বহু ভাষাভাষীর দেশ ভারতবর্ষে যে একটি বৃহত্তম পরিবার তৈরী হয়েছিল সুদূর অতীত কাল থেকে তাতে বৈচিত্র্যময় ভারতবর্ষে এক এক করে ৪৪টি সমাজ এর সৃষ্টি হয়৷ সমগ্র উত্তর,পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণে আর বিরাট মধ্য ভাগে ঐক্য ছিল একদিকে তা হলো সকলেই সনাতন ধর্মের অনুগামী ছিল৷ পরে এই সনাতন ধর্মের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে যে সকল ধর্ম মহাবেত্তা এসেছিলেন তাঁরা তাঁদের ঐ সনাতন মত ভিত্তিক মতদান করে অনেক ধর্মমতের প্রবর্তন করেন৷ তাই ভারতে পরবর্ত্তীকালে বিভিন্ন ধর্মমতের সৃষ্টি হয়৷ কিন্তু তাঁরা এ বিষয়ে কোন কট্টর বিরোধিতা না করে আসমুদ্র হিমাচল বিভিন্ন ধর্মমতের ভারতীয়গণ সারা ভারতবর্ষে প্রায় মিলে মিশেই থাকে৷ তাঁরা বিভিন্ন ধর্মমতের হলেও আন্তরিকতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েই বাস করতেন৷ কিন্তু গত দশম শতাব্দী থেকে অদ্যাবধি যে সমস্ত বিদেশীরা বিভিন্ন সময়ে এসে এদেশ আক্রমণ করে রাজত্ব স্থাপন করে তারা তাদের ধর্মমতকে জোর করে এদেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দেয় শাসক হিসাবে ও এদেশে বসবাস করতে থাকে৷ সেই থেকে ভারতবাসীরা ইংরেজ আমলের পত্তনের সময় পর্যন্ত এক নাগাড়ে ধর্মান্তরিত হয়ে শোষণ ও শাসনের শিকার হয়ে চলেছে৷ ফলে ভারতবর্ষ বহু ধর্মমতের ভাষাভাষীর দেশ হয়ে যায়৷ কিন্তু মূলত, তারা সেই ভারতবর্ষের মাটিরই সন্তান হিসাবে স্বীকৃতি পায়৷
দেশভাগ হয়ে যাওয়াতে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে আজ এই ভারত যুক্তরাষ্ট্র কঠিন সমস্যারমধ্য দিয়ে চলছে৷ এই ভারত তথা বিশ্বের সমগ্র মানুষের সার্বিক কল্যাণের জন্যে জীবজন্তু গাছপালার মঙ্গলের জন্যে, অন্যান্যদের সার্বিক মুক্তির জন্য তারকব্রহ্ম অবতীর্ণ হন এই ভারতবর্ষে পরমারাধ্য ৰাৰা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী ওরফে মহান দার্শনিক প্রভাতরঞ্জন সরকার৷
শ্রী সরকারের প্রাউট দর্শন (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব) হলো আর্থিক তথা সামাজিক অধ্যাত্মভিত্তিক দর্শন যেটি সর্বরোগ হর বিশল্যকরণী হিসাবেই পরিচিত৷
এই দর্শনটি সমগ্র বিশ্বের মানব সমাজের সার্বিক কল্যাণের কথা ভেবেই প্রবর্তন করেছেন৷ তাই অধ্যাত্মবাদ ভিত্তিক বিশ্বৈকতাবোধের ভিত্তিতে নব্যমানবতাবাদী দর্শন বাস্তবায়নের জন্যই তাঁর আবির্ভাব৷ সারা বিশ্বে প্রায় ২৫০টি সমাজ আছে৷ তার মধ্যে ভারতবর্ষে আছে ৪৪ সমাজ, সেইগুলিকে সঞ্জিবিত করে তোলার জন্য এক বিরাট কর্ম যজ্ঞের আয়োজন করেন৷ তারই নাম প্রাউটিষ্ট সর্ব সমাজ সমিতি পি.এস.এস৷ এই সৃষ্টির বুকে মানুষই হলো--- সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম জীব৷ মানুষই উপলব্ধি করতে পারে সেই বিশ্বস্রষ্ঠাকে৷ তাঁর দৃষ্টিতে মানুষ হলো আধ্যাত্মিক প্রাণী৷ পরমসত্ত্বাকে জানতে মানুষের আগমণ এই পৃথিবীতে৷ তাই মহান গীতায় বলা হয়েছে আত্মানাং বিদ্ধি৷ এর অর্থ হলো নিজেকে জান৷ শ্রী সরকারের মতে--- মানব সমাজ এক ও অবিভাজ্য, আর সকল মানুষের ধর্ম এক কারণ সেই এককে জানাই হলো জীবনের চরম লক্ষ্য৷ তিনি অর্থাৎ শ্রী সরকার ওরফে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী আনন্দমার্গের প্রবক্তা পরমারাধ্য বাবা সারা পৃথিবীতে তাঁর জীবনে ১৮২টি দেশে আধ্যাত্মিক সমাজ সেবামূলক সংঘটন আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘকে প্রতিষ্ঠা করেছেন৷
স্মরণে থাকে ইউ.এন.ও এর সদস্য সংখ্যা ১৮৪ টি দেশ৷ আর এই দর্শনে অর্থাৎ আনন্দমার্গ দর্শনেই প্রাউট (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্বকে) অন্তর্ভুক্ত৷ তিনি বহুজনের হিতের জন্য ও বহুজনের সুখের জন্য প্রাউট দর্শনকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন৷ তাই প্রাউটিষ্টরা সকলেই আনন্দমার্গের আধ্যাত্মিক সাধক ও জগৎকল্যাণে প্রাউট দর্শনের সেবক স্বরূপ৷ যদিও মানুষের গায়ের রং সাদা, কালো, কিছুটা হলদে কিন্তু রক্ত সবার একই আর একই পৃথিবীর বুকে লালিত, চন্দ্র সূর্য বাতাস সবাইকে সেবা দেয়৷ মানুষের লক্ষ্যও হলো সামাজিক প্রাণী হিসাবে পুত্র কন্যা, স্ত্রী, বাবা মাকে নিয়ে সংসার করা৷ আর বর্তমানযুগে সারা পৃথিবীটা হয়ে গেছে এক বৃহৎ পরিবার৷ বিজ্ঞানের উন্নতিতে মানুষ মানুষের বড়ো কাছাকাছি এসে গেছে আর আত্মীয়তার বন্ধনেও আবদ্ধ হচ্ছে৷ তাই এই পৃথিবী গ্রহে মানুষের সমাজটি হয়ে দাঁড়িয়েছে যেন এক বৃহৎ পরিবার৷ তাই তাদের এগুতে হবে সামনের দিকে সেই--- সংগচ্ছধবং মন্ত্র উচ্চারণ করে৷ তাই আজ আর কুসংস্কার জাত,পাত, রঙয়ের ‘কোন ভেদাভেদ মানুষ মানেই না৷’ তাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে সবাইকে নিয়ে সামনের দিকে এগুতেই হবে৷ নচেৎ যারা এর বিরুদ্ধে যাবে তাদের স্থান সমাজে হবে না, তারা চরমভাবেই ধিক্কৃত ও সমালোচিতই হবে৷ এগিয়ে চলাই হলো জীবন ধর্ম৷
তাই মুখে আদর্শের কথা বলে আর মানুষকে যারা ঠকায় তারা চরম ধাপ্পাবাজ ও বেইমান৷ আমাদের লক্ষ্যই হলো সার্বিকভাবে সকল সমাজের প্রতিটি প্রাণীন অপ্রাণীন সত্তার কল্যাণ করা৷ এই উদ্দেশ্যেই মহান দার্শনিক শ্রীসরকার ভারতের মাটিতে ৪৪টি সমাজের নাম উল্লেখ করেছেন৷ এই সমাজগুলি সারা ভারতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে৷ পাঠকদের ও প্রাউটিষ্টদের জানার জন্য সেগুলির নাম ও স্থান উল্লেখ করার চেষ্টা করছি এই আলোচনায়৷
সকলকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই এই বলে যে মহান দার্শনিক আধ্যাত্মিক পুরুষ ও কর্মযোগী পরমারাধ্য প্রভাতরঞ্জন সরকার ওরফে শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীর আবির্ভাবই হলো এই অত্যাধুনিক যুগে৷ বিশ্বের প্রত্যেকটি মানুষ জীবজন্তু গাছপালা ও অন্যান্য সৃষ্ট বস্তুর কল্যাণেই তাঁর মহান কর্ম যজ্ঞ, কারণ বর্তমান জগতে বেশী করে হচ্ছে বৌদ্ধিক, মানসিক,দৈহিক ও আধ্যাত্মিক শোষণ ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় জড়চিন্তাধারায়৷ তাই মানবতাই আজ অস্বীকৃত ও ধূল্যবলুন্ঠিত৷ এই কারণেই দরকার সৎনীতিবাদী ব্যষ্টিদের যাঁরা শোষিতদের সচেতন ও জাগ্রত করে তুলবে৷ (ক্রমশ)
- Log in to post comments