প্রশ্ণ–১ সমবায়ে শেয়ার বিতরণ কীভাবে হওয়া উচিত?
উত্তর ঃ প্রাউট কৃষিজমিকে পর্যায়ক্রমে সামাজিকী–করণের সুপারিশ করে৷ কৃষিজমি কর্ষক সমবায়ের ব্যবস্থাপনায় থাকা উচিত৷ সমবায়ের ব্যবস্থাপনায় (জমি) হস্তান্তরের প্রারম্ভিক পর্যায়ে যারা জমির মালিক, তাদের হাতে জমির শেয়ার রাখতে হবে৷ অর্থাৎ প্রারম্ভিক পর্যায়ে কৃষি বা কর্ষক সমবায়ে শেয়ার দেওয়া হবে জমির মালিকদের যাদের জমি সেই সমবায়ে অধিগৃহীত হয়েছে৷ যখন সমবায় ব্যবস্থা কৃষিক্ষেত্রে পূর্ণরূপে রূপায়িত হবে তখন জমির মালিক আর অ–মালিকদের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না কারণ জমির ব্যবস্থাপনার পুরো দায়িত্ব থাকবে যৌথভাবে সমবায়ের সমস্ত সদস্যদের ওপর৷ অবশ্য, জনসাধারণের যথার্থ মানসিক প্রস্তুতির ওপরেই এই পর্যায়ে উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা নির্ভর করছে৷
সমবায় প্রথায় সুদ অর্জনকারী শেয়ার রাখার কোনো ব্যবস্থা থাকা উচিত নয় অর্থাৎ সমবায়গুলিতে মুনাফা অর্জনকারী শেয়ার থাকবে না৷ বরং জমির উৎপাদনের ভিত্তিতে শেয়ার রাখা হবে৷ যদি কৃষি বা কর্ষক সমবায়ে মুনাফা অর্জনকারী শেয়ার রাখা হয় তাহলে সেগুলি শেয়ার বাজারে বিক্রীত হবে, পুঁজিপতিরা শেয়ার কিনতে থাকবে, শেয়ারে বাজারের নিয়ম অনুযায়ী শেয়ারগুলির দামের ওঠানামা করতে থাকবে, আর (ফলস্বরূপ) সমবায়গুলি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে৷
অনুরূপভাবে, শিল্প সমবায়ে ডিভিডেন্ড শেয়ার থাকা উচিত, ব্যাঙ্কের সুদের মত মুনাফা লোটা শেয়ার নয়৷ এটা না হলে সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলিও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে যাবে৷ মুনাফা শেয়ার থাকলে সমবায় প্রথার মূল উদ্দেশ্যটাই (ব্দহ্মন্ব্জন্ব্ধ) নষ্ট হয়ে যাবে আর সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলি পুঁজিপতিদের হাতে চলে যাবে৷
সুতরাং কোনো কর্ষক, উৎপাদক বা ভোক্তা সমবায়ে অগ্রাধিকার (হ্মব্জন্দ্বন্দ্রন্দ্বব্জ্) শেয়ার অবশ্যই থাকবে না৷ শুধুমাত্র ডিভিডেন্ড শেয়ার থাকবে৷ অগ্রাধিকার শেয়ারের মালিকেরা নির্দিষ্ট হারে বাৎসরিক সুদ পান, তাতে সংস্থাটির লাভ বা ক্ষতি যাই হোক না কেন৷ অগ্রগণ্য শেয়ার হচ্ছে কৃষিতে সোঞ্জা প্রথার মত৷ সোঞ্জা প্রথায় ভাগচাষীরা জমিতে চাষ করতে স্বীকৃত হলে জমির মালিকদের কাছ থেকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকে৷ ভাগচাষীরা কতটা উৎপাদন করল সেটা বিচার না করেই এটা দেওয়া হয়ে থাকে৷ এমনকি ফসল নষ্ট হয়ে গেলেও এটা দেওয়া হয়৷ ডিভিডেন্ড শেয়ারে পাওয়া যায় ডিভিডেন্ড যা নিরূপিত হয় সংস্থার নীট মুনাফার ওপর৷
শেয়ার মালিকদের অবশ্যই উঁচুস্তরের নীতিবাদী হতে হবে৷ সমবায়গুলিতে ভোটাধিকার ব্যষ্টির ভিত্তিতে থাকা উচিত, শেয়ারের সংখ্যার ভিত্তিতে নয়৷ পুঁজিবাদী দেশগুলিতে শেয়ার কেনা যেতে পারে৷ পুঁজিবাদী দেশগুলিতে গণতন্ত্র একটা প্রহসন মাত্র কারণ সেখানে ভোট কেনা যায় আর গরীব মানুষ নির্বাচনে লড়তে পারে না৷
মানবিক সমস্যার সমাধান কমিউন ব্যবস্থাতেও নেই, পুঁজিবাদী ব্যবস্থাতেও নেই৷ একমাত্র সমবায় প্রথাই সকল রকম সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও জাতীয় সমস্যার সমাধান করতে পারে৷
প্রশ্ণ–২ সেবামূলক সমবায় কাকে বলে?
উত্তর ঃ এই ধাঁচের সমবায় উৎপাদক বা উপভোক্তা পর্যায়ের হবে না৷ এগুলি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ধরনের সমবায় যা কিনা সাংস্কৃতিক সমবায়ের পর্যায়ভুক্ত৷
আমরা চিকিৎসকদের উদাহরণই নিচ্ছি৷ চিকিৎসকদের সেবামূলক সমবায় চালু করা উচিৎ৷ এইসব সমবায়গুলিকে ‘চিকিৎসক সেবা সমবায়’ নাম দেওয়া যেতে পারে৷ মনে কর, একজন চিকিৎসক পশার (হ্মব্জ্ত্রন্তুব্ধন্ন্তুন্দ্) শুরু করতে পারছেন না৷ তিনি পাঁচ অথবা দশজন চিকিৎসকদের নিয়ে একটা সেবা সমবায় চালু করতে পারেন৷ এই ধরনের সমবায়কে ৰৌদ্ধিক সেবা সমবায় বলা হবে৷ যেসব চিকিৎকদের কম মূলধন থাকার জন্যে নিজস্ব পশার জমানো সম্ভবপর হয় না তাঁরা এই ধরনের সমবায়ে কাজ করতে পারেন৷ এই ধরনের ব্যবস্থা চিকিৎসকদের বেকার সমস্যার সমাধান করবে৷ এ ছাড়াও, চিকিৎসকরা এই সমবায়ের মাধ্যমে গবেষণা শুরু করতে পারেন যদিও চিকিৎকদের কাজের শতকরা ৯৯ ভাগই প্রয়োগমূলক আর বড়জোর শতকরা ১ ভাগ তত্ত্বমূলক৷
সেবামূলক সমবায় ছাড়া আরও কয়েক ধরনের সমবায় আছে যার মধ্যে রয়েছে কর্ষক সমবায়, উৎপাদক সমবায়, উপভোক্তা সমবায়, ব্যাঙ্কিং সমবায়, গৃহ সমবায় ও পারিবারিক সুরক্ষা সমবায়৷
একদিন ৰুদ্ধি আর ৰোধি এই পৃথিবীকে শাসন করবে আর সেইদিন খুব তাড়াতাড়ি আসছে৷ কমিউন ব্যবস্থা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে৷ আমরা সাম্যবাদী বাতিক (প্প্ত্রুন্ত্র) বা আতঙ্কের দর্শন চাই না৷ ধী–সম্পন্ন মানুষ একদিন এই পৃথিবীকে শাসন করবে, আর সেই জন্যেই সমবায় প্রথা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে৷
প্রশ্ণ–৩ সারা বিশ্বের, বিশেষতঃ বিশ্বের নিপীড়িত জনগণের মধ্যে প্রাউট প্রতিষ্ঠার কি ধনাত্মক বা ঋণাত্মক অনুজীবতের কোনো ভূমিকা আছে? যদি থাকে তবে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক অনুজীবতের ভূমিকা কী?
উত্তর ঃ যে–কোনো মূল নীতি (হ্মব্জনুন্তুন্হ্মপ্তন্দ্) বা তত্ত্ব (ব্ধড়ন্দ্বপ্সব্জম্ভ) যুক্তির আধারে স্থাপিত হওয়া উচিত, ভাবাবেগের (ব্দন্দ্বুব্ধন্প্পন্দ্বুব্ধ্) ওপর নয়৷ আর এই কথাটা সমগ্র মানব সমাজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷
(মানবদেহের) ঊর্ধ্বে চক্রগুলি ধনাত্মক অনুজীবতের আবাস ও সংশ্লেষণের পথ৷ নিম্নচক্রগুলি ঋণাত্মক অনুজীবতের আবাস ও বিশ্লেষণের পথ৷ সুতরাং নিম্নচক্রগুলি ঋণাত্মক অনুজীবতের প্রিয় বিচরণভূমি৷ এখন কি তোমরা নিম্নচক্রগুলিতে ঋণাত্মক অনুজীবতের প্রতিক্রিয়া ৰুঝতে পারছ? কম্যুনিষ্টদের কার্যাবলী শুধুমাত্র নিম্নচক্রগুলির ওপর আধারিত৷ ফলস্বরূপ তাদের মন ক্রমশঃ স্থূল হয়ে যাচ্ছে৷
সুতরাং প্রাউট প্রতিষ্ঠায় ধনাত্মক ও ঋণাত্মক অনুজীবতের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ প্রাউট প্রতিষ্ঠিত হবে অধ্যাত্মবাদীদের দ্বারা কারণ অধ্যাত্মবাদীদের দৃষ্টিভঙ্গী সংশ্লেষণাত্মক৷ অধ্যাত্মবাদীরা বহুর মধ্যে একককে দেখেন৷ একের মধ্যে বহুকে দেখেন না৷ শেষ পর্যায়ে (তাঁদের কাছে) বহু হয়ে যায় এক৷ সেইজন্যে, প্রাউট প্রতিষ্ঠায় ধনাত্মক অনুজীবতের আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷