সুদূর অতীতে অতিকায় জানোয়ারেরা মৃত্যু সন্নিকট ৰুঝলে পূর্ব নির্দিষ্ট স্থানে চলে যেত৷ বন্য হাতীর এখনও এই স্বভাব আছে৷ এইসব স্থানে সঞ্চিত পশুর হাড় কালের বিবর্ত্তনে ক্যালসিয়াম সালফেট বা ক্যালসিয়াম কার্বোনেটে রূপান্তরিত হয়েছে৷ যেখানে যেখানে ক্রেটাসিয়াস যুগের বৃহৎ জানোয়ারেরা যূথৰদ্ধভাবে বাস করত সেখানে চুণাপাথর পাওয়া যাবে৷ উদাহরণস্বরূপ অসমে চুণাপাথর ও পেট্রোলিয়াম পাওয়া যাবে৷ এই বিশাল আকৃতির জানোয়ারের দেহের চর্বি পেট্রোলিয়ামে আর হাড় চুণাপাথরে রূপান্তরিত হয়েছে৷ চুণাপাথর দিয়ে যেমন ভালজাতের সিমেণ্ট তৈরী হবে তেমনি জমিতে এর ব্যবহার করলে কমলানেবুর মিষ্টত্ব ৰেড়ে যাবে৷ রাঢ়ের ঝালদা, জয়পুর অঞ্চলে এই চুণাপাথর দেখতে পাওয়া যায়৷
জৈব–জৈব এই দুই রকমেরই সার হতে পারে৷ যখন জমিতে সার প্রয়োগ করা হচ্ছে তখন অপ্রত্যক্ষভাবে ৰ্যাকটিরিয়ারও ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এই ৰ্যাকটিরিয়া ধনাত্মক–ঋণাত্মক দুই ভাবেই কাজ করে৷ যখন তুমি জৈব সারযুক্ত ৰ্যাকটিরিয়ার ব্যবহার করছ তখন তার প্রভাবে ৰ্যাকটিরিয়ার কার্যকারিতাও ধনাত্মক হবে৷ তোমাদের জৈব সারের ব্যবহার, তার ধনাত্মক প্রভাব এই সব নিরীক্ষণ করে’ ধনাত্মক মাইক্রোবাইটাম সম্বন্ধে বৈবহারিক গবেষণার ব্যবস্থা করা উচিত৷
পশুজাত জৈব সারের মধ্যে ভেড়ার মূত্র ও বিষ্ঠা সর্বোত্তম৷ রাঢ়ভূমিতে যে ভেড়া প্রতিপালিত হবে তা ৰাঙলায় অন্যান্য অঞ্চল, জম্মু, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ থেকে আনানো যেতে পারে৷ অষ্ট্রেলীয় প্রজাতিরও ব্যবহার করা যেতে পারে৷ বায়োগ্যাস উৎপাদনের জন্যে ব্যবহূত উপকরণ হচ্ছে গোরু–মহিষ–ভেড়ার গোবর, সংরক্ষিত কাননের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিষ্ঠা ও বিভিন্ন কানন থেকে সংগৃহীত জৈব বর্জ্য৷ বায়োগ্যাসের জন্যে কচুরিপানাও একটি ভাল কাঁচামাল৷ কিন্তু সর্বোত্তম হচ্ছে গোবর৷ স্বাভাবিক বা শুদ্ধ প্রজাতির পশুদের চেয়ে হাইব্রিড পশুদের মল এ ব্যাপারে অতটা কার্যকরী নয়৷ কেননা সেই ধরনের পশুরা বেশী রোগাক্রান্ত হয়৷
সবুজ তরিতরকারীর উৎপাদনে সবচেয়ে ভাল উপাদান হচ্ছে পচা শাকসব্জী, ঘাস–পাতা ইত্যাদি থেকে তৈরী সার৷ গোবর সার এক্ষেত্রেও একই রকমের উপকারী৷ লাউ–পটোল–উচ্ছে–ঝিঙ্ ইত্যাদির ক্ষেত্রে সরষের খোল (বা অন্যান্য তৈলৰীজের খোল) সমপরিমাণ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করলে উৎপাদন ৰাড়বে৷
এর আগে বলেছিলুম যে কৃষিজমি থেকে সর্বাধিক উপযোগ পাওয়ার জন্যে কর্ষকের সারের প্রয়োজন হয়৷ তাই উৎপাদন ৰাড়ানোর জন্যে পশুজাত সার বা জৈবসার যথেষ্ট নয়, কিছুটা রাসায়নিক সারেরও প্রয়োজন হয়৷ অবশ্য এটা দেখা গেছে জমিতে যখনই ব্যাপকভাবে রাসায়নিক সার ব্যবহূত হয়েছে, জমি কিছু সময় পরে অনুর্বর বা ৰন্ধ্যা ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছে৷ এর কারণ হচ্ছে রাসায়নিক সার জমির মূল প্রাণশক্তিকে ধ্বংস করে’ দিয়ে জমিকে সিমেণ্টের মতো নিষ্প্রাণ ও নিরেট করে দেয়৷ এই কারণে উপযুক্ত গবেষণার মাধ্যমে অনুসন্ধান করতে হবে কী পদ্ধতিতে কৃষিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে জমির কোন ক্ষতি হবে না৷ ব্যষ্টিগত মালিকানায় চাষের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের প্রয়োগের কুফল থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব নয়৷
কিন্তু সামবায়িক প্রথায় চাষ করলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব৷ সামবায়িক ব্যবস্থায় কৃষিতে গবেষণা ও উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়৷ তার ফলে নোতুন নোতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে জমির ক্ষমতা ৰাড়িয়ে নিয়ে বা তার প্রাণশক্তি দীর্ঘায়িত করে এর অধিকতর উপযোগ সম্ভব হয়৷ সমবায় প্রথার সুফল হচ্ছে এই ব্যবস্থায় অনেক ব্যষ্টির সম্পদ ও সঙ্গতিকে একত্রিত করে’ তা সম্মিলিত ভাবে উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত করা যায়৷
এক সময় ছিল যখন চাষী কয়েক বছর নিরবচ্ছিন্ন ভাবে জমি থেকে ফসল উৎপাদন করে’ নেওয়ার পর এক বছরের জন্যে জমিকে পতিত বা অব্যবহূত অবস্থায় রেখে দিত৷ কিন্তু এখন এটা করা সম্ভবপর নয়৷ বর্ত্তমানে প্রয়োজন হচ্ছে একটা ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা যার ফলে সেই রাসায়নিক সারই প্রয়োগ করা হবে যা জমির উর্বরতা নষ্ট করবে না, অথবা রাসায়নিক সারের প্রয়োগ না করেই জমির উৎপাদন ৰাড়ানো সম্ভবপর হবে৷ আমি আশাবাদী যে নিকট ভবিষ্যতে মানুষ এই লক্ষ্যপূরণে সক্ষম হবে৷