য একো জালবানীশত ঈশনীভিঃ
সর্বালঁলোকানীশত ঈশনীভিঃ৷
য এবৈক উদ্ভবে সম্ভবে চ
য এতদ্বিদুরমৃতাস্তে ভবন্তি৷৷*
এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি একজন বিরাট জাদুগর৷ তিনি তাঁর পরম ঐন্দ্রজালিক শক্তিবলে বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, তাকে নিয়ন্ত্রণও করছেন তিনিই৷ সৃষ্টিতে এমন কেউ নেই, এমন কিছুই নেই যাকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না বা করেন না৷ সত্যি বলতে কি, এই বিশ্ব চরাচরের প্রতিটি সত্তাই তাঁকে মেনে চলে, তিনি তাঁর প্রাকৃত শক্তির মাধ্যমে সবাইকার ওপর, সব কিছুর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখেন৷
প্রকৃতি বা শক্তি হ’ল তাঁর আশ্রিত শক্তি–‘শক্তিঃ সা শিবস্য শক্তিঃ’৷ কেবল পরমপুরুষের ইচ্ছা অনুসারেই তাঁকে কাজ করতে হয়৷ এ ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই৷ এই পরমা শক্তির দ্বারাই তিনি বিশ্বের সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করেন৷ তাই যেহেতু তিনি সব কিছুর চরম ও পরম নিয়ন্ত্রক তাই তাঁকে বলা হয় ঈশ্বর৷
জাদুগর যখন কোন কিছু তৈরী করেন, দর্শকরা ভাবে–বাপ রে, কী অদ্ভুত জাদু৷ কী অপূর্ব জাদুজাল কিন্তু জাদুগর তো জানে এই জাদুর পেছনে রহস্যটা কী৷ বাজীকর জানে, দর্শকদের কেউ যদি ভোজবিদ্যার ভেতরকার রহস্যটা জেনে যায় বা জানবার সুযোগ পেয়ে যায় তাহলে সেই দর্শক তো জাদুবিদ্যায় ভুলবে না বা সম্মোহিত হবে না৷ যতক্ষণ এই সম্মোহনটা থাকছে কেবল ততক্ষণই জাদুর জগৎটাকে সে মুগ্ধ হয়ে দেখে৷ কিন্তু তার পরে সেই মুগ্ধ ভাবটা থাকে না৷ তখন সে বলবে –না, না আমি আর ম্যাজিক দেখতে চাই না৷ আমি ম্যাজিসিয়ানের দলের সদস্য হতে চাই, আমি আর দর্শকের গ্যালারিতে বসে থাকতে চাই না৷
জাদুগর চায়, মানুষ দর্শক হিসেবে জাদুর খেলা দেখতে থাকুক কিন্তু যে সব দর্শক বা ৰুদ্ধিমান মানুষ জাদুগরের দলে ভিড়ে যেতে চায়, তারা কী করবে? –না, তাদের জাদুগরের প্রতি ভক্তি–ভালবাসা বেড়ে যাবে, তার দলে ভিড়ে যাবে৷ আর যেই জাদুগরের দলের সদস্য হয়ে যাবে তখনই জাদুবিদ্যার গোপন রহস্যগুলো তারা একের পর এক জেনে ফেলবে৷
“য এবৈক উদ্ভবে সম্ভবে চ”৷ এই যে জাদুর খেলা, এই খেলার উৎস তো জাদুগরের মনের ভেতরেই৷ তিনি নিজেকেই নানান জাদু কৌশলের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করছেন৷ আর সেই পরম জাদুগরই জাদু–সৃষ্ট জগতের সব কিছুকেই পালন করে চলেছেন, পুষ্ট করে চলেছেন৷ শেষ পর্যন্ত ওই জাদুর জিনিসগুলো জাদুগরের মধ্যেই মিলিয়ে যাবে৷
“য এতদ্বিদুরমৃতাস্তে ভবন্তি”৷ যে ভক্তিমান সাধক সেই পরম ঐন্দ্রজালিকের নিৰিড় সান্নিধ্যে এসেছেন, কেবল সেই ৰুদ্ধিমান সাধকই ভক্তিবলে অমৃতত্ব লাভ করেন৷
অমৃতত্ব জিনিসটা কী? এই বিশ্বের সব কিছুই পরিবর্ত্তনশীল৷ যা এসেছে কালক্রমে একদিন তা ক্রমলয়ের পথ ধরে এগিয়ে চলবে৷ কিন্তু যা পরম সত্য তা অপরিবর্তনীয়, তা বিকাররহিত৷ তাই যে মানুষ বা ৰুদ্ধিমান সাধক পরমপুরুষের আশ্রয় নেয় সে অমৃতত্ব লাভ করে৷ তাই শাস্ত্রে পরমপুরুষকে বলা হয় ‘মৃত্যোর্মৃত্যুঃ’৷
এই ‘মৃত্যোর্মৃত্যুঃ’ শব্দটির দু’টো মানে হয়৷ প্রথমটি হ’ল, যারা পরমপুরুষকে উপলব্ধি করে তাদের আর পুনর্জন্ম হয় না৷ তাদের মৃত্যু হ’ল মহামৃত্যু৷ দ্বিতীয় মানেটি হ’ল–তিনি মৃত্যুরও মৃত্যু স্বরূপ অর্থাৎ যার কাছে এসে মৃত্যু থেমে যায় অর্থাৎ তিনি মৃত্যুরও মৃত্যু ঘটাতে পারেন৷ তাই বলা হয়েছে, /অমৃতাস্তে ভবন্তি*–যারা পরমপুরুষকে জেনেছে তারা অমৃতত্ব লাভ করেছে৷
(পটনা, ১৫ই সেপ্ঢেম্বর ১৯৭৮)