শাসকদলের বেশী বাড়াবাড়িটা অতীব নিন্দনীয়

লেখক
প্রভাত খাঁ

বর্তমানে সমগ্র পৃথিবী তথা বিরাট জনবহুল দেশ ভারত যুক্তরাষ্ট্র এক চরম মানবতাহীন শাসকের কবলে পড়ে চরমভাবে শোষিত ও নির্যাতিত হয়ে চলেছে বছরের পর বছর ধরে৷

যদিও কোথাও কোথাও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু আছে৷ মনে রাখা ভালো গণতন্ত্রটি মন্দের ভালো৷ কিন্তু গণতন্ত্রের নামে ধনতন্ত্রের পূজারীরা যদি সেই গণতন্ত্রের শাসক হয় তাহলে গরীব হতদরিদ্ররা হয়তো একটা বোট দানের অধিকারী হবেন কিন্তু অর্থনৈতিক শোষণে তাঁরা অস্থি চর্মসার হয়ে অর্দ্ধমৃত হয়েই জীবন যন্ত্রণা ভোগ করবেন৷ যেমন এই ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় সিংহভাগ জনগণের দশা হয়েছে৷ দীর্ঘ ৭৫ বছরেও তাঁদের ঘরে সুখের পদধবনি পড়লো না৷ তাঁরা করের বোঝা বহিতে বহিতে শেষ হয়ে গেলেন! কিন্তু মুষ্টিমেয় ব্যষ্টিরা ধনে পুত্রে লক্ষ্মী লাভ করছেন৷ আর সুখের স্বর্গ রাজ্যে বাস করছেন৷ কিন্তু তাঁদের মুখে অর্থাৎ ধনবানদের মুখে গণতন্ত্রের জয়গানে আকাশ বাতাস মুখর হচ্ছে৷ আর প্রচার যন্ত্রগুলিতেও তাঁদের শেখানো বুলিগুলি কপচে চলেছে৷

এই যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা আবার অন্যধরণের কারণ মানবতাকে পদদলিত করার চরম কুসংস্কারাচ্ছন্ন দিক আছে তা হলো একাধিক ধর্মমতের জঘন্য বিরোধ৷ যদি ও এদেশের মহান সংবিধান দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে ঘোষনা করেছেন কারণ সংবিধান বেত্তাগণ বুঝেছিলেন যে গণতন্ত্রে জনগণের পরিচয় শুধু মানুষ কারণ ভারত যখন অখণ্ড ছিল তখন এই ভারতের বুকে সারা পৃথিবী লোক এসে যেমন শক, হুন, পাঠান, মোগল এসে এই মহামানবের সাগর তীরে সবাই এক হয়ে লীন হয়ে যায়৷ আর সবাই হয় এই দেশের  সন্তান৷ তারা ফিরে যায়নি৷ কিন্তু ইংরেজ শাসক এসে এদেশ শাসন ও শোষন করে ফিরে যায়৷ যদিও তারাও তাদের অনেক বংশোধরকে এদেশের সন্তান হিসাবে হলেও সঙ্গে করে নিয়ে যায় নি৷ কারণ দেশের শাসকদের সেটা নিষেধ ছিল৷ তাঁরা এ্যাংলো ইন্ডিয়ান, আজ তাঁরাও ভারতীয়৷

কিন্তু আজ হলোটা কি? ৭৫ বছর পরও এদেশের  অনেক জনগোষ্ঠী ভুলতে পারেনি যে তারা ভেদাভেদ ভুলে নিছক ভারতবাসী৷ তারা নির্বাচনে কিন্তু সেই সাম্প্রদায়িকতাকেই উষ্কে দিয়ে নানা ধর্মমতের নামে অশান্তি করছে যেটা ভারতীয় সংবিধান বিরোধী চরম দুঃখেরই কারণ বলে মনে হয়৷ এটা কিন্তু গর্বের নয়৷ তাই প্রায়ই সেই সাম্প্রদায়িকতাটার বিষাক্ত নিঃশ্বাসে দেশের কোথাও কোথাও চরম অশান্তি ঘটাচ্ছে৷ আজকের জগতে কেন যে মানুষ বুঝতে চায় না যে এই ভারতবর্ষের মহান ঋষি মুনিগণ মানুষকে অমৃতের সন্তান বলেই সম্বোধন করে গেছেন! তাই মানুষ মানুষ ভাই ভাই, আর সেই কারণে মানুষ হলো একই জাতের৷ মানুষের পরিচিতটা মানুষ তবে তার ভাষা, খাদ্য, সামাজিক আচার অনুষ্ঠানগুলি প্রাকৃতিক কারা পৃথক হয়৷ সেটাকে মেনে নিয়ে তো সভ্য মানুষ হিসাবে সবাইকে মর্যাদা ও সম্মান দিতে হবে৷ তবেই তো আমরা মানুষ৷ কই তা তো দেখা যাচ্ছে না এই ভারত যুক্তরাষ্ট্রে! রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি হলেন বাঙালী ভারতীয় কাজি নজরুল হলেন বাঙালী ভারতীয়৷ আমরা সবাই তো তাই৷ কাজি নজরুল যিনি ভারতের মহান নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর অতিপ্রিয় কাছের মানুষ বিপ্লবী কবি বলছেন---‘‘হিন্দু না ওরা মুসলীম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন? কাণ্ডারী বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার৷’’ তাই আজকের  দিনে যদি  দেশ শাসনের শক্তি পেয়ে সংখ্যা লঘু যাঁরা তাঁদের  উপর অত্যাচার ও আক্রমণ করে চলে গায়ের জোরে হাতে  অস্ত্র নিয়ে আস্ফালন করে ও দেশের ইতিবৃত্তকে (ইতিহাস) কে জোর করে পালটে দিতে জবরদস্তি করে তাহলে দেশের  গণতন্ত্রটা কি বজায় থাকে? মনে হয় না৷

তাঁরা বিদেশী হলেও তাঁদের সন্তান সন্ততিগণ তো ভারতীয়৷ তাঁরা শাসক হলেও তাঁদের রেখে যাওয়া ঐতিহাসিক অবদান গুলিকে ধবংস করা বা নাম পালটিয়ে কি  কতটুকু বড়ো কাজ হয়৷ বর্ত্তমানে তাই হচ্ছে৷ ইতিবৃত্তের ঘটনাবলিকে জোর কোন কোন দেশী শাসকগণ তাই করে চলেছেন৷ যেমন দক্ষিণ ভারতের টিপু সুলতান হয়ে ইংরেজের সঙ্গে লড়াই করে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রাণ দিয়ে গেছেন৷ হিন্দুর বিখ্যাত মন্দিরের সংস্কার করেছেন৷ তিনি শাসন করেছেন এদেশের মানুষকে নিয়েই৷ তাই তাঁর অবদানকে আজ যারা অস্বীকার করে তারা কোন ধরণের মানসিকতার?

মোগল আমলের সৌধ ও উদ্যান তার নাম পরিবর্ত্তন করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে জনগণের সেবা না দিয়ে এ সব কেমন জনসেবা  বলে মনে হয়? মোগল গার্ডেন যে নামটা ইংরেজ সরকার দেন সেই নাম ‘অমৃত উদ্যান’ কি করে হয়? অমৃত শব্দটির মূল্য অনেক৷ এটাতো বেহিসেবি কাজ কি নয়? জনগণের কি কল্যাণটা হবে? এতে কোন সম্প্রদায়ের মর্যাদা বাড়বে না৷ তাতে অন্য একটা অর্থ হবে৷

যার নাম স্বেচ্ছাচারিতা! দেখা গেছে নাম পাল্টানোটা এদেশের অনেক দলীয় শাসকদের একটা মানসিকতা যেমন পশ্চিম বাংলায় শাসনে এসে বামফন্টের প্রধানগণ কলকাতার  রাস্তার নাম পাল্টান৷ তার একটি হলো ‘লেলিন সরণী’’-এতে লেলিনের নব মর্যাদা কি বৃদ্ধি পেয়েছে? বাম সরকার আজ কোথায়? তাই জনগণের বোটে জিতে যারা দেশ শাসনে আসেন কয়েক বছরের জন্য৷ তাঁদের নেতাদের কিছুটা সংযত  হতে হয়৷ বেশী বাড়াবাড়িটা মোটেই শুভ নয়, এটা চরম অহংঙ্কারে লক্ষন, তাই সংযত হয়ে চলাটাই বাঞ্ছনীয়৷