কিছুদিন আগে ‘মানসাধ্যাত্মিক সাধনার স্তরবিন্যাস’ পুস্তকে বলা হয়েছে যে মানুষের অগ্রগতির চারটে স্তর রয়েছে–যতমান, ব্যতিরেক, একেন্দ্রিয় ও বশীকার৷ এই চারটে স্তরের ভেতর দিয়ে মানুষকে এগিয়ে চলতে হয়৷ এ সম্বন্ধে যা বক্তব্য তা ওই বইয়ে স্পষ্ট ভাষায় লিখে দিয়েছি৷ এখন, মানুষের জীবনটা কী রকম কোথা থেকে তার শুরু, কোথায় বা তার শেষ?
সবাই জানে যে লৌকিক ও মানসিক জগতে একটা আদিবিন্দু ও একটা অন্তবিন্দু আছে৷ যেমন, মানুষের পাঞ্চভৌতিক জগতে লৌকিক জীবনের সূত্রপাত কোথায় হয়?–না, সূতিকা গৃহে, আঁতুড় ঘরে৷ সেইটাই হ’ল একটা মানুষের একটা জীবনের আদিবিন্দু–সেইখান থেকে শুরু হ’ল, আর চিতার অগ্ণিতে তার শেষ নিষ্পত্তি৷ এটা হ’ল, মানুষের জীবন বলতে পারি, এটা হ’ল লৌকিক একটা জীবন৷ কিন্তু মানসিক বা আধ্যাত্মিক জগতে এটাকে একটা জীবন বলতে পারছি না৷ লৌকিক জগতে একটা জীবন ঠিকই, কিন্তু মানস–আধ্যাত্মিক জগতে এটা খণ্ডজীবন৷ এই রকম অনেক জীবনের মধ্য দিয়ে মানুষকে চলতে হয়–চলতে হচ্ছে, চলতে হবে৷ আর মানসাধ্যাত্মিক জগতের সূত্রপাতটা কোথায়? সেটা সূতিকা গৃহে নয়, আঁতুড় ঘরে নয়–তার সূত্রপাত হচ্ছে, যখন মেটাজোয়া মানুষের শরীর পেয়ে যাচ্ছে৷ আর তার অন্ত হচ্ছে কোথায়? –না, সেই মানুষের জীবনটা যখন পরমপুরুষের সঙ্গে মিলে মিশে এক হয়ে যাচ্ছে, অনেক জীবনের অনেক উত্থান–পতনের ভেতর দিয়ে গিয়ে পরমপুরুষের সঙ্গে মিলে মিশে এক হয়ে যাচ্ছে তখন৷ চিতাগ্ণিতে একটা মানসাধ্যাত্মিক জীবনের অন্ত হয় না৷ কারণ তার পরে আবার তাকে জন্ম নিতে হয়৷ এই হ’ল মানুষের লৌকিক জীবন৷ লৌকিক জগতে যা জীবন, মানসাধ্যাত্মিক জগতে তা খণ্ডজীবন৷
এই ভাবে লৌকিক জগতে এক একটা খণ্ডজীবনের ভেতর দিয়ে এগোচ্ছে৷ আর মানুষকে কিন্তু এগিয়েই চলতে হচ্ছে৷ আসলে যখন মেটাজোয়া থেকে মানুষের শরীর পেয়েছে তার পরে সে যখন চলে চলেছে পরমপুরুষের দিকে–এই চলাটা বিভিন্ন খণ্ড জীবনের ভেতর দিয়ে হচ্ছে৷ এই চলাটার মধ্যে কতকগুলো বিশেষ ধাপ থাকতে হবে, একটা লক্ষ্য থাকতে হবে, চলার একটা ছন্দ থাকতে হবে কারণ এগিয়ে চলাটাই যথেষ্ট নয়৷ তা যদি ছন্দায়িত না হয়, তা যদি রিদ্মিক না হয়, তা হলে চলার আনন্দ থাকবে না৷ মানুষের জীবন একঘেয়ে হয়ে যাবে৷
*******
অনেকগুলো খণ্ডজীবনের সমবায়ে বা সমাহারে তৈরী হয় একটি অখণ্ড জীবন–পূর্ণ জীবন৷ আর পূর্ণ জীবনের সূত্রপাত হচ্ছে–যেখান থেকে জটিল বহুকৌষিক জীবের আধার থেকে মানুষের আধার প্রথম এল৷ আর তারপর মানুষ পরমপুরুষের সঙ্গে মিলে মিশে এক হয়ে গেল৷
আমরা এ জগতে দেখছি কোন মানুষটা জন্মগত সূত্রেই খুব ক্ষুদ্ধিমান৷ কারোর মধ্যে বিশেষ বিশেষ গুণ রয়েছে যা আর পাঁচজন মানুষের নেই৷ কেউ সঙ্গীতে জিনিয়াস, কেউ মুখরতায় জিনিয়াস, আবার কারোর অত্যন্ত কুশাগ্র স্মৃতিশক্তি এমন কেন হয়? –না, এক একটা খণ্ডজীবনে মানুষ যে ধরনের সাধনা করে অর্থাৎ খণ্ডজীবনটাকে মানুষ যেভাবে কাজে লাগায়, সেই কাজে লাগাবার ফলে, সেই কর্মচেতনা তথা কর্মৈষণার ফলে সে একটা সামর্থ্য অর্জন করে, গুণগত একটা সামর্থ্য অর্জন করে৷ সামর্থ্য মানে এখানে ‘পোটেনসিয়ালিটি’ ত্নপ্সব্ধন্দ্বুব্ধন্ত্র৷ তারপরের খণ্ডজীবনে সে যখন আসে আগেকার পোটেনসিয়ালিটিটা, আগেকার কর্ম সামর্থ্যটা তখন ফুটে ওঠে৷ তাই শিশুকাল থেকে সেই গুণের অভিপ্রকাশ হয়৷ আর মানুষ প্রচেষ্টার দ্বারা একটা জীবনে যে কাজগুলো করছে, যেগুলো তার সেই জীবনের সঞ্চিত সম্পদ, সেই জীবনে যে সম্পদটাকে অর্জন করছে আর এইভাবে মানুষ যা কিছু পায়, একটা জীবনে যা কিছু অভিব্যক্ত করে সেগুলোকে আমরা বলি কী? –না, টেক্নিক, আর সেই মানুষটাকে বলি টেক্নিসিয়ান৷ পূর্বজীবনে সেই টেক্নিক্ যা পোটেনসিয়াল ফরমে থেকে গেছল পরজন্মে অভিব্যক্ত হ’ল, পরবর্তী খণ্ডজীবনে ফুটে উঠল, সেটাকে আমরা বলি জিনিয়াস৷ ণ্ডন্দ্বুন্প্সব্ভব্দ ন্ব্দ নুত্ব্প্সব্জু ন্দ্র্ত্রন্তুব্ভপ্তব্ধম্ভ্, আর ন্দ্বন্তুড়ুন্ন্তুন্ত্রু হ’ল কী? –না, ড়ন্দ্ব প্প্ত্রু ভ্রড়প্স ড়্ত্রব্দ স্তুন্দ্ব্লন্দ্বপ্তপ্সহ্ম্ ড়ন্ব্দ প্সব্জস্তুনুত্রব্জম্ভ ব্ধ্ত্রপ্তন্দ্বুব্ধব্দ ব্ভহ্মব্ধপ্স ন্দ্বপ্রব্ধব্জ্ত্রপ্সব্জ্ স্তুন্দ্বন্ধব্জন্দ্বন্দ্ব্ প্সন্দ্র ন্দ্বন্দ্রন্দ্রন্ন্তুন্ন্দ্ব্. একজীবনের প্রয়াসের দ্বারা যা পাই সেটা টেক্নিক৷ আর সেইটাই পরের খণ্ডজীবনে হয়ে দাঁড়ায় জিনিয়াস৷
ক্ষুদ্ধিমান মানুষ প্রতিটি খণ্ডজীবনকে পুরোপুরি কাজে লাগাবে, ও সে যদি পরবর্ত্তী খণ্ডজীবনে আসে তাহলে এই টেক্নিকটা, এই কাজে লাগানোটা তার কাজে লাগবে৷ শিশুকাল থেকে সে বড় বড় কাজ করতে, বড় বড় জিনিস ভাবতে সমর্থ হবে৷ আর যদি কেউ এই খণ্ডজীবনটাকে চরম ভাবে কাজে লাগায়, একটা খণ্ডজীবনকে যদি প্রচণ্ডভাবে কাজে লাগায়, তাহলে তার সেই কাজে লাগানোর যে কুশাগ্রতা তা তাকে পরমপুরুষে প্রতিষ্ঠিত করে দেবে, তাকে আর পরবর্ত্তী খণ্ডজীবনে ফিরে আসতে হবে না৷