কৃষি বিপ্লব

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

পূর্ব প্রকাশিতের পর

সার্মায়িক সংস্থার হাতে জমি পরিচালনার ভার দেওয়ার জন্যে পরিকল্পনাকে দুটি পর্যায়ে বিভক্ত করতে হবে৷ প্রথম পর্যায়ে যত uneconomic holding রয়েছে তাকে ইকনমিক হোল্ডিং-এর লাভ গ্রহণের সুযোগের জন্যে সমবায়ের মধ্যে আসার নির্দেশ দেওয়া হবে৷  যে কয়েকটি লোকের জমি নিয়ে একটি ইকনমিক হোল্ডিং হ’ল তাদেরই নিয়ে গঠিত হবে পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের সমবায়৷ এখানে ব্যষ্টিগত মালিকানাকে স্বীকার করে নেওয়া হবে৷ যেমন কারোর পাঁচ বিঘা, কারোর তিন বিঘা জমি  সমবায়ে রয়েছে৷ সমগ্র উৎপাদন থেকে নিজের নিজের জমির অংশ অনুযায়ী প্রত্যেকে ভাগ পাবে৷ ব্যষ্টিগত মালিকানা কাগজপত্রে থাকলেও চাষ-কার্য সম্পন্ন হবে সামবায়িকভাবে৷ এর ফলে আল দিয়ে যে জমি নষ্ট হ’ত তা আর হবে না৷ বিহার ও াঙলাদেশে কোন কোন জায়গায় আল দিয়ে যত জমি নষ্ট হয় তার থেকে চাষেযোগ্য জমির পরিমাণ কম৷ পূর্বোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সবাই লাভবান হবে৷ পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে যাদের বর্তমানে ইকনমিক হোল্ডিং-এর মত জমি রয়েছে তাদের সমবায়ে যোগ দিতে না বললেও চলে৷ তবে যদি তার ভূমির সামূহিক পরিমাণ ইকনমিক হোল্ডিং হবার যোগ্য কিন্তু এই জমিগুলি বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট প্লট-এ বিভক্ত হয়ে আছে তবে হয় স জমিগুলি মিলিয়ে consolidation of holding করে নিতে হবে, না হলে যেখানে যেখানে ছোট ছোট আন-ইকমিক প্লট আছে তার সংশ্লিষ্ট জমিগুলির সঙ্গে মিলিয়ে সমবায়ের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে৷

পরিকল্পনার  দ্বিতীয় পর্যায়ে সাইকে সমবায়ে যোগদান করবার জন্যে জানানো হবে৷ তৃতীয় পর্যায়ে জমির পুনর্বণ্টন করে বিবেকপূর্ণভাবে জমির মালিকানা দিতে হবে৷ এই বণ্টন ব্যবস্থায় কার কতখানি জমি হবে তা নির্ভর করবে দুইটি তত্ত্বের ওপর---(১) একটি পরিবার চলানোর জন্যে যতটা দরকার ও (২) নিজে যতটা চাষ করতে পারে তার ওপর৷  চতুর্থ পর্যায়ে আর মালিকানা নিয়ে কেউ কাড়াকাড়ি করবে না৷ তখন মানসিক বিস্তারে পরিবেশের আনুকূল্যে মানুষ নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থের মোহকে পরিত্যাগ করে সামূহিক কল্যাণের কথা ভর্াতে শিখবে৷ এই ধরণের পরিবর্তন নিশ্চয়ই একদিনে আসবে না৷ সময়-তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অভ্যন্তরীণ প্রেরণা(internal urge) ও বাহ্যিক চাপের(external pressure) মাধ্যমে সে মানসিক প্রস্তুতি না আসা পর্যন্ত জোর করে চাপাতে গেলে মানুষ তা গ্রহণ করতে পারবে না৷ তাই রাশিয়ার নেতৃবৃন্দ এই সাধারণ মনস্তত্ত্বটুকু না ঝে জোর করে সামবায়িক খামার(collective farm) তৈরী করতে গিয়ে দেশে ড় ড় দুর্ভিক্ষের ও অন্তর্বিদ্রোহের জন্ম দিয়েছিল৷ তাকে প্রশমিত করতে গিয়ে মনস্তাত্ত্বিক উপায় অবলম্বন না করে বেওনেট ও  তরবারির আঘাতে বহু মানুষের প্রাণ হত্যা করতে হয়েছে৷ সদ্বিপ্ররা কখনও মনস্তত্ত্ব বিরোধী কাজ করে দেশের ও দলের সর্বনাশ ডেকে আনবে না৷

সমবায় সম্পর্কে অনেকের মনে প্রশ্ণ জানতে পারে কারণ আজ শীের ভাগ দেশেই সমবায় অসফল হয়েছে৷ এই উদাহরণের ওপর ভিত্তি করে সমবায়কে দোষারোপ করা দ্ধিরমত্তার পরিচয় হবে না৷ কারণ সমবায়ের সাফল্যের যে অপরিহার্য তত্ত্ব তা শীের ভাগ দেশ সৃষ্টি করতে পারোনি৷  সমবায়ের সাফল্য নির্ভর করে মূলতঃ তিন তত্ত্বের ওপর৷ নীতিবাদ, কড়া তত্ত্বাবধান(supervision) ও জনগণের হৃদয় দিয়ে সমবায়কে গ্রহণ৷ এ তিন তত্ত্বের মধ্যে যেখানে যতটুকু রয়েছে সেখানে সমবায় ততটুকুই সাফল্য অর্জন করেছে৷ যেমন ইসরায়েল চতুর্দিকে শত্রু বেষ্টিত হার জন্যে ওখানকার জনগণের মধ্যে এক স্বয়ং-নির্ভরশীলতার চেতনা গড়ে উঠেছে৷ কারণ জনগণ মনপ্রাণ দিয়ে তাদের অর্থনীতিকে মজবুত করতে চায়৷ তাই সেখানে তারা সমবায়ের দ্বারা শুঙ্ক মরুভূমিকে শস্যশ্যামল করে তুলেছে৷ ঠিক সেই মনোভাব ভারতে গড়ে তোলা হয়নি লে সর্বত্র সমবায় অসাফল্যের নমুনা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ভারতের সমবায় অর্থনীতির উন্নতির জন্যে তৈরী হয় নি, তৈরী হয় রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্যে৷ তাই এখানে সমবায় সফল হওয়াটাই আশ্চর্যজনক হ’ত৷

সমবায়ের জন্যে মানুষকে উৎসাহিত করতে হলে প্রথমে কয়েকটি সার্থক নমুনা তৈরী করা চাই, তার জন্যে পাইলট প্রোজেক্ট(pilot project), মেসিন ষ্টেশন জমির(machine station) জলসেচের উপযুক্ত ব্যবস্থা, ভাল জ, শস্য বিনষ্টকারী পতঙ্গ প্রভৃতি থেকে শস্য উদ্বারের পদ্ধতি প্রভৃতি নানা  প্রকার ব্যবস্থা করা উচিত৷ আর জনগণকে সমবায়ের উপকারের কথা শিক্ষা দেওয়া উচিত৷ তা না করে যারা উৎপাদন বৃদ্ধির পরিবর্তে জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্যে হাটে-বাজারে চলচ্চিত্র দেখিয়ে জনমত গড়তে চায় তাদের মানবতার বড় শত্রু বলা ছাড়া উপায় নেই৷

প্রগতিশীল উপাযোগ তত্ত্ব অনুসারে কৃষি ও শিল্পে সর্বাধিক আধুনিকীকরণ দরকার৷ তাই সমবায়ের ভিত্তিতে যে কৃষি ব্যবস্থা গড়ে উঠবে সেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে হবে৷ এই আধুনিকীকরণের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধির সুবিধা হবে৷ যেমন ট্রাক্টর ব্যবহার করলে গভীর পর্যন্ত মাটি খোঁড়া যায়৷ এর ফলে মাটির উপরিভাগ নীচে ও নীচের অংশ উল্টে ওপরে আসে৷ ওপরের অংশ চাষ হার ফলে তার উর্বরতা কমে যায়৷ তাই ট্রাক্টর ব্যবহারে নীচের মাটি ওপরে আসার ফলে জমির উৎপাদিকা শক্তি বাড়ে৷ আর যে ওপরের অংশ চাষের ফলে দুর্বল হয়ে গিয়েছিল তা কিছুদিন নীচে গিয়ে বিশ্রাম নেবার সুযোগ পেলে তার উৎপাদিকা শক্তি ভরিষ্যতের জন্যে েেড় যায়৷ দ্বিতীয়তঃ চাষীদের বলদ রাখবার দরকার হয় না৷ বলদ রাখলে বছরের মধ্যে ছয় মাস বিনা কাজে তাদের পালনের ঝামেলা ও খরচ বহন করতে হয়৷ আজকের যুগ বড় বড় জানোয়ারদের দিয়ে কাজ চালানোর যুগ নয়৷ ইয়ূরোপে ঘোড়া ও হাতীর ব্যবহার কমে আসছে৷ তাই যুগের সাথে তাল রেখে ট্রাক্টর(tractor) ব্যবহার করতে হবে---একটা ট্রাক্টর আট জোড়া বলদের সমান৷ যাদের মাত্র দু’বিঘা জমি রয়েছে তাদেরও যদি দশ বিঘা জমির জন্যে বলদ রাখতে বা পালন করতে হয়, এটা একটা অযথা অর্থনৈতিক ক্ষতি৷ আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে জমির ওপর শীে লোকের মিছেমিছি চাপ পড়বে না৷ সেই উদ্বৃত্ত লোকেদের অন্য কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নতি করা যাবে৷ অবশ্য এর জন্যে সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগ ক্ষেত্র তৈরী করে দিতে হবে৷ কম লোক দিয়ে কাজ করা হ’লে মজুরের জন্য যে খরচ হ’ত তা চবে, সঙ্গে সঙ্গে বাড়ীর মেয়েরা মাঠে জল খাবার জোগানো, খাবার পাঠানো প্রভৃতি ভারী ভারী কাজ করা থেকে রেহাই পেয়ে নিজেদের উন্নতির সময় পাবে৷ তাছাড়া, যন্ত্রীকরণের ফলে শহর ও গ্রামের মধ্যে সংযোগ স্থাপন হবে৷ ফলে পল্লীবাসীদের জীবন-যাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে৷

(ক্রমশঃ)