অস্তিত্বের সকল ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান গতিশীলতার দ্রুতি থাকতেই হবে৷ গতির দ্রুতিই জীবনের মূল পরিচয় বহন করে৷ মানুষের দৈহিক সংরচনা পাঞ্চভৌতিক কিন্তু মানব জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে পরমপুরুষ ত্রব্ভহ্মব্জন্দ্বপ্পন্ ড্রুব্ধন্ব্ধম্ভগ্গ৷ সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমেই আমাদের যেতে হবে৷
প্রাউটের মূলেও রয়েছে এই গতিশীলতা৷ প্রাউট হচ্ছে একটি সামাজিক–র্অর্থনৈতিক দর্শন যা মানবজাতিকে অপূর্ণতা থেকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে৷ পরমপুরুষের দিকে এগিয়ে চলা সকলের পক্ষেই একটা বিরামহীন প্রক্রিয়া৷ এই প্রক্রিয়ার অন্তে তুমি পরমপুরুষের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবে৷
প্রাউট হচ্ছে মানবজাতির সামাজিক–আর্থিক মুক্তির পথ৷ প্রাউটকে চলতে হবে নব্যমানবতাবাদী ভাবধারার পাশাপাশি৷ নব্যমানবতাবাদী ভাবধারা মানুষকে চলার প্রেরণা জোগাবে৷ সেগুলো ঙ্মমানব মনেৰ সৃষ্টি করবে সূক্ষ্মতর আভোগের এষণা আর সেই আভোগ জোগাবার ব্যবস্থা নেবে প্রাউট৷ এর তাৎপর্য হচ্ছে এই যে বহির্জগত ও মানসিক জগতের মধ্যে একটা ভারসাম্য রাখতে হবে ও মানুষকে নিয়ে যেতে হবে আধ্যাত্মিকতার প্রবেশ দ্বারে৷
জাগতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক জগতের মধ্যে একটা ভারসাম্য, একটা সন্তুলন অবশ্যই রাখতে হবে৷ প্রাউট, নব্যমানবতাবাদী ও আধ্যাত্মিক সাধনার মধ্যে একটা ভারসাম্য অতি অবশ্য রাখা দরকার৷ তোমরা অবশ্যই এই তিনটির মধ্যে একটা ভারসাম্য রেখে চলবে৷ প্রাউট হচ্ছে সামাজিক–র্অর্থনৈতিক দিক, নব্যমানবতাবাদ মানসিক–ৰৌদ্ধিক দিক ও আধ্যাত্মিক সাধনা হচ্ছে অধ্যাত্ম–ৰোধির দিক৷ এই তিনের সম্মিলিত পথই হচ্ছে মানুষের মুক্তির পথ৷
আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে পরমপুরুষে পরমাস্থিতি লাভ করা৷ আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে পূর্ণ প্রশান্তি, পূর্ণ আধ্যাত্মিক মিলন৷ একদিকে রয়েছে প্রাউটের সামাজিক–র্অর্থনৈতিক ঙ্মমুক্তিরৰ পথ, অন্যদিকে রয়েছে নব্যমানবতাবাদের মনস্তাত্ত্বিক পথ৷ মধ্যবিন্দুতে রয়েছে আধ্যাত্মিকতার পথ৷ সামাজিক–র্অর্থনৈতিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে অপূর্ণতা৷ প্রাউট ও নব্যমানবতাবাদের ঙ্মপথেৰ আধ্যাত্মিকতার দ্বারপ্রান্ত অতিক্রম করা যায় না৷ আধ্যাত্মিক সাধনার পথেই তোমাকে সেই দ্বার অতিক্রম করে আধ্যাত্মিকতার রাজ্যে প্রবেশ করতে হবে৷
সামাজিক–আর্থিক নীতি কীভাবে মানুষের আধ্যাত্মিক ক্ষুধা মেটাতে সাহায্য করবে? মনে কর, সমাজে উঁচু ও নীচু জাতের মত সামাজিক বৈষম্য আছে৷ আর, তোমাদের এই বৈষম্য দূর করতে হবে, তার মানে সমাজ থেকে জাতপাতের ভিত্তিতে সৃষ্ট সমস্ত বৈষম্য তোমাদের দূর করতে হবে৷ সুতরাং জাতি প্রথাটাকেই উচ্ছেদ করতে হবে৷ হয় সামাজিক–র্অর্থনৈতিক, মানসিক না হয় আধ্যাত্মিক পথেই সমাজের বিভিন্ন প্রকারের বৈষম্য দূরীকরণের ব্যবস্থা থাকে৷ উক্ত জাতিভেদ প্রথার সামাজিক বৈষম্য প্রাউটের অধিক্ষেত্রে পড়ে৷ সুতরাং সমাজের সমস্ত বৈষম্য ও কৃত্রিম বাধা দূর করে এই সামাজিক–আর্থিক ব্যবস্থা ঙ্মর্থাৎ প্রাউটৰ মানুষকে ক্রমবর্ধমান তীব্রগতিতে অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাবার সামর্থ্য জুগিয়ে, তার আধ্যাত্মিক ক্ষুধা মেটাবে৷
নব্যমানবতাবাদ প্রাউটকে সমস্ত বৈষম্য ও কৃত্রিম বিভেদ দূর করতে প্রেরণা ও শক্তি দেবে৷ প্রাউট নব্যমানবতাবাদ থেকে–নব্যমানবিক প্রেরণা থেকে, নব্যমানবীয় ভাবাদর্শ থেকে ও নব্যমানবিক চিন্তাধারা থেকে এগিয়ে চলার প্রেরণা ও প্রত্যয় পাবে৷
নব্যমানবতাবাদ অপ্রাণীন জগতের যথোপযুক্ত ব্যবহারের ও উপযোগিতা গ্রহণের গ্যারান্টি দিচ্ছে৷ তোমরা অবশ্যই যথোপযুক্ত ব্যবহারের গ্যারান্টি দিয়ে অপ্রাণীন জগতের সেবা করবে৷ ইংরেজী ন্প্প্ত্রব্ধন্দ্ব শব্দটির সংস্কৃত প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘চেতন’, নুত্রুন্প্প্ত্রব্ধন্দ্ব–এ ‘জড়’, প্পপ্স্ল্ত্রত্ব্প্তন্দ্ব–এ জঙ্গম, ন্প্পপ্পপ্স্ল্ত্রত্ব্প্তন্দ্ ‘স্থাবর’, ন্দ্বশুব্ভন্প্তন্ত্ব্ব্জন্ সন্তুলন, ন্দ্বশুব্ভন্হ্মপ্সব্দন্ ওজনগত ভারসাম্য ও ত্ব্ত্রপ্ত্ত্রুন্তুন্দ্ব–এর্ গতিগত ভারসাম্য৷ আমাদের সেবার অধিক্ষেত্র শুধুমাত্র চেতন জগতে সীমাৰদ্ধ থাকবে না, তাকে প্রসারিত করতে হবে জড়জগতের বহিঃপ্রান্ত পর্যন্ত৷ এটাই যুগের দাবী৷ নব্যমানবতার দৃষ্টিতে আমাদের সেবার অধিক্ষেত্র সবসময় বেড়েই চলবে, তাকে সদা সম্প্রসারণশীল হতে হবে, ও তাতে চেতন জগৎ ও জড় জগৎ উভয়কেই রাখতে হবে৷
জড়জগতে সুবিচার দিতে হলে আমাদের নীতি কী হবে? প্রথমে আমাদের মানব জগতের ঊর্ধ্বে যেতে হবে, তারপর যেতে হবে প্রাণীজগতের ঊর্ধ্বে, তারপর অপ্রাণীন জগতের ঊর্ধ্বে যেতে হবে৷ উদ্ভিদ কম উন্নত, পশুরা তার থেকে বেশি উন্নত আর মানুষ আরও বেশি উন্নত৷ নব্যমানবতার পথে এরা সবাই আছে–এর অধিক্ষেত্রে প্রাণীন জগৎ ও অপ্রাণীন জগৎ উভয়ই রয়েছে৷
মানুষ জড়জগতের ঠিকমত যত্ন নেয় নি৷ যেমন মানুষ অনেক পাহাড় ও পর্বতের ক্ষতি ও ধ্বংসসাধন করেছে৷ তোমরা অবশ্যই পাহাড়–পর্বত ধ্বংস করবে না৷ নচেৎ বৃষ্টিপাত বিঘ্ণিত হবে৷ তোমরা ভূ–গর্ভস্থ জল ব্যবহার করবে না বা গভীর–গভীর নলকূপ ব্যবহারে উৎসাহ দেবে না কারণ এই ধরনের কূপের ওপর অতিনির্ভরতার ফলে জলের স্তর একদম নীচে নেবে যাবে ও তার ফলে ওপরের মৃত্তিকা স্তর শুষ্ক হয়ে গাছপালার মৃত্যু ঘটাবে৷ বৃষ্টির জল ও নদীর জল ব্যবহার করা সবচাইতে ভাল৷ ভূ–গর্ভস্থিত জল ব্যবহার না করে জলাধারে সঞ্চিত বৃষ্টির জল ব্যবহার করা উচিত৷ দৃষ্টান্ত হিসেবে বলছি, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় গত কয়েক বৎসরে ভূ–গর্ভস্থ জল ১৫ ফুটের মত নীচে নেবে গেছে৷ যদি এরকম চলতে থাকে তবে আগামী ১০০ বৎসরের মধ্যে নদীয়া জেলা মরুভূমি হয়ে যাবে৷ নদীয়া জেলায় অনেক নদী আছে, যেমন ভৈরব, খড়ে, ভাগীরথী ইত্যাদি৷ এই সব নদীর জল খাল ও উপখালের মধ্য দিয়ে নিয়ে গিয়ে তোলা সেচ ও পাম্পের সাহায্যে ব্যবহার করা উচিত৷ নদীয়া, খুলনা ও যশোর জেলায় জলসেচ ব্যবস্থা এরকই হওয়া দরকার৷ অতীতে রাজা, জমিদারেরা জলসঞ্চয় করতে বড় বড় সায়র ও জলাধার তৈরী করতেন৷ গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে এখনও এরকম অনেক জলাধার দেখতে পাওয়া যায়৷ নদীর জল ও ভূতলের উপরস্থ জল ব্যবহার করার যথাসাধ্য চেষ্টা তোমরা করবে৷