হত্যা করিয়া তিনি বরেন্দ্র ভূমি অধিকার করিয়াছিলেন৷ রামচরিতে দিব্যোকে দস্যু ‘উপাধি ব্রতী’ বলা হইয়াছে৷ টীকাকার উপাধি ব্রতীর অর্থ করিয়াছেন ‘ছদ্মনিব্রতী’৷ কেহ কেহ ইহা হইতে সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে, দিব্য কর্তব্যবশে বিদ্রোহী সাজিয়া মহীপালকে হত্যা করিয়াছিলেন৷ কিন্তু এরূপ অর্থ সঙ্গত মনে হয় না৷ দস্যু ও উপাধিবত হইতে বরং ইহাই মনে হয় যে, রামচরিতকারের মতে দিব্যো প্রকৃতই দস্যু ছিলেন কিন্তু দেশহিতের ভাণ করিয়া রাজাকে হত্যা করিয়াছিলেন৷ বস্তুত রামচরিত কাব্যের অন্যত্রও দিব্যোর আচরণ কুৎসিত ও নিন্দনীয় বলিয়া ব্যাখ্যাত হইয়াছে৷ কিছুদিন পর্যন্ত বাঙলার একদল লোক বিশ্বাস করিতেন যে, দিব্যো অত্যাচারী মহীপাল বধ করিয়া দেশকে রক্ষা করিয়াছিলেন৷ তাঁহারা দিব্যোকে মহাপুরুষ সাজাইয়া উত্তরবঙ্গের নানা স্থানে প্রতি বৎসর ‘দিব্যস্মৃতি উৎসবের’ ব্যবস্থা করিতেন৷ কিন্তু রামচরিতে ইহার কোন সমর্থন পাওয়া যায় না৷ অবশ্য পালরাজাগণের কর্মচারী সন্ধ্যাকর নন্দী দিব্যো সম্বন্ধে বিরুদ্ধভাবে পোষণ করিতেন, ইহা খুবই স্বাভাবিক৷ কিন্তু রামচরিত ব্যতীত দিব্য সম্বন্ধে  জানিবার আর কোন উপায় নাই৷ সুতরাং রামচরিতকার তাঁহার চরিত্রে যে কলঙ্ক লেপন করিয়াছেন, তাহা পুরাপুরি সত্য বলিয়া গ্রহণ করিলেও দিব্যোকে দেশের ত্রাণকর্তা মহাপুরুষ মনে করিবার কোন কারণ নাই৷ বস্তুত মহীপাল যে প্রজাপীড়ক বা অত্যাচারী রাজা ছিলেন এবং এই জন্যই তাঁহার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হইয়াছিল এরূপ মনে করিবার কোন কারণ নেই৷ আর এই বিদ্রোহকে কৈবর্ত জাতির বিদ্রোহ বলিয়া চিহ্ণিত করাও সঙ্গত নহে৷ দিব্যো কৈবর্তজাতীয় ছিলেন কিন্তু তিনি যে এই জাতির উপর অত্যাচারের জন্য মহীপালের  বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিয়াছিলেন রামচরিতে ইহার সমর্থক কোন উক্তি বা প্রমাণ পাওয়া যায় না৷ এইরূপ বিদ্রোহ করিয়াছিলেন রামচরিতে ইহার সমর্থক কোন উক্তি বা প্রমাণ পাওয়া যায় না৷ এইরূপ বিদ্রোহ সে যুগে প্রায়ই ঘটিত এখান থেকেই ইতিহাসের এই কৈবর্ত বিদ্রোহ সম্পর্কে ইতিহাসবিদদের আগ্রহ কমতে থাকে৷ সর্র্বেপরি এই বিদ্রোহের ইতিহাসের সঙ্গে বদ্বীপ বঙ্গের বাঙালি জাতির আদি কৈবর্তদের ঐতিহ্যগাথা জড়িয়ে আছে বলেই হয়তো বাঙালি বিদ্বেষী শাসক শোষকেরা এই বিদ্রোহের সত্য ইতিহাস ঘাটতে আগ্রহী দেখাননি৷ আর বাঙালি বিদ্বেষী শাসক শোষকেরা এই বিদ্রোহের সত্য ইতিহাস ঘাটতে আগ্রহী দেখাননি৷ আর বাঙালি জাতি নিজেরাও তো এখনো পর্যন্ত আত্মঘাতী বাঙালি জাতির তকমা থেকে বেরিয়ে এসে বাঙলা ও বাঙালির প্রকৃত ইতিহাস চর্চায় মনোনিবেশ করতে সৎসাহস দেখাতে পারেননি৷ তাছাড়া এই বিদ্রোহ যে বঙ্গের মাটিতে ঘটেছিল, সেই বঙ্গের কৈবর্ত-উত্তর রাজবংশী বাঙালিরা তো বর্তমানে নিজেদেরকে বাঙালিই মনে করছেন না৷ সেখানে কৈবর্ত বিদ্রোহের ইতিহাস ঘাটতে গেলে তাঁদের নৃতত্ত্বের শেকড়ে আসল বাঙালির পরিচয়টিই যে উঠে আসবে৷ তাই স্বার্থান্বেষীরা উভয়েই নীরব৷ কৈবর্ত বিদ্রোহের ইতিহাস যে কৈবর্ত জাতিরই বিদ্রোহের ইতিহাস তা প্রায় সকলেই স্বীকার করেছেন৷ কিন্তু অসঙ্গতি উল্লেখিত হয় এই বিদ্রোহের নায়ককে নিয়ে ও বিদ্রোহটি ঠিক কার সঙ্গে হয়েছিল তা নিয়েও৷ প্রথমত, সন্ধ্যাকর  নন্দীর  রামচরিতমানসে প্রজাবিদ্বেষী দ্বিতীয় মহীপাল কে পরাজিত  ও নিহত করে কৈবর্ত-রাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ থাকলেও পালরাজাদের ইতিহাসে প্রথম বা দ্বিতীয় কোনো মহীপালই প্রজা বিদ্বেষী ছিলেন এমন কথা ইতিহাসের খুব একটা পাওয়া যায় না৷ তবে রাজ অন্তপুরে রাজা হবার জন্য ভাতৃঘাতী নিষ্ঠুরতা পালরাজাদের মধ্যেও ছিল৷ যাইহোক, সেটা অন্য বিতর্ক৷ প্রজাহিতৈষী মহীপালরা ‘মহী’ (পৃথিবী) বাসীর কল্যাণার্থে, কৃষি কাজের সুবিধার্থে তাঁদের রাজত্বের বহুস্থানে বড় বড় দিঘি, পুকুর, খাল, খাড়ি, খনন সহ নানান জনহিতকর কাজ কর্ম করেছিলেন৷ ফলে অসন্তোষ থেকে গণ বিদ্রোহ  অন্তত মহীপালের সময়ে ঘটার কথা নয়৷ তা তিনি প্রথম বা  দ্বিতীয় মহীপাল যেই হোন৷ অবশ্যই প্রথম বা দ্বিতীয় মহীপাল নিয়েও ঐতিহাসিক বিতর্ক আছে৷ ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন দ্বিতীয় মহীপালের  অস্তিত্বের কথা প্রায় অস্বীকার করে লিখেছেন, ‘‘দ্বিতীয় মহীপাল ও নামক রাজার ৫ম রাজ্যবর্ষে অনুলিখিত একখানি পাণ্ডুলিপির চিত্রসমূহ পরীক্ষা করে স্থির করেছেন যে, ইনি দ্বিতীয় মহীপাল, প্রথম মহীপাল নন৷ কিন্তু ১০২৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মহীপালের রাজত্ব ও ১১৪৩ খ্রিষ্টাব্দে মদনলালের সিংহাসনারোহন ধরে নিয়ে দ্বিতীয় মহীপালের পাঁচ বৎসর দীর্ঘ রাজত্বের সম্ভাবনা খুবই কম৷

(৫) ঐতিহাসিক সময়ের নিরিখে দ্বিতীয় মহীপালের  অস্তিত্ব নিয়ে যেমন প্রশ্ণ ওঠে, তেমনি আরেকটি প্রশ্ণ ওঠে পাল রাজবংশে দ্বিতীয় দেবপালকে  নিয়ে৷ প্রচলিত রাজবংশের বংশ তালিকায় দ্বিতীয় দেবপালকে নিয়ে৷ প্রচলিত পাল রাজবংশের বংশ তালিকায় দ্বিতীয় দেবপাল বলে কোনো পালবাজার নামোল্লেখ দেখা যায় না৷ অথচ  কৈবর্ত বিদ্রোহের ইতিহাস বলতে গিয়ে অনেক অজানা ইতিহাসের সত্য উদঘাটক শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি তথা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার দ্বিতীয় দেবপালের কথা উল্লেখ করেছেন৷ এখন প্রশ্ণ হচ্ছে, একদিকে দ্বিতীয় মহীপালের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ অন্যদিকে দ্বিতীয় দেবপালের আবির্ভাব৷ আবার দ্বিতীয় মহীপালের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ অন্যদিকে দ্বিতীয় দেবপালের আবির্ভাব৷ আবার ঐতিহাসিকদের ভাষ্য মতে প্রথম বা দ্বিতীয় কোনো মহীপালকেই যদি অত্যাচারী রাজা না ধরি তাহলে সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিতমানসে যে অত্যাচারী পাল রাজার কথা উল্লেখিত হয়েছে, তিনি কে? দিব্যোক সম্পর্কে রমেশচন্দ্র মজুমদার সন্ধ্যাকর নন্দীর পক্ষে মত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘বস্তুত মহীপাল যে প্রজাপীড়ক বা অত্যাচারী রাজা ছিলেন ও এই জন্যই তাঁহার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হইয়াছিল এরূপ মনে করিবার কোন কারণ নাই৷ আর এই বিদ্রোহকে কৈবর্ত জাতির বিদ্রোহ বলিয়া চিহ্ণিত করাও সঙ্গত নহে৷