কৃষিভূমির সর্বাধিক ও সঙ্গত উপযোগিতা গ্রহণ, ও সকল কৃষিভূমির সুষ্ঠু পুনর্বিন্যাসের জন্যে সমবায়–প্রথাই অধিকতর কাম্য হওয়া উচিত৷
কৃষি কাজ যদি সমবায়–প্রথা অনুযায়ী সম্পন্ন করা হয় তাহলে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষি–জমিকে মিলিয়ে একটি বড় কৃষি–জমিতে পরিণত করা যাবে৷ তার ফলে সব কর্ষকেরই বিরাট সামূহিক লাভ হবে৷ এতে আলের জন্যে অযথা জমি নষ্ট হবে না, কৃষিযোগ্য ভূমির আয়তনও বাড়বে৷
সমবায়–ভিত্তিক কৃষিতে চাষবাস নিয়ে গবেষণা চালিয়ে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করা, ও এমন কৃষি–পদ্ধতি আবিষ্কার করা হবে যাতে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার সম্ভব হবে, অথচ জমির উর্বরতাও দীর্ঘকাল অক্ষুন্ন রাখা যাবে৷ সমবায় প্রথার মস্ত বড় সুবিধাটা এই যে, এতে অনেকের মূলধন ও সম্পত্তি একত্রিত করে’ তাঁদের সংঘবদ্ধ প্রয়াসে সেই মূলধন ও সম্পত্তিগুলিকে কাজে লাগান যায়৷
অ–কৃষি শিল্পের মত কৃষিকেও শিল্পের সমান গুরুত্ব দিতে হবে৷ অনেক অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশেও এব্যাপারে কৃষিকে শিল্পের মত গুরুত্ব প্রদান করা হয় না৷ সমবায় প্রথায় কৃষি–ব্যবস্থা গড়ে’ উঠলে এ নীতি ভালভাবেই কার্যকরী হতে পারে৷
ব্যষ্টি মালিকানায় পরিচালিত কৃষি ব্যবস্থায় কর্ষক তাঁর অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে উৎপন্ন ফসল মাঠ থেকে তুলে আনতে না আনতেই অনেক সময় বিক্রী করে’ ফেলতে বাধ্য হন৷ কিন্তু সমবায়–ব্যবস্থায় কর্ষক যথেষ্ট পরিমাণে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ভোগ করতে পারবেন–কারণ দুঃস্থ কর্ষকরা প্রয়োজন হ’লে সমবায় ভাণ্ডার থেকে অগ্রিম অর্থ ঋণ হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন, ও বাজারের অবস্থা ও মূল্যমানের সর্বশেষ পরিস্থিতি বিবেচনা করে’ তাঁর উৎপন্ন ফসল যথাযথ মূল্যে যথাসময়ে বিক্রয় করতে পারবেন৷ সমবায়গুলি নির্দিষ্ট মূল্য–আইনের মধ্যে নিজের উৎপন্ন ফসলের বাজারদর নির্দ্ধারণ করতে পারবে৷ এ ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীরা বা দালালরা ব্যষ্টিগত মালিকানাধীন কৃষিতে অথবা পুঁজিবাদী কৃষি–ব্যবস্থায় লাভের বড় অংশটা আত্মসাৎ করে’ নেবার সুযোগ পেত, সমবায় প্রথায় তা হতে পারবে না৷ সমবায়ই মোট লাভটুকু নিজের ঘরে তুলে নিতে পারবে৷
পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে ফসল বিক্রী করে’ দেওয়াকে কথ্য বাংলায় বলে অভাবী বেচা স্তুন্ব্দব্ধব্জন্দ্বব্দ ব্দ্ত্রপ্তন্দ্বগ্গ৷ এই ধরণের বিক্রয়ের হাত থেকে কর্ষকদের রক্ষা করবার জন্যে সমবায়–প্রথা চালু করা অত্যন্ত আবশ্যক৷ সমবায়ে কর্ষক সারা বৎসরে তাঁর যে পরিমাণ খাদ্যশস্য প্রয়োজন হবে ততটুকুই নিজের ব্যবহারের জন্যে রেখে বাড়তি ফসল সমবায়ের কাছেই বিক্রী করে’ দিতে পারবেন৷ এ ক্ষেত্রে সমবায়ই দাম ঠিক করে’ দেবে কী মূল্যে সেই বাড়তি ফসল ক্রয় বা বিক্রয় করা হবে৷ উৎপাদিত দ্রব্যের বাজার–দর যখন গ্রহণযোগ্য ও যুক্তি–সঙ্গত হবে তখনই তাঁরা উৎপন্ন দ্রব্য বাজারে বিক্রী করবেন৷ এখন সমবায় না থাকায় এই লাভ মধ্যস্বত্ত্বভোগী বা দালাল বা মহাজনের ঘরে চলে’ যাচ্ছে৷
কর, লেবি বা আবগারী শূল্ক ইত্যাদি যা যা দেবার থাকে সেগুলি সমবায় নিজেই দিয়ে দেবে, ফলে ব্যষ্টিগতভাবে কর্ষকরা অর্থনৈতিক চাপ বা শোষণ থেকে রক্ষা পাবেন৷
সমবায়–ব্যবস্থায় কোন জমিকেই অকর্ষিত অবস্থায় ফেলে রাখা যাবে না৷ প্রতিটি ভূমি খণ্ডকেই কৃষির আওতায় আনতে হবে৷ এই ব্যবস্থায় প্রতিটি ভাগচাষীকেই স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করা হবে, ও তাদের উৎপাদনের পরিমাণ অনুযায়ী বেতন ও বোনাস দেওয়া হবে৷ সমবায় ব্যবস্থায় অলস কর্মী উৎপাদনের স্বল্পতার দরুণ বেতন হয়তো কম পাবে, কিন্তু সামগ্রিক উৎপাদন হ্রাস পাবে না–কারণ অন্যান্য কঠোর পরিশ্রমী শ্রমিকেরা তাদের স্বাভাবিক মজুরীর অতিরিক্ত বোনাসের জন্যে স্বাভাবিকভাবেই অধিক উৎপাদন করতে উদ্যোগী হবে৷ তাদের যৌথ শক্তির দরুণ সমবায়গুলো অধিকতর বৈজ্ঞানিক উৎপাদন–কৌশল প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে–যেমন পাওয়ার টিলার (বিদ্যুৎ চালিত লাঙ্গল), ট্রাক্টর, অধিক–ফলনশীল বীজ, উন্নত সেচ, ইত্যাদি৷ সমবায়ের সদস্যরা অর্থনৈতিক সাহায্য বা ঋণদানের জন্যে এই উদ্দেশ্যে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে–যা কোন একক চাষীর পক্ষে সম্ভব নয়৷ যেমন চাপে পড়ে’ সরকার কম সুদে সমবায় সংস্থাগুলোকে টাকা ধার দিতে পারে, যা দিয়ে সংস্থাগুলো পাওয়ার–টিলার, ট্রাক্টর কিনতে পারে, অথবা সরকার নিজেই উদ্যোগী হয়ে কৃষিতে প্রয়োজনীয় সেচের বন্দোবস্ত করে’ দিতে পারেন–একক কর্ষকের পক্ষে যা আদৌ সম্ভব নয়৷
গভীর নলকূপ স্তুন্দ্বন্দ্বহ্ম–ব্ধব্ভ্ ও অগভীর নলকূপ ব্দড়্ত্রপ্তপ্তপ্সভ্র ব্ধব্ভত্ব্ন্দ্ব–ভ্রন্দ্ব–কোনটিই সেচের জন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল সরবরাহ করতে সক্ষম নয়৷ কর্ষকের জন্যে পুকুর–সেচের ব্যবস্থা করতে হবে, বাঁধ, তোলা সেচ প্তন্ন্দ্রব্ধ ন্ব্জব্জন্ন্ধ্ত্রব্ধন্প্সু বা সিফ্ট্ ইরিগেশনের ব্যবস্থা গড়ে’ তুলতে হবে৷ এ সব কাজের জন্যে কর্ষকদের হয়তো সরকারী সাহায্যও নিতে হবে৷ খাদ্য, বস্ত্র, বাসগৃহ, চিকিৎসা ও শিক্ষা–এই পাঁচটি সর্বনিম্ন প্রয়োজনীয় সুযোগ লাভ করা প্রতিটি মানুষের মুখ্য মৌল অধিকার ন্তুত্রব্জস্তুনুত্রপ্ত ব্জন্ন্ধড়ব্ধব্দগ্গ৷ কৃষি–ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সেচের জল সরবরাহের অধিকারও কর্ষকদের অনুরূপ এক মৌল অধিকার, কারণ জলের অভাবে সর্বনিম্ন প্রয়োজনগুলোর অন্যতম খাদ্যশস্যই উৎপাদন করা সম্ভব হবে না৷ ঠিক যেমন একটা লাট্টু তার আলের উপর দাঁড়িয়ে বন্বন্ করে ঘোরে, কিন্তু আল ছাড়া লাট্টুটা ঘুরতে পারে না–তেমনই কৃষি নামক লাট্টুটার আল হ’ল ওই সেচের জল, যা না থাকলে কৃষির গতি বা অগ্রগতি থেমে যেতে বাধ্য৷