(১) সৃষ্টি-স্থিতি-লয় ক্রিয়ার মধ্যে কাজ করে যাচ্ছে পঞ্চাশৎ মাতৃকাবর্ণ৷ বিভিন্ন ভাব-তরঙ্গের আঘাতে -প্রঘাতে-প্রতিঘাতে-সংঘাতে ও বিচ্ছুরণে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে জড় ও ভাবজগতের সব কিছু সংঘটিত হয়ে চলেছে৷ এই পঞ্চাশৎ বর্ণের মধ্যে নিয়ন্তৃ-বিন্দু হয়ে রয়েছে তিনটি ধবনি-সৃষ্টিবীজ ‘অ’ স্থিতি বা পালন-বীজ ‘উ’ ও প্রণাশবীজ ‘ম’৷ মনে রাখা দরকার, অনেকেই ‘ম’-কে সংহার বা বিনাশের বীজ ৰলে ভেবে থাকেন৷ কিন্তু তা ঠিক নয়৷ ‘সংহার’ মানে শেষ করে দেওয়া৷ ‘স’ মানেও শেষ, করে দেওয়া৷ ‘নাশ’ মানে নষ্ট হওয়া, ‘বিনাশ’ মানে বিশেষ রূপে নষ্ট হওয়া কিন্তু ‘প্রণাশ’ মানে বর্তমানকালীন অস্তিত্বকে ত্যাগ করে মৌলিক অস্তিত্বে বা মূল সত্তায় প্রত্যাবর্তন করা৷ দৃষ্টান্ততঃ ইক্ষু (আখ বা কুশের) থেকে আমরা পাই রস, সেই রসের ঘনীভূত অবস্থা থেকে পাই গুড় বা চীনী*৷ এখন কোন উপায়ে যদি চীনীকে ইক্ষুতে রূপান্তরিত করা যায় তবে সেটা হবে চীনীর প্রণাশ৷ ‘ম্’ হ’ল সেই প্রণাশের ৰীজ৷ এই প্রণাশের দেবতাকেই ৰলা হয় মহেশ্বর (ঈশ্বরাণাম্ ঈশ্বরঃ ইত্যর্থে) বা শিব (চেতন সত্তা ইত্যর্থে) বা ভূতনাথ (পাঞ্চভৌতিক তত্ত্বসমূহ যাঁর কৃপাকটাক্ষের ওপর নির্ভরশীল)৷ এই প্রণাশের বীজ ‘ম্’৷ তাই ‘ম’ শব্দের একটি অর্থ মহেশ্বর বা শিৰ৷
(২) একটু আগেই ৰলেছি, মৌল ধবনি ত্রয়ের অন্যতম হচ্ছে সৃষ্টি-বীজ ‘অ’৷ পরমপুরুষ বা পরম ব্রহ্ম মুখ্যতঃ এই ধবনিত্রয়েই নিজেকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন কার্য জগতে বা কার্য-ব্রহ্ম রূপে৷ সৃষ্টির বীজ ‘অ’৷ ব্রহ্ম যেখানে ব্রহ্ম+ অ= ‘ব্রহ্মা’ শব্দটি পাচ্ছি৷ ‘মা’ ধাতুর অর্থ হ’ল ‘মাপা’ to measure), ধারণ করা to hold), গ্রহণ করা to take)৷ যেমন যে জায়াকে (পত্নী) গ্রহণ করেছে ইত্যর্থে ‘মা’ ধাতুর ব্যবহার করে আমরা পাচ্ছি জামাতা (জামাত > জামাআ> জামাই)৷ সৃষ্টিকর্তা সৃষ্ট বস্তসমূহকে বিশেষ করে পরিমাপের মধ্যে পাঠিয়ে থাকেন৷ পিপীলিকার ডিম্বের আকার ও উটপাখীর ডিম্বের আকার সমান নয়৷ শিশু-পেষষ্কীটের আকার ও ঐরাবতের শিশুর আকার এক নয়৷ গুণ ও আধারানুযায়ী প্রত্যেক জীবের আকার নির্ধারণ করে পরিমাপ বা পরিমাণ বুঝে যিনি সৃষ্টি বা সর্জন করে চলেছেন (অনেকে ভুল করে ‘সৃজন’ লিখে বা ৰলে থাকেন৷ ‘সৃজন’ শব্দটি ভুল৷ ‘সৃজনী-শক্তি’ কথাটি হাস্যকর---হৰে ‘সর্জনী -শক্তি’৷ ভুল করে যাঁরা ‘সৃজন’ লেখেন তাঁরা কিন্তু ‘বিসর্জন’, ‘উৎসর্জন’-এর বেলায় ‘সর্জন’ ঠিকই ৰলেন) তার জন্যে ‘মা’ ধাতু+ ‘ক’ প্রত্যয় করে ‘ম’ শব্দটি পাচ্ছি৷ অর্থাৎ ‘ম’ মানে সৃষ্টিকর্তা ও প্রজাপতি ব্রহ্মা৷ পিতারও ‘পিতা’ এই অর্থে সৃষ্টিকর্তা বা প্রজাপতি ব্রহ্মাকে ‘লোকপিতামহ’ ৰলা হয়৷ প্র---জন+ ড+ আপ্= প্রজা, যার মানে হ’ল প্রকৃষ্ট রূপে যার জন্ম হয়েছে, জন্মগত কারণে যার অস্তিত্ব সিদ্ধ হয়েছে৷ ‘প্রজা নির্মাণ করে চলেছেন’ এই অর্থে পরম ব্রহ্মের সর্জনী-শক্তিকেই প্রজাপতি ব্রহ্মা ৰলা হয়৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)