দেশজুড়ে করোনার সঙ্গে লড়াই চলছে, করোনার আক্রান্ত ও করোনাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে৷ আর করোনার কারণে দেশজুড়ে লকডাউনের ফলে দেশের জনসাধারণের অর্থনৈতিক অবস্থাও অতীব সংকটজনক৷
এর মধ্যেই গোদের ওপর বিষফোঁড়া--- মেঘালয় থেকে প্রাপ্ত সংবাদ সেখানে বাঙালী নির্যাতন সমানে চলেছে৷ গত ফেব্রুয়ারী মাসে মেঘালয়ে ইছামতী ও বলাগড় এলাকায় খাসী ষ্টুডেন্টস্ ইয়ূনিয়নের পক্ষ থেকে স্থানীয় বাঙালীদের ওপর আক্রমণ নেমে আসে বাঙালীদের দোকানপাট ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেওয়া হয়৷ তার ওপর মেঘালয় সরকার প্রায় ৮০০ বাঙালী তরুণদের গ্রেফতার করে বাঙালীদের ওপর অত্যাচার অব্যাহত রাখে৷
এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের ‘আমরা বাঙালী’ দলের পক্ষ থেকে কলকাতায় মেঘালয় ভবনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয় ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীর নিকটে মেঘালয়ের বাঙালীদের নিরাপত্তা দাবী করা হয়৷ তার সঙ্গে সঙ্গে যারা বাঙালীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে তাদের গ্রেফতারের দাবীও করা হয়৷ আমরা বাঙালীর পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকটও চিঠি পাঠিয়ে মেঘালয়ের বাঙালীদের নিরাপত্তার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়৷ সেই অনুসারে মমতা বন্দোপাধ্যায় ও মেঘালয় সরকারের কাছে বাঙালীদের নিরাপত্তার জন্যে অনুরোধ করেন তারপরে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী আমরা বাঙালীর কেন্দ্রীয় সচিব বকুল রায়ের কাছে এক চিঠি পাঠিয়ে মেঘালয়ের বাঙালীদের পূর্ণ নিরাপত্তার ও হামলা বন্ধের আশ্বাস দেন৷ কিন্তু আশ্বাসই সার৷ গ্রেফ্তার হওয়া বাঙালীদের ছাড়ার কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি৷ বাঙালীদের দোকানপাট লুট ও অগ্ণিযোগের ঘটনা ঘটতেই থাকে৷
সাম্প্রতিক সংবাদ,মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে ৮/১০ জন বাঙালী তরুণ বাস্কেট বল খেলছিল৷ তখন হঠাৎ প্রায় ২০ জন খাসি উপজাতির লোক তাদের ওপর হামলা চালায় ও লাঠি, লোহার রড প্রভৃতি দিয়ে মারতে শুরু করে৷ ফলে বাঙালী তরুণরা সবাই গুরুতরভাবে আহত হয়েছে৷ স্থানীয় বাঙালীরা এসে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করেছে৷
এ কী চলছে! সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতে বাঙালীদের ওপর নির্যাতন চলছে৷ অসমে ১৯ লক্ষ বাঙালীর নাম এন.আর.সি তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের নাগরিকত্ব হরণ করার প্রক্রিয়া চলছে৷ বাঙালীদের ডি-ভোটার ঘোষণা করে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে অত্যাচার চলছে৷ মণিপুর, ত্রিপুরাতেও মাঝে মধ্যে বাঙালীদের ওপর হামলা চলছে৷ অথচ সরকার নির্বিকার৷
শুধু তাই নয়, ঝাড়খণ্ডে বাঙালীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ অথচ তাদের মাতৃভাষা কেড়ে নেওয়া হয়েছে৷ তাদের মাতৃভাষায় পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা বন্ধ৷ আগে অনেক বাংলা স্কুল ছিল, সেসব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
সরকারী অফিস আদালতেও বাংলা ব্রাত্য৷ কী আশ্চর্য! ব্রিটিশের হাত থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার সংগ্রামে বাঙালীরাই নেতৃত্ব দিয়েছে৷ ক্ষুদিরাম, প্রফুল্লচাকী, সূর্যসেন বাঘাযতীন থেকে শুরু করে শত শত দধীচি (শহীদ) স্বাধীনতার বেদীমূলে আত্মোৎসর্গ করেছেন৷
বাঙলার মহাবিপ্লবী নেতাজী সুভাষচন্দ্রের আজাদ হিন্দ ফৌজের লড়াই ও তাদের ত্যাগ ও বীরত্বে অণুপ্রাণিত হয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ--- এসবের মূল্যেই যে মূলতঃ ভারতের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে--- এটা আজ ঐতিহাসিকদের দ্বারা স্বীকৃত৷
অথচ সেই বাঙালী অধ্যুষিত এলাকাকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে বন্টিত করে ওই সব রাজ্যে নিজভূমে বসবাসরত বাঙালীদের ওপর নির্যাতন চলছে৷
যে মেঘালয়ে বাঙালীদের ওপর অত্যাচারের প্রসঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে, ওই মেঘালয়ের অন্তর্গত (ক) গারো পাহাড়ের সমতল অংশ ও (খ) খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ের সমতল অংশ বাঙালীদের নিজস্ব বাসভূমি৷ ঠিক এইভাবে অসমের সাবেক গোয়ালপাড়া জেলা, সাবেক কাছাড় জেলা, সমগ্র কামরূপ জেলার অন্তর্গত বড়পেটা মহকুমা ও নওগাঁ জেলার লামডিং, হোজাই,লঙ্কা প্রভৃতিও বাঙালী অধ্যুষিত , সাবেক বাঙলারই এই সব এলাকা অসম ও মেঘালয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে৷ নিজভূমিতে সমস্ত ক্ষেত্রে বাঙালীদের ষোল আনা অধিকার রয়েছে৷
তাহলে কেন বাঙালীদের ওপর এভাবে নির্যাতন চলছে অথচ সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ও নীরব কেন?
আমরা মেঘালয় ও অসমসহ সর্বত্রই বাঙালীদের ওপর এই নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ জানাই৷ সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রকে অবিলম্বে বাঙালীদের নিরাপত্তার দাবী করছি৷
বাঙালীদের ওপর এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সমস্ত বাঙালীরা ঐক্যবদ্ধ হোন ও এর প্রতিবাদে সরব হোন৷
- Log in to post comments