সার্বিক শোষণ মুক্তির আন্দোলনই হলো বাঁচার একমাত্র পথ

লেখক
প্রভাত খাঁ

এটাকে  কী কেউ অস্বীকার করতে পারে যে পৃথিবীর  প্রতিটি নারী ও শিশুরাই হলো সেই মহান স্রষ্টার সবচেয়ে প্রিয় সন্তান মানুষ৷ কারণ এদের তিনি সৃষ্টি করেছেন, দায় দায়িত্ব দিয়েছে, বিবেকও বুদ্ধি দিয়েছেন যাতে তাঁর সৃষ্টিকে কল্যাণধর্মী মানসিকতা নিয়ে ভোগ করবে ও তাদের রক্ষা করবে, কিন্তু নিষ্ঠুরভাবে ধবংস করবে না৷ তাই সকল দেশেই যাঁরা চিন্তাশীল ও  বিবেক সম্পন্ন মানুষও বলে গেছেন যাঁরা মানুষকে সেবা দিচ্ছে তাঁদের প্রতি সর্বদাই সেবা দেবে ও রক্ষা করে যাবে৷ কিন্তু আজকের অত্যাধুনিক (?) যুগে তো দেখা যাচ্ছে সেই মানুষগুলোই নির্মমভাবে লোভী ও ভোগসর্বস্ব হয়ে সবকিছুকে ধবংস করেই সুন্দর বসুন্ধরাকে শ্মশানেই পরিণত করে চলেছে সেই স্রষ্ঠার নির্দেশ অমান্য করেই৷ তাই এটাকে বলা যায় যে দৈত্যের রাজত্বতে পরিণত করে বসেছে আত্মঘাতী মানুষরাই!

লোভী মানুষগুলো শাসনে থেকে রাজধর্ম রাজধর্ম বলে আওড়ায় কিন্তু তারা যে কাজ করে সেটাকে বলে দলবাজি৷ রাজধর্মের প্রকৃত অর্থ হলো নীতির রাজা, শাসকদের নীতি  হলো সেই মূল নীতি৷ এই নীতি হলো দুষ্টের দমন ও সৃষ্টদের রক্ষা করা৷ সেটা থেকে শাসকরা সম্পূর্ণ আলাদা৷ তারা ধবংসের নীতি নিয়েও বাহাদুরী কি করছে না? শাসিতদেরই বলা হয় প্রজা৷ তাদের বৃহত্তর অংশকে শোষণ করে দলীয় সমর্থক ও তাদের সমর্থক সেই ধনী ব্যবসাদারদের স্বার্থরক্ষায় সদাব্যস্ত কারণ ধনীদের টাকায় দল চলে দল নড়ে৷ দলতান্ত্রিক শাসকগণ নিজেদের স্বার্থে দলাদলি করে আর সাধারণ নির্বাচনে গদী সামলাতেই সেই নির্বাচনে ছল-বল কৌশলে জয়ী হয়ে চরমভাবে শোষণ করে চলে! সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিয়ে আর ধর্মমতের অতিভক্ত সেজে তারা করে সেটা কিন্তু  ‘‘ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে এক ধরণের’’ অবমানতা ছাড়া কিছুই নয়! সেটাই করে সংবিধানকেই অমর্যাদা করে চলেছে নির্লজ্যের মতো৷ মহামান্য সুপ্রিমকোর্টকেই অগ্রাহ্য করে পদে পদে নিছক শাসকের অহংকারে৷ তাই এই ভ্রষ্টাচারিতার দূরীকরণে এই বিংশ শতাব্দীতে মহান সমাজ সংস্কারক ও মহাসম্ভূতি পরমারাধ্য ৰাৰা সার্বিক শোষণমুক্তির আন্দোলনের গুরুত্ব দিয়ে গেছেন সমাজের  সর্বস্তরের সৎনীতিবাদী মানুষদের যাঁদের হতে হবে সেই শ্রীকৃষ্ণের পঞ্চ পাণ্ডব, যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত কৌরবদের সর্বাংশে উৎখাত করে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে৷ সেদিন সমাজে যে পরিবর্তন আসে হাজার হাজার বছর আগে৷ তাই আজ আবার সেই যুদ্ধ হবে মূলত ন্যায় সত্যকে শাসনে রেখে মূলতঃ বৌদ্ধিকযুদ্ধ৷ তাই সৎনীতিবাদী অধ্যাত্মবাদে উদ্বুদ্ধ মহান ব্যষ্টিগণ সমাজে সেই নীতিবাদীদের অর্থাৎ শোষিত ব্যষ্টিদের প্রকৃত সৎ মানুষ তৈরী করে আন্দোলন করে যাবে সর্বস্তরেই সকল বাধা ও বিরোধীতাকে অস্বীকার করে৷ আর নির্বাচনে সেই সৎব্যষ্টিদের জয়ী করে এক বিশ্বপ্রেমিক শাসক তৈরী করবেন, যাঁরা সমগ্র সৃষ্টির সকলকে রক্ষায় ও সেবায় ব্রতী হবেন৷ তবেই সভ্যতা সার্থক হবে ও বিশ্বে হবে ইউ.এন.ও.এর মতো এক রাষ্ট্র, যার অধীনে থেকে সারা পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলি বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যকে মান্যতা দিয়ে সংগচ্ছধবং মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হবে তখন সেই---এক মানবসমাজ হয়ে পৃথিবী এগিয়ে যাবে৷ যেখানে উৎপাদনও বন্টননীতি হবে মূলতঃ মহান সরকার জনগণের যৌথ প্রচেষ্টায়৷ বিশেষ করে বন্টননীতি হবে সুষ্টু সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধানে৷ যা হবে গুণগত ও প্রয়োজনগত বিধিকে মান্যতা দিয়ে৷ বিশেষ সুযোগ থাকবে না ইচ্ছাকৃতভাবে সঞ্চয়ের অধিকার কোন মানুষ ও সম্প্রদায়ের৷ কিন্তু পরিবর্তনশীল জগতের  সবকিছুকেই মান্যতা দিয়ে প্রগতিশীলতাকে আন্তরিকভাবে মান্যতা দিয়ে চলবে মানুষ এই সৃষ্টির বুকে৷

কোনদিনই ভয়ঙ্কর নোংরা ধনী দরিদ্রের ভেদাভেদের প্রবণতা থাকবে না সমাজে৷ আজ সেই সমাজই ধবংস হয়েছে দলবাজদের দ্বারাই৷ এটা ভয়ঙ্কর ক্ষতির কারণ মানবতারই ধবংস হওয়ার৷ মানুষ লোভের বশে মানবতা ভুলে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে লোকসমাজে মানবিক হুঁশ হারিয়েছে৷ মানবিক হুঁশকে যা নাকি মানবতা মানুষের সার্থক বোধবুদ্ধি মনুষ্যত্বটাই৷ এটাকে যাঁরা অস্বীকার করে তারা অবশ্যই সভ্যতা ও মানবতার  চিরশত্রু৷ তাদের বাড়তে দেওয়ার অর্থই বৈচিত্র্যের মধ্যে যে ঐক্য স্রষ্টার আসল লক্ষ্য তাকেই অস্বীকার করা৷ সেটা হলো মহাপাতকের কর্ম, পাপাচার, ঈশ্বরের জগতে তাই পাপাচারীদের যারা প্রশ্রয় দেয় ও পুন্যবান নিজেদের মনে করে তারাও চরম অপরাধী---তাই অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে৷ এই মহান নীতিবোধকে মান্যতা দিতে হবে সার্বিক কল্যাণের কারণে৷ আর নয় এবার উত্তিষ্ঠিত জাগ্রত প্রাপ্যবরাণ------

শ্লোগান হোক মহান গীতার সেই বাণী৷ তাই বলি বিজয়ীভব৷