নারকোল

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

নারকোলের সংস্কৃত ভাষায় প্রচলিত নাম তিনটি (১) নারিকেল (এটি অন্তঃস্থ ‘ল’), (২) নালিকের (এটিও অন্তঃস্থ ‘ল’) ও (৩) কের৷ নারকোল পৃথিবীর বিষুবরেখায়, কর্কটক্রান্তীয় ও মকরক্রান্তীয় এলাকায় জন্মায়৷ নারকোলের প্রজাতি আছে অনেক রকমের৷ তবে বয়সঃসীমা ও উচ্চতার নারকোল যা আন্দাজ সাত বছর বয়সে ফল দেয়, দেয়ও মাঝারি পরিমাণে৷ ৰাঁচে আন্দাজ ৪০ বছর৷ গরিষ্ঠ প্রজাতির নারকোল ফল দেয় আন্দাজ ন’বছর বয়সে বাঁচে আন্দাজ ৭৫ বছর৷ ফল দেয় যথেষ্ট পরিমাণে৷ আজকালকার অধিক ফলনশীল নারকোল তিন বৎসর বয়সে ফলন দিতে শুরু করে৷ নারকোল উৎপাদনে পৃথিবীর প্রধান পাঁচটি দেশ হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া,ফিলিপিন্স্‌,মালয়েশিয়া,শ্রীলঙ্কা ও ভারত৷ ভারতের নারকোল গাছ ও ফলনের সকল অংশই কোন না কোন কাজে লাগে৷ সেজন্যে সংস্কৃত ভাষায় নারকোল গাছের অপর একটি নাম ‘কল্পতরু’৷ বৈদিক ভাষায় নারকোলের কোন নাম নেই৷ যতগুলি নাম আছে তার সবই লৌকিক সংস্কৃত ভাষায়৷ নারকোল একটি পুষ্টিকর খাদ্য৷ নারকোলের শাঁস থেকে তেল তো হয়ই, অধিকন্তু তার দুধ থেকে গো-দুগ্দের মতই বিভিন্ন পণ্য তৈরী করা যায়৷ দুধ বার করে নেওয়া নারকোলের শাঁসেরও পুষ্টিমূল্য থাকে ও তা থেকে রুটি, বিস্কুট প্রভৃতি প্রস্তুত করা চলে৷ নারকোলের কথা শেষ করার আগে আর একবার ৰলছি, নারকোলের যতগুলি নাম আছে ও তাতে যতগুলি ‘ল’ আছে প্রত্যেকটি অন্তঃস্থ ‘ল’ Lra) মারাঠী ভাষাতেও তাই৷ মারাঠীতে নারকোলের নাম নারল (উচ্চারণ হবে ‘নারড়’) গ্রাম ৰাঙলার কথ্য ভাষায় নারকোলকে কেউ কেউ নারকেল ৰললেও কলকাতার কথ্য ভাষায় ‘নারকোল’ ৰলা হয়ে থাকে৷ তালের কাঁদি থেকে যেমন রস পাওয়া যায়, পুরুষ ও স্ত্রী নারকোলের কাঁদি থেকেও ঠিক তেমনি রস পাওয়া যায়৷ তা থেকে গুড়ও তৈরী হয়৷ তবে ফল খারাপ হয়ে যাবার ভয়ে নারকোল গাছ থেকে রস কেউ ৰড় একটা নেয় না৷ বন্ধ্যা নারকোল গাছ খুব কম কাজেই লাগে নারকোল ঈষৎ লবণাক্ত মাটি চায়৷ তাই সাধারণতঃ সমুদ্র তীরেই নারকোল জন্মে থাকে৷ নারকোল ভম্ম আয়ুর্বেদ ঔষধরূপে ব্যবহৃত হয়৷ শুকনো নারকোল (হিন্দীতে ‘গড়ী’) অগ্ণিমান্দ্য রোগের ঔষধ৷ সমাজে সাধু স্বভাবের অথচ কঠোর প্রকৃতির লোককে সংস্কৃত সাহিত্যে নারকোলের সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে৷ বলা হয়ে থাকেঃ ‘‘নালিকেরসমাকারাঃ দৃশ্যন্তে হি সুহৃদনাঃ অন্যে বদরিকাকারাঃ বহিরের মনোহরাঃ’

অর্থাৎ যারা সত্যিকারের খাঁটি মানুষ, সৎ লোক তারা ঠিক নারকোলের মত৷ ওপরে রয়েছে কঠোর খোলা ও নীরস ছোৰড়া কিন্তু ভেতরে রয়েছে সুস্বাদু জল ও সুমিষ্ট শীস৷ আর বিপরীত স্বভাবের মানুষেরা কুলের মত৷ ওপরে রয়েছে নরম খোলা ও নরম শাঁস কিন্তু ভেতরে রয়েছে কাঁটাওয়ালা ৰীজ৷                               (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)