নীতি হচ্ছে একটা living force যার সাধনা মানসসত্তাকে অধিকতর মননশীলতার মাধ্যমে চরম সূক্ষ্মত্বে — পরমাপ্রজ্ঞায় সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে। সেখান থেকে মানুষকে আর কোথাও নিয়ে যাবার প্রশ্ন থাকেনা—সেখান পর্যন্ত নিয়ে যাবার প্রেরণা দিতে পারলে তবেই ‘নীতি’ নাম সার্থক হয়ে ওঠে ।
নীতিবাদ কোন ভাববাদীর স্বপ্নবিলাস নয়, কোন জড়বাদীর প্রয়োজন পূর্তির ব্যবস্থামাত্রও নয় । নীতিবাদ এমনি একটা জিনিস যা লোকায়ত বস্তুভাবকে লোকোত্তর প্রজ্ঞাভাবে মিশিয়ে দেবার সকল সম্ভাবনা নিয়েই মানুষের সামনে হাজির হয়ে থাকে । নীতিবাদকে আত্মস্থ করবার অভ্যাস মানুষকে শুরু করতে হবে ঠিক সেই সময়টিতেই বা ঠিক সেই সময় থেকেই যে সময়ে তার মধ্যে ক্রিয়াশীলতার বীজ সবেমাত্র উপ্ত হচ্ছে । ক্রীয়াশীলতা বলতে এখানে সামাজিক কার্যকলাপের কথাই বলছি । এ বিচারে দেখতে গেলে শিশুমনই নীতিবাদ গ্রহনের সব চাইতে উপযুক্ত ভূমি । কিন্তু এই নীতি শিক্ষা কে দেবে? পিতা-মাতা দোষ দেন শিক্ষকগণকে আর শিক্ষকেরা বলেন,দু’-তিন শ’ ছেলের ভীড়ে আমরা কী করে ব্যষ্টিগতভাবে কোন বিশেষ ছেলের সম্বন্ধে যত্ন নোব?
যদিও একথা ঠিক যে পিতা-মাতা অনেক ক্ষেত্রে অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত আর আশা করা অন্যায় নয় যে অধিকাংশ শিক্ষকই সুশিক্ষিত, তবুও এ ব্যাপারে সবটুকু দায়িত্ব তাদের স্কন্ধে চাপিয়ে দেওয়া উচিত হবে না । বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সংখ্যা বাড়িয়ে দিলে সমস্যার আংশিক সমাধান হতে পারে বটে, কিন্তু সমস্যা সমাধানের আসল চাবিকাঠি তবুও পিতা-মাতার হাতেই থেকে যায় । যেক্ষেত্রে পিতা-মাতা তাদের দায়িত্ব সম্পাদনে অযোগ্য সেখানে শিক্ষক তথা সমাজহিতৈষী ব্যষ্টিবর্গকে অধিকতর দায়িত্ব বোধের পরিচয় দেবার জন্যে এগিয়ে আসতে হবে ।মনে রাখতে হবে যে, যে নীতিবাদের ওপর মানুষের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত, সেই নীতিবাদ শেষ পর্যন্ত মানবতার চরম বিকাশের স্তরে যখন তাকে পৌঁছিয়ে দেয় তখনই তার বৈবহারিক মূল্যটুকু যথাযথ ভাবে উপলব্ধ হয় ।
নীতিবাদের স্ফুরণ থেকে বিশ্বমানবত্বে প্রতিষ্ঠা---- এ দু’য়ের মাঝখানে রয়েছে যেটুকু অবকাশ তাকে অতি্ক্রম করবার যে প্রয়াস তারই নাম সামাজিক প্রগতি । আর যারা মিলেমিশে চেষ্টা করে এই অবকাশটুকু জয় করবার প্রয়াসে রত হয়েছে তাদেরই নাম দেব একটা ‘সমাজ’ ।
(জামালপুর, ১৯৫৬)