প্রাউটিষ্ট সর্ব  সমাজই পারে শোষনমুক্ত সমাজ গড়তে

লেখক
প্রভাত খাঁ

বহু ভাষাভাষীর দেশ ভারতবর্ষে যে একটি বৃহত্তম পরিবার তৈরী হয়েছিল সুদূর অতীত কাল থেকে তাতে বৈচিত্র্যময় ভারতবর্ষে এক এক করে ৪৪টি সমাজ এর সৃষ্টি হয়৷ সমগ্র উত্তর,পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণে আর বিরাট মধ্য ভাগে ঐক্য ছিল একদিকে তা হলো সকলেই সনাতন ধর্মের অনুগামী ছিল৷ পরে এই সনাতন ধর্মের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে যে সকল ধর্ম মহাবেত্তা এসেছিলেন তাঁরা তাঁদের ঐ সনাতন মত ভিত্তিক মতদান করে অনেক ধর্মমতের প্রবর্তন করেন৷ তাই  ভারতে পরবর্ত্তীকালে বিভিন্ন ধর্মমতের সৃষ্টি হয়৷ কিন্তু তাঁরা এ বিষয়ে কোন কট্টর বিরোধিতা না করে আসমুদ্র হিমাচল বিভিন্ন ধর্মমতের ভারতীয়গণ সারা ভারতবর্ষে প্রায় মিলে মিশেই থাকে৷ তাঁরা বিভিন্ন ধর্মমতের হলেও আন্তরিকতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েই বাস করতেন৷ কিন্তু গত দশম শতাব্দী থেকে অদ্যাবধি যে সমস্ত বিদেশীরা বিভিন্ন সময়ে এসে এদেশ আক্রমণ করে রাজত্ব স্থাপন করে তারা তাদের ধর্মমতকে জোর করে এদেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দেয় শাসক হিসাবে ও এদেশে বসবাস করতে  থাকে৷ সেই থেকে ভারতবাসীরা  ইংরেজ আমলের পত্তনের সময় পর্যন্ত এক নাগাড়ে ধর্মান্তরিত হয়ে শোষণ ও শাসনের শিকার হয়ে চলেছে৷ ফলে ভারতবর্ষ বহু ধর্মমতের ভাষাভাষীর দেশ হয়ে যায়৷ কিন্তু মূলত, তারা সেই ভারতবর্ষের মাটিরই সন্তান হিসাবে স্বীকৃতি পায়৷

দেশভাগ হয়ে যাওয়াতে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে আজ এই ভারত যুক্তরাষ্ট্র কঠিন সমস্যারমধ্য দিয়ে চলছে৷ এই ভারত তথা বিশ্বের সমগ্র মানুষের  সার্বিক কল্যাণের জন্যে জীবজন্তু গাছপালার মঙ্গলের জন্যে, অন্যান্যদের সার্বিক মুক্তির জন্য তারকব্রহ্ম অবতীর্ণ হন এই ভারতবর্ষে পরমারাধ্য ৰাৰা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী ওরফে মহান দার্শনিক প্রভাতরঞ্জন সরকার৷

শ্রী সরকারের প্রাউট দর্শন (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব) হলো আর্থিক তথা  সামাজিক অধ্যাত্মভিত্তিক দর্শন যেটি সর্বরোগ হর বিশল্যকরণী হিসাবেই পরিচিত৷

 এই দর্শনটি সমগ্র বিশ্বের মানব সমাজের সার্বিক কল্যাণের কথা ভেবেই প্রবর্তন করেছেন৷ তাই অধ্যাত্মবাদ ভিত্তিক বিশ্বৈকতাবোধের ভিত্তিতে নব্যমানবতাবাদী দর্শন বাস্তবায়নের জন্যই তাঁর আবির্ভাব৷ সারা বিশ্বে প্রায় ২৫০টি সমাজ  আছে৷ তার মধ্যে ভারতবর্ষে আছে ৪৪ সমাজ, সেইগুলিকে সঞ্জিবিত করে তোলার জন্য এক বিরাট কর্ম যজ্ঞের আয়োজন করেন৷ তারই নাম প্রাউটিষ্ট সর্ব সমাজ সমিতি  পি.এস.এস৷ এই সৃষ্টির বুকে মানুষই হলো--- সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম জীব৷  মানুষই উপলব্ধি করতে পারে সেই বিশ্বস্রষ্ঠাকে৷ তাঁর দৃষ্টিতে মানুষ হলো আধ্যাত্মিক প্রাণী৷ পরমসত্ত্বাকে জানতে মানুষের আগমণ এই পৃথিবীতে৷ তাই মহান গীতায় বলা হয়েছে আত্মানাং বিদ্ধি৷ এর অর্থ হলো নিজেকে জান৷ শ্রী সরকারের মতে--- মানব সমাজ এক ও অবিভাজ্য, আর সকল মানুষের ধর্ম এক কারণ সেই এককে জানাই হলো জীবনের চরম লক্ষ্য৷ তিনি অর্থাৎ শ্রী সরকার ওরফে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী আনন্দমার্গের প্রবক্তা পরমারাধ্য বাবা সারা পৃথিবীতে তাঁর জীবনে ১৮২টি দেশে আধ্যাত্মিক সমাজ সেবামূলক সংঘটন আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘকে প্রতিষ্ঠা করেছেন৷

স্মরণে থাকে ইউ.এন.ও এর সদস্য সংখ্যা ১৮৪ টি দেশ৷ আর এই দর্শনে অর্থাৎ আনন্দমার্গ দর্শনেই প্রাউট (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্বকে) অন্তর্ভুক্ত৷ তিনি বহুজনের হিতের জন্য ও বহুজনের সুখের জন্য প্রাউট দর্শনকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন৷ তাই প্রাউটিষ্টরা সকলেই আনন্দমার্গের আধ্যাত্মিক সাধক ও জগৎকল্যাণে প্রাউট দর্শনের সেবক স্বরূপ৷ যদিও মানুষের গায়ের রং সাদা, কালো, কিছুটা হলদে কিন্তু রক্ত সবার একই আর একই পৃথিবীর বুকে লালিত, চন্দ্র সূর্য বাতাস সবাইকে সেবা দেয়৷ মানুষের লক্ষ্যও হলো সামাজিক প্রাণী হিসাবে পুত্র কন্যা, স্ত্রী, বাবা মাকে নিয়ে সংসার করা৷ আর বর্তমানযুগে সারা পৃথিবীটা হয়ে গেছে এক বৃহৎ পরিবার৷ বিজ্ঞানের উন্নতিতে মানুষ মানুষের বড়ো কাছাকাছি এসে গেছে আর আত্মীয়তার বন্ধনেও আবদ্ধ হচ্ছে৷ তাই এই পৃথিবী গ্রহে মানুষের সমাজটি হয়ে দাঁড়িয়েছে যেন এক বৃহৎ পরিবার৷ তাই তাদের এগুতে হবে সামনের দিকে সেই--- সংগচ্ছধবং মন্ত্র উচ্চারণ করে৷ তাই আজ আর কুসংস্কার জাত,পাত, রঙয়ের ‘কোন ভেদাভেদ মানুষ মানেই না৷’ তাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে সবাইকে নিয়ে সামনের দিকে এগুতেই হবে৷ নচেৎ যারা এর বিরুদ্ধে যাবে তাদের স্থান সমাজে  হবে না, তারা চরমভাবেই ধিক্কৃত ও সমালোচিতই হবে৷ এগিয়ে চলাই হলো জীবন ধর্ম৷ 

তাই মুখে আদর্শের কথা বলে আর মানুষকে যারা ঠকায় তারা চরম ধাপ্পাবাজ ও বেইমান৷ আমাদের লক্ষ্যই হলো সার্বিকভাবে সকল সমাজের প্রতিটি প্রাণীন অপ্রাণীন সত্তার কল্যাণ করা৷ এই উদ্দেশ্যেই মহান দার্শনিক শ্রীসরকার ভারতের মাটিতে ৪৪টি সমাজের নাম উল্লেখ করেছেন৷ এই সমাজগুলি সারা ভারতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে৷ পাঠকদের ও প্রাউটিষ্টদের জানার জন্য সেগুলির নাম ও স্থান উল্লেখ করার চেষ্টা করছি এই আলোচনায়৷

সকলকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই এই বলে যে মহান দার্শনিক আধ্যাত্মিক পুরুষ ও কর্মযোগী পরমারাধ্য প্রভাতরঞ্জন সরকার ওরফে শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীর আবির্ভাবই হলো এই অত্যাধুনিক যুগে৷ বিশ্বের প্রত্যেকটি মানুষ জীবজন্তু গাছপালা ও অন্যান্য সৃষ্ট বস্তুর কল্যাণেই তাঁর মহান কর্ম যজ্ঞ, কারণ বর্তমান জগতে বেশী করে হচ্ছে বৌদ্ধিক, মানসিক,দৈহিক ও আধ্যাত্মিক শোষণ ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় জড়চিন্তাধারায়৷ তাই মানবতাই আজ অস্বীকৃত ও ধূল্যবলুন্ঠিত৷ এই কারণেই দরকার সৎনীতিবাদী ব্যষ্টিদের যাঁরা শোষিতদের সচেতন ও জাগ্রত করে তুলবে৷ (ক্রমশ)