মানুষের সকল কর্মেই মানবতার স্পর্শ থাকা উচিত৷ কাউকে বঞ্চিত না করার মনোভাব যার আছে সে তাই ন্যায়তঃ ধর্মতঃ সম্পত্তির ব্যষ্টিগত মালিকানা মেনে নিতে পারে না৷ বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক কাঠামোটা কিন্তু মানবিক অধিকারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয়৷ মানবিক অধিকারকে স্বীকার করতে হলে তাই বিপ্লবাত্মক পরিবর্তনের জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে, ও এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাতে হবে ভূসম্পত্তি, শিল্প, বাণিজ্য সব কিছুর সাধারণীকরণ এই বিপ্লবের একটি অতিবৃহৎ অঙ্গ৷ এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীকরণ শব্দটি আমি ইচ্ছা করেই বললুম না জমির মালিক জমিদার নয়, কারখানার মালিক তথাকথিত শিল্পপতিও নয়---একথাগুলো যতখানি সত্য, লাঙ্গল যার জমি তার, হাতুড়ী যার কারখানা তার---একথাগুলোও ঠিক ততখানি অসত্য৷ সব কিছুরই মালিক বিশ্বের জনসাধারণ৷ আর তাই সাধারণীকরণ শব্দটাই ব্যবহার করলুম৷ এই ব্যষ্টিগত মালিকানা-ব্যবস্থার বিলোপের যাঁরা পক্ষপাতী তাঁদের কেউ খেউ বলেন উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়েই জমি-জমা, কল-কারখানা তথা ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান দখল করা উচিৎ৷ কারও মতে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক পুঁজিপতিরা এ যাবৎকাল যথেষ্ট শোষণ করেছে, তাই ক্ষতিপূরণের প্রশ্ণই উঠতে পারে না৷ দীর্ঘকাল ধরে ক্ষতিপূরণের টাকা জোগাতে গেলে জনসাধারণের দ্রুত কল্যাণ-বিধান সম্ভব নয়---একথাটা খুই সত্য৷ তাই মূল্য দিয়ে পুঁজিবাদীর সম্পত্তি কিনে নেবোর প্রস্তাব সমর্থন করা যায় না৷ কিন্তু এ কথাটাও তো ঠিক যে এই সকল সম্পদের মালিক সর্বক্ষেত্রে সুস্থ সবল বা ধনী নাও হতে পারে৷ সম্পত্তির মালিক হলেন একজন অসহায়া বিধবা বা একজন পঙ্গু অতিবৃদ্ধ৷ এক্ষেত্রে তাঁদের জন্যে পেনসনের ব্যবস্থা নিশ্চয়ই করা উচিত৷ সম্পদের মালিক যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক হয় তার ভরণ-পোষণ বা শিক্ষার জন্যে স্টাইপেণ্ডও দিতে হবে বৈকি! মালিক যদি সুস্থ-সল পুরুষও হয় সেক্ষেত্রেও তার যদি অর্থোপার্জনের দ্বিতীয় কোন পথ না থেকে থাকে সেক্ষেত্রে তার যোগ্যতা ও সামর্থ্যমত অর্থোপার্জনের সুযোগও তার জন্যে করে দিতে হবে৷ এইটেই হল মানবোচিত ব্যবস্থা৷
আজকের সমস্যা বই থেকে