গোপনে কাউকে উপদেশ-নির্দেশ দেওয়াকেও ‘কাণ্ড’ লা হয়ে থাকে৷ সবাইকে সদুপদেশ সকলের সামনে দেওয়া যায় না৷ এই যে ব্যষ্টিগত ভাবে কাউকে উপদেশ দেওয়া, একেও বলা হয় ‘কাণ্ড’৷
গোপনে পরামর্শ দেওয়া লতে একটা ছোট্ট গপ্প মনে পড়ে গেল৷ তোমরা পা ছড়িয়ে সে মুড়ি-আলুর চপ খেতে খেতে গপ্পটা শোণো৷
এক ছিল বামুণ.........এক ছিল বামণী৷ বামণী ছিল ড় দজ্জাল৷ বামুণকে সব সময় জ্বালা দিত৷ বামুণ যখন যেটি লত তাতে তাকে খেঁকিয়ে তো উঠতই আর করত তার উল্টোটা৷ একবার বামুণ বামণীকে বললে, ‘‘দেখ বামণী, এই আসছে হপ্তায় আমার পিতামাতাঠাকুরের বাৎসরিক শ্রাদ্ধ? শ্রাদ্ধটাতো করতে হর্ে৷ তাই স ব্যবস্থা-ট্যাবস্থা করে রাখ’’৷
বামণী বললে, ‘‘কী ! কার শ্রাদ্ধ! ওসব শ্রাদ্ধ-টাদ্ধ কোন ভুতের হতে দোব না৷’
বামুণ বললে , ‘‘ভুতের নয়, আমার পিতাঠাকুরের’’৷
বামণী বললে, ‘‘তোমার পিতাঠাকুর কি এখন জলজ্যান্ত রয়েছে ! ভুত নয় তো কী! ওই শ্রাদ্ধ-পিণ্ডি-টিণ্ডি আমি এ বাড়িতে হতে দেবো না....দের্বা না..... দের্বা না...... দের্বা না--- এই বলে রাখলুম , তুমি নিকে রেখে দাও’’৷
বামুণ দেখলে গেতিক ৷ বামুণ তখন জয়-মা-কালী লে সেখান থেকে পিঠ টান দিলে৷ গিয়ে পৌঁছুল সোজা তাকে শুধোলেন ‘‘হ্যাঁ গা, এই বে-টাইমে ছুটতে ছুটতে এসেছ কেন? কী হয়েছে?
বামুণ তার দুঃখের কথা সবিস্তারে গুরুকে নিবেদন করলে৷
গুরুঠাকুর ললেন, হ্যাঁ, এটা একটা ভাববার মত কথা’’৷ তারপর গুরু বামুনের কাণে কাণে একান্তে একটা গোপন মন্ত্র দিয়ে দিলেন৷ বামুণ সেই মন্ত্র জপ করতে করতে ঘরে ফিরে এল৷ বামুণ ফিরে এসে দেখে---বামণী একথালা ভাত আর সাতাশ ব্যঞ্জনের বাটি নিয়ে পা ছড়িয়ে বসে বসে খাচ্ছে আর তারিয়ে তারিয়ে শোজনের ডাঁটা চির্েবাচ্ছে৷ বাঁ-হাতে চেপে ধরে রেখেছে জল-ভর্ত্তি একটা প্রকাণ্ড খাগড়াই কাঁসার ঘটি৷
বামুণের আর তর সইল না৷ মন্ত্রের ফলাফল দেখবার জন্যে সে বামণীর কাছে এসে ললে, ‘‘দেখ বামণী, তোর কথাটাই রাখলুম৷ এ বৎসর আর পিতাঠাকুরের শ্রাদ্ধ কর্র না’’৷
বামণী ললে, ‘কী ! কার এত ড় আস্পর্র্দ যে লে শ্বশুরঠাকুরের শ্রাদ্ধ কর্র না৷ শ্বশুরঠাকুরের শ্রাদ্ধ করতেই হবে’’৷
বামুণ ললে, ‘‘যদি করতেই হয় তাহলে গঙ্গার ঘাটে একটা সস্তার পুরুৎ ডেকে এনে নমোনমঃ করে সার্র’’৷
বামণী ললে, ‘‘এ্যাঁ, সে কী কথা ! আমার বাড়ীর সম্মান নেই! ভাল ভট্চার্য-পুরুৎকে শ্রাদ্ধ করাতে হর্ে৷’’
বামুণ বললে, ‘‘তা না হয় হ’ল, কিন্তু এবার আমার পয়সার টানাটানি৷ যজমান বাড়ী থেকে তেমন কিছু পাই নি৷ আলুর চাষ এবার মার খেয়েছে৷ তাই হয় গোণাগুণতি পাঁচটি বামুনকে খাওয়র্বা, না হয় একটা ভুজ্যি দিয়ে দের্বা’’৷
বামণী বললে , ছি ! এ কী লজ্জার কথা ! অন্ততঃ পাঁচশ’ লোককে খাওয়াতে হর্ে৷ টাকাবার অভাব থাকলে আমি আমার দশভরির পাটিহারছড়াটাকে বেঁচে টাকার ব্যবস্থা করে দেবা৷’’
সব কাজ ঠিকঠাক চলছিল৷ বামুন মহা খুশী৷ গুরুঠাকুরের মন্ত্র ঠিক ঠিক ফল দিয়ে চলেছে৷ এমন সময় বামন আনন্দে অধীর হয়ে মন্ত্রটাই ভুলে গেল৷ গুরুর দেওয়া গোপন মন্ত্র বিস্মৃতি তে চলে গেল৷ সপিণ্ডকরণের পর বামুণ বামণীকে বললে, ‘‘দেখ বামণী, এই আলো-চাল, তিল আর শ্রাদ্ধের অন্যান্য উপকরণগুলো--- যা, গঙ্গার জলে বিসর্জন দিয়ে আয়৷’’
বামনী ললে, ‘‘কী , এত ড় আস্পর্ধা ! এইসব আজে বাজে জিনিস আমি গঙ্গায় গিয়ে বিসর্জন দিয়ে আসব! এই সগুলো আমি নালীতে ফের্ল..ফেলব...ফেলব৷’’
বামুন তো থ! মন্ত্রের গোপনীয়তা হয়তো ছিল কিন্তু মন্ত্রের মূল্যজ্ঞান ও মাত্রাজ্ঞান বিস্মৃতির আড়ালে চলে গেছল৷ তাই না এই ফ্যাসাদ হল৷
তাই তোমরা ঝলে, গুরুঠাকুর বামুনকে যে গোপন নির্দেশ দিয়েছিলেন তাকেও ‘কাণ্ড’ লা হয়৷