মানব জীবনে বিজ্ঞান ও ধর্ম ধর্ম ও অন্ধবিশ্বাস (মূর্ত্তিপূজা)

লেখক
সৌমত্র পাল

পুর্ব প্রকাশিতের পর

ধর্ম সম্পর্কে সুষ্ঠু ধারণার অভাবের কারণেই মনে জন্ম নেয় নানান অযৌক্তিক ক্রিয়াকলাপের ---অন্ধবিশ্বাসের৷ যুক্তিতে বুঝেছি যে অসীম ব্রহ্মই জীবের একমাত্র আরাধ্য৷ ধর্মসাধনা মনকে অসীমে প্রতিষ্ঠিত করে মনের পূর্ণ বিকাশ ঘটায়৷ অন্যদিকে অন্ধবিশ্বাস মনের বিকাশের দরজা  রুদ্ধ করে দিয়ে তাকে অধঃপতিত করে৷ স্বার্থান্বেষীরা যুগে যুগে নানান অলৌকিক প্রথাকে ধর্মের সাথে সংযুক্ত করে ধর্মের বিশুদ্ধ রূপকে কালিমালিপ্ত করে মানুষ৷ শোষণ করে চলেছে৷ তাই ব্রহ্মসাধনার পরিবর্তে ‘মূর্ত্তিপূজা’ ও তৎসংলগ্ণ পশুবলিপ্রথা, আড়ম্বপূর্ণ যজ্ঞাদি, ‘চরণামৃত সেবন’, ‘গঙ্গাস্নান প্রভৃতি৷ বহির্মুখী কু-প্রথাকে ধর্মসাধনার সঙ্গে সংযুক্ত করে শোষণের ধারাকে অব্যাহত রেখেছে--- যা সত্যিই মর্মস্পর্শী৷ প্রকৃতপক্ষে এই সকল  প্রথাগুলি কোনভাবেই ধর্মসাধনার অঙ্গ তো নয়ই বরং এগুলি মানুষের শ্রম-সময়-অর্থ ও হৃদয়ের ভাবাবেগকে  নিদারুণ আঘাত করে মানবতাকে পশুত্বে নামিয়ে আনে৷

মানুষ আসলে চায় প্রকৃতপক্ষে ‘মুক্তি’৷ মুক্তি  কী? মুচ+ক্তিন্ প্রত্যয় যোগ করে ‘মুক্তি শব্দটা নিষ্পন্ন হয়েছে যার অর্থ জীবনকে সর্বপ্রকার  বন্ধন থেকে সংকোচন করা৷ বন্ধন-ই যন্ত্রণা আর বন্ধনহীনতাই মুক্তি.....আনন্দ৷ এখন প্রশ্ণ বন্ধন কোথায়? মানবজীবন ত্রিবিধ বন্ধনে আবদ্ধ--- জাগতিক বন্ধন (শারীরিক চাহিদা, অর্থনৈতিক চাহিদা, সাংসারিক চাহিদা, সামাজিক চাহিদা প্রভৃতি)  মানসিক বন্ধন (মানসিক ঘাত প্রতিঘাত , দ্বিধা-দ্বন্দ, কর্মফল প্রভৃতির বন্ধন) ও আধ্যাত্মিক বন্ধন (আত্মা-পরমাত্মা সংক্রান্ত যা কিছু বন্ধন, যা কিছু অপ্রাপ্তির মর্মবেদনা) ৷  প্রতিটি  মানুষ  এই রকম  কতই  বন্ধনে আবদ্ধ সৃষ্টিচক্রের ধারায় প্রকৃতির প্রভাবাধীন হতে  হতে মানুষের অস্তিত্বের সাথে ক্রমাম্বয়ে  সংযুক্ত হয়েছে নানান সমস্যারূপী  বন্ধন৷ ধর্মসাধনার মাধ্যমে  মানুষ তার জীবনের বন্ধন ক্রমান্বয়ে সংমোচন করতে করতে  ফিরে যায় আদি উৎস নির্গুণে বা বন্ধন রহিত  সত্তা-অসীম ব্রহ্মে৷  আদি ঋষি শিব বলেছেন ‘‘এই অবস্থায় মানুষ সকল বন্ধন ডোরকে ছিন্ন করে নিত্যানন্দে (নিত আনন্দে) স্থিতিলাভ করে৷’’

সার্থক হয় তাঁর মনুষ্যজীবন৷ অন্যদিকে যখন সে নির্গুণ ব্রহ্ম প্রাপ্তির দিকে না গিয়ে কেবলমাত্র  শাস্ত্রীয় শ্লোকের নিরস ব্যাখা করে কিংবা ঘটা করে মূর্ত্তিপূজা করে, তখন সে কেবল তার মূল্যবান সময়-অর্থ-শ্রমের অযথা  অপচয়ই করে থাকে৷ কেননা মূর্ত্তি একান্তেই মানুষের মনের কল্পনার বস্তু--- ‘‘মনসা কল্পিতা মূর্ত্তি’’(শিবোপদেশ নম: শিবায় শান্তায়)৷ ভয়-লোভ অথবা অন্য কোনবৃত্তির তাড়না থেকেই কল্পনাশ্রিত হয়েই মানুষ একদা  মূর্ত্তিপূজোর প্রচলন করেছিল৷ এঁদের কখনোই কোন অস্তিত্ব ছিল না বা নেই৷ আনন্দমূর্ত্তিজী তাঁর ‘‘নম:শিবায় শান্তায়’’ গ্রন্থে যথার্থই মন্তব্য করেছেন:

‘‘মানুষের অনুমণ তার বর্তমান পরিবেশসম্পৃক্ত বা অতীত পরিবেশ সম্পৃক্ত বা পরিবেশবর্জিত বা উদ্ভট ভাবাত্মক চিন্তায় যে সকল কল্পিত মূর্ত্তি নির্র্মণ করে সেগুলোর ওঠা-বসা, নড়া-চড়া সব কিছুই অণুমানসের আওতায় সীমাবদ্ধ৷ অর্র্থৎ অনুমানস (মানব মন) চাইলেই তার অস্তিত্ব, আর অণুমানস  না চাইলেই সে নস্যাৎ (বিসর্জিত)৷ অর্র্থৎ এই সকল কল্পিত মূর্ত্তি নিজেদের অস্তিত্বের জন্যে সম্পূর্ণতঃ মানুষের অণুমানসের ওপর নির্ভরশীল৷ তারা একান্তভাবেই মনুষ্যসৃষ্ট, মনুষ্যে স্থিত ও চরম অবস্থায় মনুষ্যেই সংলীন৷’’

কবিশেখর কালিদাস রায়, ও একই কথা বলেছেনঃ

‘‘মানুষই দেবতা (মূর্ত্তি) গড়ে

তাহারই কৃপার পরে

করে দেব মহিমা নির্ভর ৷’’ (চাঁদ সওদাগরের প্রতি)

তাইতো বলি মানুষের কপোল কল্পিত বস্তু চেতনশীল জীব মানুষের অণুমনকে ভূমা নির্গুণ ব্রহ্মে প্রতিষ্ঠিত করে সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে মুক্ত করতে কখনোই পারে না৷ একমাত্র সাধনার দ্বারাই মানব অণুমন নির্গুণ চৈতন্যে (ব্রহ্মে) সমাহিত হয়ে ত্রিবিধ বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে পরম প্রশান্তি লাভ করে৷ তাইতো যোগঋষি সদাশিব বলেছেন ঃ

‘‘ন মুক্তি শাস্ত্রব্যাখ্যানে ন মুর্ত্তি বিধিপূজনে

কেবলং ব্রহ্মোনিষ্ঠো যঃ সঃ মুক্তো নাত্র সংশয়’’

আনন্দমূর্ত্তিজী এই প্রসঙ্গে একটি মজার গল্প বলেছেন যে, কোন মানুষ যদি স্বপ্ণে মনে মনে একটা রাজ্য তৈরী করে ফেলে আর মনে মনেই সে রাজ্যের চারটি রাজপ্রাসাদে মনের তৈরী একটি স্বর্ণ সিংহসনে উপবেশন করে সে ক্ষেত্রে স্বপ্ণকালে সে রাজ্য হ’ল সত্যি কিন্তু আসলে সে কী রাজা হ’ল? ঘুম ভাঙ্গার পর সে দেখে যে বাস্তব জগতে সে ছেঁড়া মাদুরে ছেঁড়া কাঁথা গায়ে  জড়িয়ে ঘুমোচ্ছিল৷ স্বপ্ণলব্ধ রাজ্যের রাজা হওয়া যেমনটি উদ্ভট অবাস্তব জিনিস ঠিক তেমনই অনুমানস কল্পিত মূর্ত্তির কাছে মুক্তি মোক্ষ পাবার আশা আসলে দুরাশা নয়, আগাগোড়াই হতাশা৷ তাই শিব স্পষ্ট ভাষায় বলে গেছেন---স্বপ্ণ রাজ্যেন রাজান : মানবস্তথা৷’’

দ্বিতীয়ত ঃ যুক্তির খাতিরে যে ব্রহ্মকে ‘অসীম’ বলে জেনেছি মূর্ত্তির সীমারেখাতে তাঁকে কল্পনা করার অর্থই তাঁকে জেনে বুঝে অপবাদ দেওয়ার নামান্তর৷ যে বিজ্ঞানসম্মত  অনুশীলনের মাধ্যমে  মানব অণুমন পরমব্রহ্ম সম্প্রাপ্তির দিকে এগিয়ে যায় তা উৎকৃষ্ট সাধনা কেননা এর দ্বারা অণুমন ক্রমশঃ সূক্ষ্মত্ব প্রাপ্ত হয়৷ বিকশিত  হয় ও একদা ব্রহ্মেই সমাহিত হয়ে পরম আনন্দ লাভ করে৷ অন্যদিকে পাঞ্চভৌতিক উপকরণে নির্মিত জড় মূর্ত্তির কল্পনা মনকে ক্রমান্বয়ে জড়ত্বে (স্থূলত্বে) পর্যবসিত করে৷ জড়ের ভাবনা মনের বিকাশের দ্বারকে রুদ্ধ করে মনকে অধ:পাতিত করে৷ শাস্ত্রে তাই ব্রহ্ম অনুশীলনকে শ্রেষ্ঠ আর মূর্ত্তিপূজাকে অধমতম সাধনা বলা হয়েছে:

‘‘উত্তমো ব্রহ্মসদ্ভাবো মধ্যমা ধ্যানধারণা

জপস্তুতি স্যাদধমা মূর্ত্তিপূজাধমাধমা৷’’

শুধু মূর্ত্তিপূজাই নয় তীর্থযাত্রাকেও ধর্মসাধনার পরম অঙ্গ বলে স্বার্র্থন্বেষীরা ঘোষণা করেছে৷ ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়৷  মানুষ জীবনের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সস্তায় কিস্তিমাৎ করতে চায় অধ্যাত্মজগতে  বা ধর্মজগতে সে উপযুক্ত সাধনা না করে জড়জগতেও তার কর্ত্তব্য যথাযথভাবে পালন না করে মানুষ যখন পুণ্যার্জন করতে চায় বা  অক্লেশে মুক্তি-মোক্ষ পেতে চায়, তখনই তারা তীর্থের-শরণাপন্ন হয়ে পাপস্খলনের চেষ্টা করে৷ গোরুর ন্যাজ ধরে বৈতরণী উদ্ধার হতে চায়৷  এ  তীর্থ ব্যবসায়ীরাও তাদের মনের দুর্বলতা বুঝে শোষণ করতে থাকে৷ একদা এ তীর্থ ও তীর্থ ঘুরে বেড়িয়ে তার ক্ষুধাও মেটে না আর অনুভব করে যে তার পাপস্খলন হয়নি৷ তমসাচ্ছন্ন মানবিকতায় মানুষরা তীর্র্থন্তরে ঘুরে ঘুরে শ্রম, সময় ও অর্থের অপচয় করে৷  তাই এর দ্বারা মোক্ষ প্রাপ্তি হয় না৷ কারণ ‘তীর্থ’ কথাটি পাই তীব+ স্থ+ ড থেকেই৷ তীর্থ শব্দের মানে তীরস্থিত তীরটা কীসের তীর?   যে অভিন্ন রেখায় জলাশয়ের জল আর স্থলভাগের সৈকত মিলিত হয় তাকেই ‘তীর’ বলে৷ এই তীর জাগতিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে তীর্থের  মর্র্যদা বহন করে৷ উভয়ের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে বলেই এটা তীর্থ---‘তীরস্থং তীর্থমিত্যাহুঃ তাই জাগতিক জীবনে  নিজ কর্তব্য পালন করার সাথে সাথে আধ্যাত্মজীবনে (ধর্মজীবনে) ব্রহ্ম অভিমুখী গতি যিনি বজায় রেখে চলেন তিনিই প্রকৃতর্থে  মোক্ষপ্রাপ্তির অধিকারী ৷ অন্যথায় নিরস সময় অর্থ  আর শ্রমের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়৷  তাই এই ধরণের তীর্থ ভ্রমণ ধর্মসাধনার  পরিপন্থি--- এক অর্থে অন্ধবিশ্বাসেরই সামিল৷ এ প্রসঙ্গে ‘‘নম: শিবায় শান্তায়’’ গ্রন্থের মন্তব্য যথার্থই তাৎপর্যপূর্ণ৷

‘‘ইদং তীর্থ মিদং তীর্থ ভ্রমন্তি তামসা: জনা:

আত্মতীর্থং ন জানন্তি কথং মোক্ষ বরাননে৷’’     (ক্রমশঃ)

 

তারক ব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণের আবির্র্ভব দিবস--- জন্মাষ্টমী

‘‘যদা যদা ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত৷

অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্৷৷

পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষৃকতাম.

ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভাবামি যুগে যুগে৷৷’’

শ্রীকৃষ্ণ এক ঐতিহাসিক চরিত্র৷ জন্মাষ্টমী শ্রীকৃষ্ণের আবির্র্ভব দিবস৷  আজ থেকে প্রায় ৩৫০০ বর্ষকাল পূর্বে তিনি তারকব্রহ্মরূপে এই ধরাধামে মানব জাতিকে নতুন পথ দেখাতে আবির্ভূত  হয়েছিলেন৷ সমাজে যখন ধর্মের অবক্ষয়, সমাজে পাপাচার চলে, সাধু মানুষ সমাজে চরম হেয় হয়ে থাকতে বাধ্য হন, ধর্মের পথে চলে সমাজে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়, সৎ মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হয়, ঠিক সেই সময়ই পরম পুরুষ মানুষের শরীরে মানব জাতিকে অভয় দান দিতে জন্ম নিলেন৷ নাম হ’ল শ্রীকৃষ্ণ৷ সমাজে তাঁকে নিয়ে  অনেক প্রচলিত রূপকথা রঙ চড়িয়ে ছড়ানো আছে  যা  তাঁর আসল কাহিনীকে কাল্পনিক লাগে৷ সমাজে প্রচলিত রাধাকৃষ্ণের প্রেমকথা  আছে কিন্তু  রাধা বলে কোনো স্ত্রী চরিত্রের সাথে তাঁর কোনো সম্পর্ক ছিল না৷ মহাভারতে কোথাও রাধার নাম খঁুজে পাওয়া যায় না৷ রাধা ভক্তের অন্তরে একটি ভাব, এই ভাব আধ্যাত্মিক প্রেম, যা দিয়ে ভক্তের সাথে শ্রীকৃষ্ণলীলা খেলা করেন৷  শ্রীকৃষ্ণের  ১৬০০০ গোপীনীর কথা প্রচলিত কিন্তু তাঁরা কোন স্ত্রী চরিত্র নয়৷ তাঁরা হলেন তাঁর ভক্তকুল৷  শ্রীকৃষ্ণ হলেন  পুরুষোত্তম জগতের সকল কিছুই তাকে কেন্দ্র করে চলছে, ঘুরছে,  তিনি সকলকে নিজের দিকে টানছেন৷ কেউ তাঁর বাইরে নেই৷  কৃষ্ণ কথার অর্থ হল কালো অর্র্থৎ কালো রঙ সকলকে আকর্ষণ করে, সকল রঙের উৎসস্থল যেখান থেকে সকল কিছুর উৎপত্তি  ও সেখানেই শেষ৷  শ্রীকৃষ্ণ হলেন এই জগতের হর্র্তকর্র্ত৷ সকলের ভাগ্য বিধাতা৷ তিনিই মহাবিশ্বের রচয়িতা৷ এই জগতে সকলে পরমপুরুষের এক একটি অংশ মাত্র৷ তাই ভক্ত কবি বলেছেনঃ ‘‘আমি যন্ত্র তুমি যন্ত্রী, যেমনই চালাও  তেমনই  চলি৷’’

শ্রীকৃষ্ণের স্মরণ নিলে সকলের মুক্তি ঘটে৷ সকলে পথ খঁুজে পায়৷ তাই কবি নরোত্তম দাস বলেছেনঃ

‘‘কৃষ্ণ নাম হরি নাম বড়ই মধুর

যে জন কৃষ্ণ ভজে সে বড় চতুর৷’’

এই বিপুলা পৃথিবীর কতটুকুই বা আমরা জানি! আমার কি ভাল মন্দ, কি প্রয়োজন , কোথা থেকে এসেছি , কেনই বা এই পৃথিবীতে আসা আর কোথায় বা যাব ! এ সকল কিছুই জানি না৷ তাই  একমাত্র পরম পুরুষই আমার সাথী , বন্ধু, সখা৷ বাকিরা  সকলেই  আমাদের সাময়িকী বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন৷ চলার পথের  আজ আছে কাল নেই৷ কিন্তু যিনি আমার সকল কিছুর কর্র্ত  তিনি যুগ যুগ ধরে আমার সাথী, বন্ধু , তিনি আমার প্রভু ৷ তিনি ছাড়া আমার ভালো মন্দ প্রয়োজন  কেই  বা বুঝবে! তাই তাঁরই শরণ নাও৷ এই জগতে  মন ভূলানো জড় বস্তুর ডাকে ঈশ্বরকে ভুলে থাকা মানে পরমপুরুষ শ্রীকৃষ্ণ থেকে দূরে সরে যাওয়া৷ নিজের লক্ষ্য ভুলে যাওয়া৷ তাই প্রভাত সংগীতে বলা আছেঃ

‘‘বাবা এবার যাব না  আর

জড়েই  ডাকে 

রঙবেরঙের খেলনা অসার

ডাকে আমাকে৷

পথের হদিস কেউ জানে না,

 পথ কেন  তা কেউ বোঝে না

কাঁটার ভয়ে কেউ চলে  না

নিজেরই লক্ষ্যে৷৷’’

মানুষ জেনে হোক, না জেনে হোক সকলেই শ্রীকৃষ্ণের  দিকে  ছুটে চলেছে, এমনকি সকল বস্তু লতা-গুল্ম জীব পশু তাঁরই পানে ধেয়ে চলেছে৷  আর এই যে ছুটে চলা সেটা যুগ যুগান্তর থেকে৷

ভালো কাজ করলে, ধর্মের পথে থাকলে পরম পুরুষের  কাছে চলে আসা যায়৷ অর্র্থৎ দুরত্ব কমে যাওয়া, তার মানে একদিন জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন হয়ে একক হয়ে যাওয়া৷ পরম পুরুষ সকলের সাথে  আছেন , অন্তরে  আছেন৷  কিন্তু তাকে বিদ্যাতে পাবে না, পাবে একমাত্র অন্তরের ভক্তিতে৷ তাই পরমপুরুষ ভক্তের  মাঝেই  থাকেন৷ আর যিনি সমাজের মধ্যে অধর্ম, পাপাচার , অসাধুদের  দূর করে দেন তিনিই তারক ব্রহ্ম৷ তিনিই পরম পুরুষ, তিনিই শিব, তিনিই শ্রীকৃষ্ণ৷ তিনিই যুগে যুগে মানব শরীরে তারকব্রহ্ম রূপে আসেন এই ধরাতে৷

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধে আরো বিশদভাবে জানতে হলে শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী লিখিত ‘নমামী কৃষ্ণসুন্দরম’’ বইটি  একবার পড়ে দেখার অনুরোধ করি৷ আপনার সকল সন্দেহ দূর হয়ে যাবে৷ এই মহাপুরুষ মানব কল্যাণে কত না কিছু দান করে গেছেন তার ঋণ মানব জাতি কম্মিকালেও শোধ করতে পারবে না৷