গোপাল ঃ পরমপুরুষের একটি নাম হ’ল গোপাল৷ সংস্কৃতে ‘গো’ অর্থে কর্মেন্দ্রিয় ও জ্ঞানেন্দ্রিয় উভয়কেই বোঝায়, আর ‘পাল’ মানে যিনি পালন করেন৷
ধর, একটা মানুষ৷ এখন তার কেবল শরীরটাই রয়েছে, মন নেই আত্মা নেই কিংবা চিতিশক্তি বা ভূমাচৈতন্যও অবর্ত্তমান ৷ তাহলে সেই মানুষটা সমস্ত ইন্দ্রিয় থাকা সত্ত্বেও কাজ করতে পারবে না৷ গোপাল মানে হ’ল জীবাত্মা.....অণুচৈতন্য৷
গোবিন্দ ঃ সংস্কৃতে ‘গো’ মানে হ’ল কর্মেন্দ্রিয় ও জ্ঞানেন্দ্রিয় সমূহ৷ আর ‘বিন্দ’ মানে যিনি কোনো সত্তা বিশেষের বৈশিষ্ট্যকে স্ফূর্ত্তি ও প্রগতির ব্যাপারে সহায়তা করেন৷ তাই ‘গোবিন্দ’ মানেও দাঁড়াচ্ছে অণুচৈতন্য ৷
কৃষ্ণ ঃ সংস্কৃতে ‘কৃষ’ ধাতুর অর্থ হ’ল আকর্ষণ করা৷ যিনি সব কিছুকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে চলেছেন তিনিই কৃষ্ণ৷ ‘কৃষ্ণ’ মানে এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের চক্রনাভি৷ ‘কৃষ্ণ’ শব্দের অন্য অর্থ হ’ল জীবের অস্তিত্ববোধ৷ ‘আমি আছি’--- এই যে ােধটা একেও ‘কৃষ্ণ’ বলে অর্থাৎ কৃষ্ণ মানে হচ্ছে, যিনি আছেন বলেই আমি আমার অস্তিত্ব উপলদ্ধি করতে পারছি তিনি আছেন বলেই ‘আমি যে রয়েছি’ এই ােধটা আমার আছে৷
নারায়ণ ঃ সংস্কৃতে ‘নার’ শব্দের তিনটি অর্থ৷ একটা অর্থ হ’ল ‘জল’ আরেকটি অর্থ হ’ল ‘পরমা প্রকৃতি’৷ ‘অয়ন’ মানে ‘আশ্রয়’৷ সুতরাং ‘নারায়ণ’ মানে যিনি পরমা প্রকৃতির আশ্রয়৷ এখন প্রশ্ণ হ’ল, কে এই পরমাপ্রকৃতির আশ্রয়? উত্তর হ’ল--- পরমপুরুষ৷ তাই শেষ পর্যন্ত ‘নারায়ণ’ শব্দের অর্থ দাঁড়াচ্ছে পরমপুরুষ৷
মাধবঃ সংস্কৃতে ‘মা’ শব্দের ‘দুটো’ মানে৷ একটা ‘মা’ মানে ‘না’৷ যেমন ‘মা গচ্ছ’ মানে যেও ‘না’৷ ‘মা-না’ মানে ‘না না’৷ আর ‘মা’ শব্দের আরেকটি মানে হ’ল পরমাপ্রকৃতি৷ ‘ধব’ শব্দের দু’টো মানে৷ একটা হ’ল ‘ধবধবে শাদা’ আর অপরটা হ’ল ‘পতি’৷ যে মহিলাটি তার ‘ধব’ অর্থাৎ পতিকে হারিয়েছেন তিনি হলেন ‘বিধবা’৷ সুতরাং ‘মাধব’ মানে হ’ল পরমা প্রকৃতির পতি অর্থাৎ পরমপুরুষ৷
হরিঃ ‘পাপানি হরতি ইত্যর্থে ‘হরিঃ৷ যিনি পাপ হরণ করে নেন তিনিই হরি৷ মনে কর কোন মানুষ জীবনে অনেক পাপ করেছে৷ কিন্তু অনেক পাপ করার পর, সে পরমপুরুষের ভক্ত হয়ে গেছে, নিষ্ঠাবান সাধক হয়ে গেছে৷ পরমপুরুষ হয়তো বলবেন , ‘তুমি তোমার সমস্ত পাপের কলঙ্ক আমাকে দিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাও’’৷ কিন্তু ভক্ত কি আর পরমপুরুষকে তার পাপ দিতে চাইবে, সে বলবে, ‘‘হে পরমপুরুষ, আমি আমার সব কিছুই তোমাকে দিতে তৈরী কিন্তু পাপগুলো দেব না৷ তাতে আমার পাপ হবে৷ আমাকে আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে দাও’’৷ কিন্তু পরমপুরুষ তো তাকে ভালবাসেন ৷ তাই তিনি কী করেন!--- না , ভক্তের অজান্তে তিনি তার পাপরাজি চুরি করে নেন৷ চুরি কাকে বলে? মালিকের অনুমতি ব্যতিরেকে তার জিনিসপত্র নিয়ে নেওয়াকেই চুরি করা বলে৷ সংস্কৃতে চুরি বলে হরণ করা৷ এজন্যে পরমপুরুষের অপর নাম হ’ল ‘হরি’৷
রাম ঃ সংস্কৃতে ‘রম’ ধাতুর অর্থ আনন্দ দেওয়া৷ ‘রমন্তে যোগিনঃ সঃ রামঃ৷ আনন্দানুভূতির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎস হলেন রাম৷ আধ্যাত্মিক সাধকেরা পরমপুরুষের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশী আনন্দপান ৷ তাই ‘রাম’ মানে পরমপুরুষ৷
‘রাম’ শব্দের অন্য অর্থটা হল ‘রাতি মহীধরঃ রামঃ’৷ এখানে রাম মানে সবচেয়ে প্রোজ্জ্বল সত্তা অর্থাৎ পরমপুরুষ৷ অপর ব্যাখ্যায় আছে ‘রাবণস্য মরণম্ রামঃ৷ ‘রাবণস্য’ শব্দের আদ্যাক্ষর ‘রা’ আর মরণম্’ শব্দের আদ্যাক্ষর ‘ম’---দুয়ে মিলে ‘রাম’৷ পুরাণে বলা হয়েছে রাবণ ছিলেন দশানন দৈত্য৷ এখানে দশানন বলতে বোঝানো হয়েছে মনের প্রবৃত্তিগুলোকে, যেগুলো দশ দিকে কাজ করে যায়৷ এছাড়া অন্য কিছু নয়৷ ‘মরণম’ মানে মৃত্যু৷ যখন তুমি পরমপুরুষের কোলে আশ্রয় পাও তখন ‘রাবণ’ মারা পড়ে৷ পরমপুরুষেই সমস্ত অশুভ শক্তির মৃত্যু নিহিত৷ তাই তিনি ‘রাবণস্য’ মরণম--- রাবণের মৃত্যুর কারণসত্তা৷ এক্ষেত্রেও রাম মানে সেই পরমপুরুষ৷ ২৭ অক্টোবর ১৯৭৮, পটনা