পৃথিবীর সর্বত্রই শ্রমিক সমস্যা এক দুরারোগ্য ব্যাধির আকার ধারণ করেছে৷ প্রাচীন কালে বোনাস বলে কিছু ছিল না৷ কিন্তু ক্ষৃহৎ শিল্প দয়া করে কিছু বোনাস দিত৷ কিন্তু বর্তমানে বোনাস পাওয়া শ্রমিকদের একটা অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে৷ লক্ষ্যণীয় এই যে, যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে বেশীর ভাগ জায়গায় সেই দল শ্রমিক আন্দোলন দাবিয়ে রাখে, আর যখন ক্ষমতায় থাকে না, তখন শ্রমিক আন্দোলন সমর্থন করে৷ উদাহরণস্বরূপ কমিউনিষ্ট পার্টি ভারতের স্ট্রাইক সমর্থন করে, আর (তৎকালীন) সোভিয়েত রাশিয়ায় তা দাবিয়ে রাখতো৷
শিল্প পরিচালন ব্যবস্থায় শ্রমিকদের অংশগ্রহণের দাবীকে মেনে নিয়ে, প্রকৃত মুনাফা থেকে কিছুটা শ্রমিকদের লভ্যাংশ দিয়ে, কিছুটা সংরক্ষিত মূলধন ব্জন্দ্বব্দন্দ্বব্জ্লন্দ্ ন্দ্রব্ভুস্তুগ্গ ও কিছুটা প্রতিপূরক নিধি ব্দনুন্সনুন্ধ ন্দ্রব্ভুস্তুগ্গ মূলধন বাড়াবার উদ্দেশ্যে আলাদা করে’ রাখলে সমাধান হতে পারে৷ কিন্তু এটা স্থায়ী সমাধান নয়৷ প্রশ্ণ হচ্ছে প্রকৃত মুনাফার লভ্যাংশ কোন্ নীতিতে নির্দ্ধারিত হবে? বাঙলায় বাটাইদাররা প্রথমে প্রকৃত মুনাফার অর্দ্ধেক, ও পরে দুই তৃতীয়াংশ দাবী করেছিল৷ জগতের পরিবর্ত্তনশীলতার সঙ্গে এটাও পরিবর্তিত হয়ে যাবে৷
সমবায় ব্যবস্থার ব্যাপক রূপায়ণ, ও কৃষি–শিল্প–বাণিজ্যের সামাজিকীকরণের মাধ্যমেই শ্রমিক সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব৷ প্রগ্রহ শিল্প সমূহ ন্সন্দ্বম্ভ নুস্তুব্ভব্দব্ধব্জন্ন্দ্ স্থানীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে, ও তাদেরই মালিকাধীনে থাকবে৷ আর শ্রমিক সম্পর্ক সুন্দর রাখতে বোনাস ও পিস ওয়ার্ক ব্যবস্থা চালু করতে হবে৷ যে যত নিপুনভাবে যত বেশী কাজ করবে সে তত বেশী লভ্যাংশ অর্জন করবে৷
বোনাস ও পিস ওয়ার্ক দুটি পৃথক ব্যবস্থা৷ কোন শিল্পের প্রকৃত মুনাফার একটা নির্দিষ্ট অংশ শ্রমিকদের শ্রমের ভিত্তিতে যখন দেওয়া হয় তখনই তাকে বোনাস বলে৷ পিস ওয়ার্ক ব্যবস্থাটা ঠিক তা নয়৷ একটা বিশেষ কাজের জন্যে যে সময় নির্দ্ধারিত থাকে সেই সময়ের আগেই সেই কাজটা শেষ করে’ ফেলে বাকী সময়ে যদি অতিরিক্ত কাজ করা হয় তাহলে সেই অতিরিক্ত কাজের জন্যে শ্রমিকদের প্রাপ্তিকে পিস ওয়ার্ক পেমেণ্ঢ বলে৷ একটা কাঁচি তৈরী করতে যদি দু ঘণ্ঢা সময় নির্দ্ধারিত থাকে, আর যদি দেড় ঘণ্ঢায় হয়ে যায় তাহলে আধঘণ্ঢার যে অতিরিক্ত কাজ হ’ল তার জন্যে শ্রমিকের প্রাপ্তিই পিস ওয়ার্ক পেমেণ্ঢ৷ শিল্পের প্রকৃত মুনাফা শেয়ার অনুযায়ী সকলকে দেওয়াকেই ডিভিডেণ্ড বলে৷ খুবই শিল্পোন্নত দেশ জাপানে যে শ্রমিক অসন্তোষ প্রায় নেই বললেই চলে তার কারণ হচ্ছে সেখানে বোনাস ও পিস ওয়ার্ক পেমেণ্ঢ ব্যবস্থায় সমস্ত কাজ হয়, আর সমবায় ব্যবস্থার ধরনে সেখানকার শিল্পোদ্যোগ পরিচালিত হয়৷
আমরা যেন ভুলে না যাই যে, একমাত্র শক্ত–পোক্ত সরকারের আমলেই সমবায় ঠিকভাবে কার্যকরী হতে পারে৷ দুর্বল গণতান্ত্রিক ধাঁচায় সমবায় ঠিক ভাবে কার্যকরী হয় না৷ সমবায় শুরু করার আগে মনস্তাত্বিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে৷ প্রাউটে বিচার সমর্থিত ব্যবস্থার অর্থ অল্প সময়ব্যাপী শ্রম, বেশী সময়ব্যাপী বিশ্রাম ও বেশী আরাম৷ শিল্পে সমবায়ের সুরক্ষার জন্যে প্রগ্রহ শিল্প সরকারী পরিচালনাধীন হবে, ও সেখানে কর্মবিরতির ব্ধপ্সপ্সপ্ত স্তুপ্সভ্রুগ্গ কোন পরিবেশ থাকবে না, আর তারই ফলশ্রুতিতে পরবর্ত্তী ধাপে সমবায় পরিচালিত শিল্প কখনই বন্ধ ন্তুপ্তপ্সব্দব্ভব্জন্দ্ হয়ে যাবে না৷ যাইহোক, বর্তমানে যেহেতু সমবায়ের পক্ষে মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ নেই সেহেতু এখনই সমবায় আন্দোলনের নির্ঘোষ সময়োচিত হবে না৷ এখন যদি সমবায় ব্যবস্থা প্রবর্ত্তিত হয় তাহলে তা জাতীয় সম্পদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে৷
প্রশ্ণ করা যেতে পারে যে সরকারের পক্ষে কি বাণিজ্যিক বিষয়ে জড়িয়ে পড়া উচিত হবে? যদি হয়, তাহলে সে সমস্ত ক্ষেত্রে শ্রমিক সমস্যার স্থায়ী সমাধানই বা কী হবে? নীতিগতভাবে এক্ষেত্রে সরকারের জড়িয়ে পড়া উচিত নয়৷ কিন্তু যে সমস্ত ক্ষেত্রে সমবায়ের দ্বারা সে উদ্যোগ চালানো সম্ভব নয় সে ক্ষেত্রে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে৷ তবে এগুলো কেবল বিভিন্ন যন্ত্র সংযুক্তির কারখানার ব্দব্দন্দ্বপ্পত্ব্প্তম্ভ্ ন্দ্র্ত্রন্তুব্ধপ্সব্জন্ন্ মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত৷ এই ধরনের যন্ত্র সংযোজনের কারখানায় যে সমস্ত যন্ত্র লাগবে সেগুলি শিল্প সমবায়ে প্রস্তুত হওয়া বাঞ্ছনীয়৷ সমবায় যদি কোন বিশেষ যন্ত্র তৈরীতে একেবারেই অপারগ হয় তবে কেবলমাত্র সেই যন্ত্র তৈরীতে সরকার উদ্যোগী হতে পারে৷ এই সমস্ত ক্ষেত্রে কোন মুনাফা করা যাবে না, কারণ মুনাফার ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়েই শ্রমিক অসন্তোষের সৃষ্টি হয়৷ উৎপাদনের খরচ এমন ভাবে কমিয়ে আনতে হবে যাতে উদ্যোগটি ‘না লাভ, না ক্ষতি’তে চলে৷ এ সমস্ত ক্ষেত্রে সরকারী উদ্যোগ অবশ্য আর্থিক ও ব্যবসায়িক সমস্ত হিসাব পত্র রাখা অত্যন্ত জরুরী –– যার দ্বারা সব সময় লক্ষ্য রাখা হবে যে উদ্যোগটিতে কোন ক্ষতি হচ্ছে না৷ যদি কোন সময় কোন উদ্যোগ ঘাটতিতে চলে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে শিল্প সমবায়ে রূপান্তরিত করতে হবে৷ (কণিকায় প্রাউট ঃ পঞ্চদশ খণ্ড).