প্রাউটের দৃষ্টিতে শোষণ মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা ও ১০০ শতাংশ কর্মসংস্থান

লেখক
এইচ. এন. মাহাতো

ভারতের রাজনৈতিক অবস্থাটা সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে অহি-নকুল সম্পর্কে দাড়িয়েছে। দুই পক্ষই নিজেদের বক্তব্যে নিজেরা ঠিক বলছেন বলে দাবী করছেন।তাতে দেশের মানুষের স্বার্থ বজায় থাকে কিনা সে চিন্তা করে না। তাদের এই ডামাডোলের রাজনীতি ভারতের ঐতিহ্য বিশ্বের দরবারে কতটা নত করে দিচ্ছে এনিয়ে করোর মাথা ব্যাথা নেই। বর্তমান ভারতের আর্থিক অবস্থায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বিশেষ করে ছাত্র যুব সমাজ আজ দিশেহারা। নোতুন প্রজন্মকে কোন দিকে পরিচালনা করলে দেশের ব্যাষ্টি ও সমষ্টির কল্যান হবে তার জন্য সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ কোন পরিকল্পনা রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নেই। নোতুন প্রজন্মের ছাত্র/ছাত্রা বা যুবক/যুবতীরাই ভারতের ভবিষ্যত। সমাজে একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে -- আজকের শিশু বা যুবক কালকের নাগরিক, আজকের নাগরিক কালকের দেশ নেতা। আজকের নেতাদের বা দেশসেবকদের ঠিকমত সুনাগরিক তৈরী করতে না পারলে দেশটাতো পূজিঁপতি বা মাফিয়াদের কবলে চলে যেত বাধ্য। বিহারে একটি প্রবাদ আছে -- বিয়ের জন্যে মেয়ের বাবা ছেলের বাবাকে জিজ্ঞেস করছেন ছেলে কি করেন, পড়াশুনা কতটা? ছেলের বাবা বলে থাকেন--- হামারা বেটা পলেটিশিয়ান, ইসকেলিয়ে পড়াইকা জরুরি নেই, দাদাগিরিসে বহুত কামাই হোতা হ্যাঁ। তাহলে বলুনতো দেশে আইন সভাতে এরাই ভোটে জিতে দেশটাকে রসাতলে পাঠাচ্ছে। আমরা সাধারণ মানুষ ভোটের আগে শুনে এসেছি কোটি কোটি যুবকের কর্মসংস্থান করে দেবেন, দেশের সম্পদের পূর্ণ সদব্যাবহার করবেন। আর ভোটের পর বলছেন কর্মসংস্থান কী হাতের মোয়া, চাইলেই পাওয়া যাবে! আজ আবার গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া করোনা ভাইরাসের দৌলতে লাখ লাখ ছোট বড়ো কারখানা বন্ধ হওয়ার মুখে। ভিন্ন রাজ্যে যাওয়া কোটির ওপর শ্রমজীবী মানুষের ঘরে ফেরার পালা, তারা আবার ভিন্ন রাজ্যে ফিরে যাবে কী? একদিকে নিজ রাজ্যের শ্রমজীবী মানুষের ভাত কাপড়ের ঠিক নেই, অন্য দিকে ভিন্য রাজ্য থেকে আসা শ্রমজীবীরা---- আগামী দিনে তাদের কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ কী? বিভিন্ন রাজ্যের বা কেন্দ্রীয় সরকার আজ পর্যন্ত কোন পরিকল্পনা সাধারণের মধ্যে উপস্থাপন করতে পারেননি। সারা বিশ্বের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে চলেছে। বর্তমান ভারত সরকার আগে থেকেই নোট বন্দি, জিএসটি, ৫০ টি পরিবারকে ৬৮০০০ কোটি টাকার ওপর ঋণ (কেন্দ্রীয় সরকারের কথায়) ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মকুব করে ভারতকে অর্থনৈতিক ভাবে রসাতলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। এর সমাধান কোথায়? আগামীতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমাধানের পথটা কী? এসবের উত্তর কোন রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ'র হতে নেই। এর কারন বিশেষজ্ঞরা একটাই জানেন আপাততঃ দেশকে রক্ষা করতে টাকা ছাপাও ও গরীবদের হাতে টাকা বা খাদ্য তুলে দেওয়া, কেননা এরা অতীতের দুটি বস্তাপচা অর্থনৈতিক দর্শন যেমন পুঁজিবাদ বা সাম্যবাদের নামে মাক্সবাদের দর্শন যাহা একদিকে মানুষকে শোষণের দাবানলে ভিখিরি করে মানুষের হাড়, মাংস ও মজ্জা খেয়ে চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজিয়ে চলেছে, অপরদিকে সাম্যবাদের নামে ওই ভিখারিকে কিছু পাইয়ে দেওয়ার নাম করে পশু বা বর্ব্বর মানুষে পরিনত করেছে। সারা পৃথিবীতে মানুষকে আজ হীনমন্য ও মেরুদণ্ডহীন করে সমাজের বুকে মানসিক অর্থনৈতিক শোশন চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক শোসন থেকে মানসিক শোষণ মানুষের বেশী ক্ষতি করে চলেছে। আর সাধারণ মানুষ যাতে একযোগে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে না পারে, তারজন্য তাদেরকে মদ সহ বিভিন্ন নেশা বা নানাপ্রকারের পর্ণগ্রাফি, নগ্ন চিত্রের বিনোদনের সম্ভার সামনে রেখে যুব সমাজকে পঙ্গুকরে রেখেছে। তারা বৈপ্লবিক চেতনা হারিয়ে ফেলেছে। যুব সমাজ দিশেহারা। অপর দিকে বিশ্বের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক নানাবিধ বৈষম্য অনাচারের শোষণ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার একটি যুগান্তকারী যুগোপযোগী সামাজিক অর্থনৈতিক দর্শন দিয়েছেন যার নাম " প্রাউট " অর্থাৎ প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব। তিনি বলেছেন আজকের রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো পরিচালক ও পরিকল্পনা শুধু মাত্র দুই ভাবে আপাত দৃষ্টিতে চলে। ১) ব্যাষ্টি পূজিবাদী মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা ২) রাষ্ট্রিয় পুজিবাদী মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ডাঙায় বনেরবাঘ, জলের কুমিরের সঙ্গে বাস করার মত অবস্থা। শ্রীসরকার প্রাউট দর্শনে বলেছেন মানুষের সমাজকে বাঁচাতে হলে প্রগতিশীল সমাজতান্ত্রিক পরিকাঠামোর দরকার। এই চিন্তাধারা অবশ্যই নব্য মানবতাবাদী হতে হবে। মানুষের সমাজ মানেই পৃথিবীর প্রাণীণ-অপ্রাণীন, স্থাবরজঙ্গম, গাছপালা, কীটপতঙ্গ পশুপাখি ও মানুষকে নিয়েই পরম লক্ষের দিকে এগিয়ে চলা। রাষ্ট্রীয় পরিচলালনা অবশ্যই নীতিবাদীদের দ্বারা পরিচালিত হবে। সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক উদ্দেশ্য থাকবে পৃথিবীর সকল মানুষের হীত ও কল্যান। এরজন্য স্থান কাল পাত্র ভেদে প্রয়োগ ভুমিতে অনুমতি ও অনুমোদন সাপেক্ষ পরিবর্তন হতে হবে। সমাজের বস্তুজগৎ ও আধ্যাত্মিকজগতের সাথে সাথে জাগতিক-মানসিক, মানসিক-আধ্যাত্মিক অবস্থাকে সুসন্তুলন রেখে পরিকল্পনা প্রয়োগ করতে হবে। মানুষের সমাজ তৈরী হয়েছে ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, লিপি প্রভৃতির দ্বারা, তার ওপর কোন প্রকার দমন অবদমন বা পীড়ন করা চলবে না। তিনি বলেছেন স্থানীয় নাগরিক যিনি যেখানে থাকবেন সেখানকার ভাষা সংস্কৃতিকে যেমন মেনে নেবেন, তেমনি ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে ওতোপ্রোতো ভাবে যুক্ত হয়ে থাকবেন। অর্থের বা সম্পদের বর্হীস্রোত করতে পারবেন না। স্থানীয় সরকারকে নাগরিকদের প্রথমতঃ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মিনিমাম গ্যারান্টি ব্যবস্থার সাথে সাথে সেই ব্যাষ্টির শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অনুপ্রেরণা মূলক অতিরিক্ত প্রদান করতে হবে। স্থানীয় মানুষের আর্থিক উন্নতি করতে কৃষি ও অকৃষি জমিকে ১০০ শতাংশ কাজে লাগিয়ে জমির রকমভেদে ২/৩ টি প্লটে ভাগ করে সমবায়ের মাধ্যমে, কঠোর অনুশাসনের সাহায্যে, শক্তিশালী নীতি তৈরী করে স্থানীয় মানুষকে কাজে লাগিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করলে স্থানীয় মানুষ বর্হীর মূখি হবেনা। কৃষিকে কেন্দ্রকরে কৃষি ভিত্তিক শিল্প ও কৃষি সহায়ক শিল্পের মাধ্যমে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান ১০০ শতাংশ গ্যরান্টির ব্যবস্থা তৈরী করতে হবে। কৃষি ক্ষেত্রে ও শিল্প ক্ষেত্রে সমন্বয় করে প্রাউটের কি পরিকল্পনা আগামী লিখনিতে উল্লেখ করার ইচ্ছে আছে।