নব্যমানবতাবাদ

Baba's Name
শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী

মানুষ চলতে শুরু করেছে যখন, নিজের কথাটা যতটা ভেবেছে, অন্যের কথাটা ততটা ভাবেনি৷ অন্য মানুষের কথাও ভাবেনি, আর মনুষ্যেতর জীব–জন্তুর কথাও ভাবেনি, গাছ–পালার কথাও ভাবেনি৷ অথচ একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবলে দেখা যাবে যে, নিজের কাছে নিজের অস্তিত্ব যতটা প্রিয়, প্রত্যেকের কাছে তাদের নিজের নিজের অস্তিত্ব ততটাই প্রিয়৷ আর সব জীবের এই নিজ অস্তিত্বপ্রিয়তাকে যথাযোগ্য মূল্য না দিলে সামগ্রিক ভাবে মানবিকতার বিকাশ অসম্ভব৷ মানুষ যদি ব্যষ্টি বা পরিবার,জাত বা গোষ্ঠীর কথা ভাবলো, সামগ্রিক ভাবে মানুষের কথা না ভাবলো–সেটা অবশ্যই ক্ষতিকর৷ কিন্তু মানুষ যদি সামগ্রিকভাবে জীবজগৎ, উদ্ভিদ জগতের কথা না ভাবলো সেটা কি ক্ষতিকর নয় মানবিকতাকে ও মানবতাকে নোতুনভাবে ব্যাখ্যাত করে’ মানুষের চলার পথকে আরো প্রসারিত, আরো উন্মুক্ত, আরো সহজ সরল করে’ দেবে–এই হ’ল নব্যমানবতাবাদ৷ মানুষকে তার অস্তিত্ব সম্বন্ধে নোতুনভাবে ব্যাখ্যা দেবে, নোতুনভাবে প্রেরণা যোগাবে, আর নোতুনভাবে বোঝাবে যে, বিশ্বে এই সৃষ্টির মাঝখানে, এই সৃষ্ট জগতে তুমি সবচেয়ে বেশী বুদ্ধিমান, সবচেয়ে বেশী চিন্তাশীল প্রাণী–তাই সমস্ত সৃষ্টি জগতের অভিভাবকত্বের মহান দায়িত্ব তোমার ওপর ন্যস্ত হয়েছে৷

এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি অণু–পরমাণু–ত্র্যসর্ সেই এক বিষ্ণুরই অভিব্যক্তি–এই কথা মনে রেখে, এই ভাবাবেগটা চিরজাগ্রত যিনি রাখেন, তাঁরই অস্তিত্ব সার্থক৷ তাই এই ভাবকেন্দ্রের চরম জিনিস–যা মানবতাবাদের মূল ধারাটুকুকে মানবের মধ্যে আটকে না রেখে বিশ্বের চর–চরে ছড়িয়ে দিয়েছে–আমি তারই নাম দিয়েছি নব্যমানবতাবাদ ত্ত্বন্দ্বপ্স–ড়ব্ভপ্প্ত্৷ এই নব্যমানবতাবাদই মানুষের মানবতাবাদকে বিশ্বৈকতাবাদে সর্বজীবে ছড়িয়ে দেবে৷ তাই মানুষের সাধনা হচ্ছে সাবজেকটিব অ্যাপ্রোচ থাকছে–ভেতরের দিকে, পরমপুরুষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ বাইরের দিকে নব্যমানবতাবাদী ভাবাদর্শের দ্বারা মানবতাবাদকে বিশ্ব–ব্রহ্মাণ্ডে ছড়িয়ে বিশ্বৈকতাবাদের সংরচনা তৈরী করে’ চলেছে৷ এইটাই মানুষকে করে’ যেতে হবে৷

নব্যমানবতাবাদের তিনটি সোপান

ভুল পথে মানুষ চলেছে৷ আজ তার পথ–সংশোধনের যে প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে তার একমাত্র পাথেয়, পথের কড়ি হচ্ছে নিও–হিউম্যানিজম্–নব্যমানবতাবাদ৷ এই পথে চলতে গেলে তিনটে সোপান রয়েছে, তিনটে ধাপ রয়েছে–

  • স্পিরিচুয়ালিটি এ্যাজ এ কাল্ট
  • স্পিরিচুয়ালিটি ইন এসেন্স বা স্পিরিট
  • স্পিরিচুয়ালিটি এ্যাজ এ মিশন

স্পিরিচুয়ালিটি এ্যাজ এ কাল্ট ঃ হোয়াট ইজ স্পিরিচুয়াল কাল্ট? ইট ইজ ফিজিকো–সাইকো–স্পিরিচ্ এন্ডেবার (জড়–মানসিক–আধ্যাত্ম্ প্রগতির নিত্যপ্রয়াস)৷ এ মানুষকে যেমন জড় জগতের ভুল–ভ্রান্তিগুলো সংশোধন করবার নির্দেশনা দেবে, তার সঙ্গে সঙ্গে চিন্তা জগতের ত্রুটি শোধরাবার নির্দেশনাও দেবে, আর তার সঙ্গে সঙ্গে এটা ভালোভাবে বুঝিয়ে দেবে যে, অযথা কালক্ষেপ না করে’ স্পিরিচুয়াল গোলের দিকে এগিয়ে চলো–কারণ স্পিরিচুয়াল গোলের দিকে অগ্রগতি তোমাকে প্রকারান্তরে সাইকিক জগতে ও ফিজিক্যাল জগতেও সাহায্য করবে৷ তুমি মানুষকে অধিকতর সাহায্য করতে পারবে৷ একেই আমি বলি– আধ্যাত্মিক নিত্যপ্রয়াস৷

স্পিরিচুয়ালিটি ইন এসেন্স ঃ স্পিরিচুয়াল এসেন্স মানে আধ্যাত্মিকতার সারমর্ম, নিগূূ তত্ত্ব৷ মানুষ জাতিকে সামগ্রিকভাবে দেখলে মানুষের একটা সামগ্রিক মন রয়েছে৷ এই যে কালেকটিব মাইণ্ড – এতেও তো পরিবর্ত্তন আনতে হবে৷ সামূহিক মানব মনেতে নোতুন ধরণের চিন্তার যোগান দিতে হবে৷ এ যাবৎ মানুষ যেভাবে চলেছে তাতে মানুষের উন্নতির গতি খুবই কম হয়েছে৷ সুতরাং একে যদি নোতুন মোড় দেওয়া যায়, উন্নতি আরও ত্বরিত, আরও ত্বরান্বিত হবে৷ দুনিয়ার মানুষের চিন্তার মোড় ঘুরিয়ে দেবে৷ আর ঠিক তেমনি মানুষের যে কালেক্টিব্ স্পিরিট–সেই কালেক্টিব্ স্পিরিট–এ শক্তির যোগান দেবে৷ মানুষ মিলিতভাবে একটি আধ্যাত্মিক গোষ্ঠীতে পরিণত হবে৷ তখন সে অবস্থায় আর কোন স্যুডো–হিউম্যানিষ্টিক ষ্ট্র্যাটেজী কাজ করবে না–ব্রহ্মাস্ত্রের সামনে আর সব অস্ত্র ভোঁতা হয়ে যায়৷

স্পিরিচুয়ালিটি এ্যাজ এ মিশন ঃ যত কিছু সত্তাগত কর্মায়ণ আছে সব উৎসারিত হচ্ছে একটা আস্তিত্বিক চক্রনাভি থেকে৷ আর একটি মানুষের এই এক্জিষ্টেনসিয়াল নিউক্লিয়াস প্রত্যক্ষ যোগ রেখে চলেছে কসমোলজিক্যাল অর্ডার–এর যা নিয়ন্তাবিন্দু–তার সঙ্গে–মহাবিশ্বের দ্যোতনার সঙ্গে, তার চক্রনাভির সঙ্গে৷ চরম তথা পরম পথটা হচ্ছে ইউনিট–এর এক্জিষ্টেনসিয়াল নিউক্লিয়াসকে কসমিক–এর এক্জিষ্টেশনসিয়াল নিউক্লিয়াস–এর সঙ্গে কোইনসাইড করিয়ে দেওয়া–অণুবিন্দুর সঙ্গে মহাবিন্দুকে মিলিয়ে দেওয়া–তার ফলটা হবে–এককত্বের সমস্ত চক্রাধারকে বিশ্বদ্যোতনার মহাচক্রনাভিতে মিশিয়ে দিয়ে এককত্বের অবযন্ত্রণা থেকে মহানিষ্কৃতির সম্প্রাপ্তি, আর সেই অবস্থাতেই আসবে নিও–হিউম্যানিজম–এর চরম প্রদ্যুতি৷ আর সেই নিও–হিউম্যানিষ্টিক ষ্ট্যাটাস কেবল যে মানুষকে বাঁচাবে তা নয়–জীবজগৎ, উদ্ভিদ জগৎ সবাইকেই বাঁচাবে৷ আর সেই যে নব্যমানবতাবাদের পরমাস্থিতি–সুপ্রিম নিও হিউম্যানিষ্টিক স্ট্যাটাস–সেই পরমাস্থিতিতে পৌঁছে যাবার পরে বিশ্বমানব তার অস্তিত্বের চরিতার্থতায় পৌঁছে যাবে–তখন মানুষের পক্ষে অসাধ্য কিছু থাকবে না, মানুষ সব কিছু করতে পারবে৷ আর সেদিন কোনো জিও–সেণ্ঢিমেণ্ঢ ট্যাঁ–ফোঁ করতে পারবে না৷ কোনো সোসিও–সেণ্ঢিমেণ্ঢ মানুষের সমাজে ভেদবুদ্ধির প্রাচীর গড়তে পারবে না৷ আর হিউম্যানিজম্–এর নাম ভাঙ্গিয়ে মানুষের বিশ্বাসের অবমাননা করে’ লাখ লাখ মানুষের ক্ষতি করতেও কোনো ডিমন (দানব) পারবে না৷ আর সেই যে সদাজাগ্রত এনটিটি–যখন তার চরম তথা পরম অবস্থায় পৌঁছে তার এক্জিষ্টেনশিয়াল নিউক্লিয়াসকে সুপ্রীম এক্জিষ্টেনসিয়াল নিউক্লিয়াস–এ মিশিয়ে দেবে, তখন নিও–হিউম্যানিজম্ পাবে তার স্থায়ী ভিত্তিভূমি–আর সেই অবস্থাতেই নিও–হিউম্যানিজম্ এর হবে স্থায়ী প্রতিষ্ঠা–মানুষ চিরদিনের জন্যে মুক্তির আনন্দে প্রতিষ্ঠিত হবে৷ মানুষ সেদিন বলবে, পৃথিবীতে এসেছি কাজ করতে, আর সব মানুষের সর্বজন হিতায়, সর্বজন সুখায়, সর্বজন কল্যাণর্থম্, সবাইকে অন্ধকার থেকে টেনে নিয়ে আলোর দিকে নিয়ে চলতে৷