একজন প্রবীন প্রাউটিষ্ট হিসাবে বার বার মনে পড়ে সেই মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের কথা যিনি ওরফে পরমারাধ্য বাবা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী হিসাবে আমাদের অন্তরে চির জাগ্রত হয়ে সদাই বিরাজ করছেন তাঁরই নির্দেশ৷ তিনি ঘরোয়া বৈঠকে বার বার বলতেন এই ভারতে অর্থাৎ অতীতের অখণ্ড ভারতবর্ষে মোটা মুটি ৪৪টি সমাজ বর্তমান৷ যেমন বাঙালী সমাজ, উৎকলি সমাজ, বোড়ো সমাজ, মৈথিলী যমজ, মগহী সমাজ, অসি পঞ্জাবী সমাজ ইত্যাদি৷ এদের চরম অত্যাচার ও শোষণের হাত থেকে বাঁচাতে অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ সমাজ আন্দোলন৷ যা হবে সার্বিক শোষণমুক্তির আন্দোলন৷ এছাড়া এই সমাজগুলিকে বাঁচাবার অন্য কোন পথ নেই! তোমরা প্রাউটিষ্টরা একথা মনে রেখে সমাজের জন্য কাজ করে যাও৷ অত্যন্ত দুঃখের কথা হলো প্রতিটি সমাজ যদি তার ভাষা, কৃষ্টি সংসৃকতিকে না বাঁচাতে পারে তা হলে সে গুলি ধীরে ধীরে ধবংসপ্রাপ্ত হবেই হবে৷ তাই প্রাউট দর্শনে যাঁরা আত্মনিবেদিত প্রাণ সেই প্রাউটিষ্টদের সকলের সর্বাগ্রে মহান দায়িত্ব ও কর্ত্তব্য হলো সেই সেই এলাকার প্রাউটিষ্টদের তাঁদের পাশে থেকে তাঁদের উদ্বুধব করা সেই সমাজ সম্বন্ধে ও তার প্রতিকার করা৷ ভারতবর্ষের ইতিবৃত্তে দেখা যায় বাহির হতে যে সব আক্রমণকারীরা এদেশে এসে শাসন করেছেন সেই সব শাসকগণ জোর করে তাঁদের ভাষা ও সংসৃকতিকে চাপিয়ে দিয়ে তাঁদের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে নিজস্ব সত্ত্বা ভুলিয়ে দিয়ে শেষ করে গেছেন৷ পাঠান, মোগল ও পরবর্তীকালে সমুদ্র পারের ইংরেজ বণিকগণ এ দেশে এসে এদেশের শাসক ও কিছু কিছু দেশীয় ধনী বিশ্বাসঘাতকদের দেশদ্রোহিতার জন্য দেশ পরাধীন হয়৷ আর পরাধীন সমাজগুলি হারিয়ে বসে তাঁদের আপন পরিচিতিকে৷ তাই সেই ৪৪টি সমাজের নরনারী ধীরে ধীরে আপন পরিচিতি ভুলে অনুকরণ প্রিয় বিদেশী শাসকদের এমনকি পরবর্তীকালে দীর্ঘ ৭৬ বছরের কট্টর দেশীয় দলতন্ত্রীদের কুশাসনে তাঁদের কৃত্রিম ভাষার চাপে ভুলতে বসেছে আপন কৃষ্টি সংসৃকতিকে৷ তাই মাথা তুলে দাঁড়াবার ক্ষমতাটাই হারিয়ে ফেলেছে৷ সেই বাঘের বাচ্চার গরুর পালের মধ্যে পড়ে ঘাস খাওয়ার দশায় পড়ে আত্মবিস্তৃত হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
আজ অনেকে মাতৃভাষাটিকেই ভুলে বসেছে৷ এটি অতীব দুঃখের!
মনে রাখতে হবে মাতৃভাষাকে মান্যতা দিয়ে অন্যভাষা যে যতো পারে শিখুক সেটি ভালো কিন্তু মাতৃভাষাকে ‘অস্বীকার করাটা হলো সৃষ্টিরবৈচিত্র্যকেই অসম্মান করা৷ মনে রাখা দরকার বিরাট ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কোন জাতীয় ভাষা নেই, ইংরাজী ও হিন্দি কাজ চালানোর ভাষা কিন্তু রাজ্যের শাসনের ক্ষেত্রে রাজ্যের ভাষা হলো সেই খানের নাগরিকদের নিজস্ব মাতৃভাষা৷ দেখা যাচ্ছে হিন্দিবলয়ে জোর করে হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে জনগণের উপর৷ ইংরাজী আজ অন্তর্জাতিক ভাষা তাই এটিকে শিক্ষা করা দরকার বিশ্ববাসী হিসাবে৷ আর মাতৃভাষাটি শিক্ষা লাভ হলো নিজস্ব সত্ত্বাকে স্বীকার করা৷ তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের সংসৃকত ভাষাকে শিক্ষা করাটা হলো ভারতবর্ষের আত্ম সাধনার ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক৷ ত্রিভাষাসূত্রকে শিক্ষা ব্যবস্থায় মান্যতা দেওয়া হয়েছে৷ শাসনক্ষেত্রে সুবিধার জন্য ও সারা ভারতে যোগাযোগের জন্য ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগের ইংরাজী ভাষাটি আবশ্যিক৷ সারা পৃথিবী হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ একটি বৃহৎ পরিবার৷ আধুনিক যুগে তাই ভারতের সংবিধানে প্রতিটি স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষার উন্নয়নে কেন্দ্র সরকারকে আর্থিক সাহায্য করাটা আইনসম্মত৷ এটাকে অস্বীকার করা হয় ইচ্ছাকৃতভাবে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী সরকারগুলির দ্বারা যেমন কংগ্রেস ও বিজেপি কেন্দ্রের শাসকগণ করে চলেছেন ইচ্ছাকৃতভাবেই৷ এটি অত্যন্ত অন্যায়৷ গণতন্ত্রের নামে এদেশের দলীয় শাসকগণ স্বৈরাচারিতার পরিচয় বার বার দিয়ে চলেছেন৷ আর সমাজগুলিকে ধবংস করছে রাজ্যের ও কেন্দ্রের সরকারগুলি নিছক সাম্প্রদায়িক, কুসংস্কার, আর সংকীর্ণ রাজনৈতিক দলাদলির মাধ্যমে৷ তাই ভারতের ঐক্য সংহতি রক্ষার জন্য প্রাউটিষ্টরা সমাজ আন্দোলনের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন বেশী করে যাতে ভাষা, কৃষ্টি সংসৃকতির ক্ষেত্রে ও আর্থিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমাজগুলি যাতে সকল দিক থেকে স্বনির্ভরশীল হয়ে সার্থক নাগরিক ও বিশ্বৈকতাবোধে উদ্বুধব৷ হয়ে সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলা যায়৷
বাঙালীর একাল ও সেকাল
খগেনচন্দ্র দাস
আজ থেকে শতবর্ষেরও আগে মহারাষ্ট্রের চিত্তপাবন ব্রাহ্মণ, অত্যন্ত উদার মনের, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, রাজনীতিবিদ গোপলকৃষ্ণ গোখলে বাঙালীর প্রশংসা করে বলেছিলেন---‘বাংলা আজ যা ভাবে বাকি ভারত তা ভাবে কাল৷’’ গোখলের এই বাক্যকে প্রশংসার পরিবর্তে তখনকার বাঙালী মনীষীদের মূল্যায়ন বলাই যুক্তিসঙ্গত৷ কারণ সেই সময়টা ছিল বাংলা ও বাঙালীর ইতিহাসের স্বর্ণযুগ৷ ধর্মে, সাহিত্যে, শিক্ষায়, বিজ্ঞানে রেনেশাঁয়, স্বাধীনতা সংগ্রামে, সংসৃকতিতে, এককথায় সমস্ত বিষয়ে বাংলার সূর্য তখন মধ্য আকাশে৷ রাজা রামমোহন রায়, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রামকৃষ্ণ পরমহংস, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঋষি অরবিন্দ, চিত্তরঞ্জন দাশ, কাজী নজরুল ইসলাম, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মেঘনাদ সাহা, জগদীশচন্দ্র বসু--- সুদীর্ঘ সেদিনের সেই বাঙালী মনীষীদের তালিকা৷ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন বাংলার মহিয়সী নারীরাও৷ রাণী রাসমণি, মাতঙ্গিনী হাজরা, ডঃ কাদম্বিনী গাঙ্গুলী, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, তরু দত্ত---আরও অনেকেই৷ আর স্ব স্ব ক্ষেত্রে তাঁদের অবদানও ছিল অবিস্মরণীয়৷
এই সকল মনীষী, মহিয়সীদের চিন্তার ব্যাপ্তি ও গভীরতা প্রত্যক্ষ করেই গোখলে এমন উক্তি করেছিলেন৷ এঁদের প্রত্যেকের চিন্তাজগতের মূল ধারাটি কোনো না কোনভাবে সংযুক্ত ছিল মূলত ভারতীয় অধ্যাত্ম দর্শনের গভীরে৷ বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এক হাতে থাকত পিস্তল অন্য হাতে গীতা৷ ‘‘সে রাম ও নাই, সে অযোধ্যা নাই৷’’ বাংলা ও বাঙালীর বর্তমান অবস্থাকে আনন্দমঠে বর্ণিত মায়ের তিন অবস্থার মধ্যে ‘জগদ্বাত্রী’ ও‘‘হৃতস্বর্বস্বা নগ্ণিকা কালী’’র সঙ্গে তুলনা করতে পারি৷ আর মায়ের তৃতীয় অবস্থা---‘‘সুবর্ণনির্মিত দশভূজা’’ সেটা হবে কি না,তা নির্ভর করছে আমাদের উপর৷ শুনতে যতই কটু লাগুক চিন্তাজগতে বাংলা এখন একরকম বন্ধ্যা৷ বিশেষ করে গত শতাব্দীর ষাটের দশকের পর থেকে বাংলার ভাগ্যাকাশ ক্রমাগত ঘন কালো মেঘে ছেয়ে ফেলেছে৷ বাঙালী মেধার এই দৈন্যদশা কেন?
বাঙালীর চিন্তাজগতে বন্ধ্যাত্ব চলছে, এমন বলার কারণ এই যে, --- যাঁরা মানুষ ও তার সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন ইত্যাদি সম্পর্কে কিছুটা চিন্তাভাবনা করেন তাঁরাও মার্ক্সবাদ বা ব্যষ্টিনির্ভর আদর্শহীন রাজনৈতিক দলের বাইরে কিছুই ভাবতে পারছেন না৷ সেই ‘থোড় বড়ি খাড়া বড়ি থোড়৷’’ অথচ দেখুন ভাগ্যের কি পরিহাস, যে মনীষীগণ বাংলার চিরকালীন গৌরব তাঁদের প্রায় কেউই ওই জার্র্মন দার্শনিক কার্ল মার্ক্সের মতবাদ বা দুর্নীতির পাঁকে ডুবে থাকা ক্ষমতালোলুপ রাজনীতির প্রতি আস্থাশীল ছিলেন না৷ যে রবীন্দ্রনাথের নাম নিতে বাঙালী ভাবে উদ্বেলিত, আত্মহারা হয় তিনিও কিন্তু ওই মতবাদ সম্বন্ধে তাঁর সন্ধিগ্দতা লুকিয়ে রাখেন নি৷ ১৯৩০ সনেই রাশিয়ার চিঠিতে মার্ক্সবাদ সম্পর্কে কবি তাঁর মূল্যায়ন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ব্যক্ত করেছেন৷ যদিও আজকাল বহু বাঙালী বিদ্বজ্জন চিঠিপত্রকে রবীন্দ্ররচনা থেকে পৃথক করে গুরুত্বহীন বলে উল্লেখ করতে চান৷ আমরা দুঃখিত যে তাঁদের মতের সঙ্গে একমত হতে পারছি না৷ মার্ক্সবাদ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের অসাধারণ মূল্যায়ন বিধৃত হয়ে আছে ‘‘রাশিয়ার চিঠি’’তে সেখান থেকে একটি বাক্য উদ্ধৃত করছি--- ‘‘এর মধ্যে (মার্ক্সীয় মতবাদে) যে গলদ নেই তা বলি নে গুরুতর গলদ আছে৷ সেজন্য একদিন এদের বিপদ ঘটবে৷’’ (রাশিয়ার চিঠি, ২০শে সেপ্ঢেম্বর১৯৩০ রবীন্দ্রর নোবেল সুলভ সংসুরণ, দশমখণ্ড পৃষ্ঠা-৫৫৬) কবির আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত করে মার্ক্সবাদকে সঠিকভাবে পাঠ করে থাকি, আমি নিশ্চিতভাবে বলছি আগামীদিনে মার্ক্সীয় সমাজতন্ত্রের হাত থেকে মুক্তির জন্যে রাশিয়ার মানুষকে আর একটা বিপ্লব করতে হবে৷’’
এই চিন্তাবিদগণ যখন বাঙালিকে এসব সতর্কবার্তা দিচ্ছেন মার্ক্সবাদের সূর্য তখন মধ্য গগনে৷ যাকে ভারতে মার্ক্সবাদের পিতৃব্যস্বরূপ বললেও অত্যুক্তি হয় আজকের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যমেধাজীবী বাঙালী বেশি প্রাজ্ঞ, একথা কি বিশ্বাসযোগ্য?
এঁদের গভীর অন্তর্দৃষ্টিসঞ্জাত ভাবনাগুলো কতটা সঠিক ছিল তার প্রামাণ্য দলিল প্রকাশ পেয়েছে ১৯৯৭ সনে ফ্রান্স থেকে প্রকাশিত একটি বইতে৷ যার ইংরেজি অনুবাদ The black book of communism crimes terror repression’ লেখক ছয়জন বিখ্যাত ফরাসী ইতিহাসবিদ৷ সাড়ে আটশ পৃষ্ঠার এই ইতিহাস গ্রন্থের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীব্যাপী কমিউনিষ্ট সন্ত্রাসের দলিল৷ চতুর্থ পৃষ্ঠার একটি তথ্যই মার্ক্সবাদীদের নৃশংসতার প্রমাণের জন্য যথেষ্ট৷ যেখানে বলা হয়েছে যে,‘একদা পৃথিবীর কমিউনিষ্ট শাসিত দেশগুলিতেও আন্তর্জাতিক কমিউনিষ্ট আন্দোলনের জন্য, আনুমানিক দশ কোটি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে৷’
আর বাঙালির জন্য ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গের আনাচে কানাচে কান পাতলে আজও চৌত্রিশ বছরের বাম শাসনে ভয়াবহ নৃশংসতার আওয়াজ শোণা যাবে৷ মান্দাই, বিজনসেতু, সাঁইবাড়ি, নন্দীগ্রাম, নানুর, মরিচঝাঁপি বকটুই এর ঘা আজও দগদগে৷ বাঙালির আত্মবিস্তৃতির ব্যামো এতটাই ভয়ঙ্কর যে বাঙালী আবারও মরিয়া হয়ে উঠেছে বামপন্থী ও তাদের সহযোগীদের ক্ষমতায় বসাতে৷ না এসব দায় সাধারণ বাঙালী জনগণের নয়৷ কারণ তারা কংগ্রেস-সিপিএম-তৃণমূল-বিজেপি, আবার কংগ্রেস---জলচক্রের মত রাজনীতির এই ঘূর্ণাবর্তে আবর্তিতই হতে থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক৷ দায়টা বিদ্বজ্জনেদের,যাঁরা জনগণকে রাস্তা দেখাবেন৷
এ বিষয়ে জার্র্মনির বিবেক বলে খ্যাত দার্শনিক কার্ল থিওডর জ্যাসপারস (১৮৮৩-১৯৬৯) বলেছিলেন ---‘জনতা সাধারণত অল্প বুদ্ধিই হয় আর সমসময়ের গতানুগতিকতাকেই আটকে থাকে৷’ এমতাবস্থায় বিদ্বজ্জনের কাজ সেই জনগণকে পথ দেখানো৷ প্রয়োজনে নতুন আদর্শের সন্ধান দেওয়া৷ টিভির পর্র্দয় ঘন্টার পর ঘন্টা নীতি বর্জিত, আদর্শহীন, ব্যষ্টিকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল ও তাদের দুর্নীতিপরায়ন নেতা-নেত্রীর সমালোচনা করা,প্রকৃত বিদ্বজ্জনের একমাত্র কাজ কখনোই হতে পারে না৷
অধ্যাপক অভ্র ঘোষ তার ‘‘গাঁধী-দৃষ্টির বিচিত্রতায় বইটিতে একটি অত্যন্ত মূল্যবান কথা বলেছেন---‘‘মানবসমাজ কোন্ আদর্শ বা নীতি অবলম্বন করে মুক্তির স্বর্গে পৌঁছতে পারবে, আমরা কেউ তা জানিনা৷ আদৌ জানা সম্ভব কি না তাও জানি না৷ (উক্ত গ্রন্থ পৃঃ-১৫৮) অর্থাৎ শুধু বাংলা বা বাঙালী নয় মানবসমাজকে একটা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে একটা আদর্শ বা আর্থসামাজিক দর্শনের প্রয়োজন অনস্বীকার্য৷
আর এই ভাবনা থেকেই তো বাংলার মানুষ একদিন আঁকড়ে ধরেছিল মার্ক্সবাদকে কিন্তু তার স্বরূপ প্রত্যক্ষ করে পৃথিবী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে৷ এভাবে নেতি নেতি করে এগিয়ে গিয়েই তো মানুষ একদিন তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে৷ আদর্শ ছাড়া ক্ষমতালোলুপ প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনীতির জন্যই রাজনীতি করে মানবসমাজের পক্ষে লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব৷
এই লক্ষ্যে পৌঁছাবার উদ্দেশ্য নিয়েই ১৯৬২ সনে বাঙালী দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী নামেই তিনি সমধিক পরিচিত) পঁচাশিটি সংস্কৃত সূত্র দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন ৪৬ পৃষ্ঠার একটি দর্শন গ্রন্থ নাম---‘আনন্দ সূত্রম৷’ এই দর্শন গ্রন্থের শেষ ষোলটি সূত্রে ‘প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব’’ নামে রয়েছে একটি আর্থসামাজিক তত্ত্ব৷ রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, মহাত্মা গাঁধী, সাম্প্রতিককালে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বা অভিজিত বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়রা দারিদ্র্যদূরীকরণের যে সব রাস্তা বলেছেন সেই লক্ষ্যে পৌঁছুবার সুনির্দিষ্ট পথের সন্ধান রয়েছে শ্রীসরকারের দর্শনে৷ বাঙালী বিদ্বজ্জন যেখানে দেখিবে ছাই’,এর মত এই দর্শন গ্রন্থের কয়েকটি পাতা একটু উলটে পাল্টে দেখার কষ্ট কি করতে পারেন না? কী জানি বাঙালী তথা মানবজাতির উদ্ধারের কোন সঙ্কেত এরমধ্যে তাঁরা পেলেও পেতে পারেন! আর যদি তেমন কোন দিগদর্শন বা মুক্তো ওখানে না থাকে তবে কুলো সমেত ছাই ফেলে দিতে কতক্ষণ!
একথা বিস্মৃত হলে চলবে না যে, গোখলে যাঁদের চিন্তার সঙ্গে পরিচিত হয়ে শংসাপত্রটি দিয়েছিলেন সেইসব মহান বাঙালীর হাতে থাকত বেদ উপনিষদ বা গীতা আজকের বুদ্ধিজীবীদের মত কার্লমার্ক্সের জড়বাদী দর্শন, কথাঞ্জলি বা কবিতাবিতান নয়!
- Log in to post comments