স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজীর প্রকৃত মূল্যায়ন হওয়া উচিত

লেখক
এইচ.এন. মাহাত

শুরু হতে চলেছে বঙ্গের ভোট রঙ্গ৷ সকল রাজনৈতিক দল ও নেতারা বিভিন্নভাবে বাঙালীর মন জয় করতে বাঙালী প্রীতি ও ভালোবাসার পসরা নিয়ে মাঠে ময়দানে নেমে পড়েছে৷ ভোটকে কেন্দ্র করে প্রমাণ করতে চাইছে, কে কতটা সাচ্চা বাঙালীর বাচ্চা তার বিচার  আগামীতে বাঙালীদেরকেই করতে হবে৷ ভারতের স্বাধীনতার ৭৪ বছর পর বাঙালী বিদ্বেষী বিজেপি দলটির মনে হলো বাঙালী ভোটারদের মন জয় করতে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু সহ বাঙলার মনিষীদের তোয়াজ করা দরকার৷ নচেৎ বাঙালী ভোট ব্যাঙ্ক আমাদের বিপক্ষে যেতে পারে৷ বিজেপির ড্যামেজ কন্ট্রোল টিপস দেওয়া মাত্রই প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে চুনোপুঁটি নেতারা পর্যন্ত মাঠে ময়দানে নেতাজীর স্তুতি গাইতে শুরু করে দিলেন৷ মাননীয় মোদীজী আরো একধাপ এগিয়ে নেতাজীর জন্মদিন উৎযাপনকালে বাঙালীর মন জয় করতে বাংলা ভাষায় (কিছুক্ষেত্রে ভাষার বিকৃতি মনে হলো) বক্তব্য রাখলেন৷ বিজেপি সরকার কেন্দ্রে আসার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নেতাজী রহস্যের সকল ফাইল উন্মোচন করবেন৷ এখন বলছেন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হবে, তাই সংশ্লিষ্ট ফাইল জনতার দরবারে আনা যাবে না৷ সেই চিরাচরিত অজুহাত৷ আসল রহস্যটা কী? নেতাজীর গোপন ফাইল  প্রকাশ হলে তথাকথিত অনেক দেশপ্রেমিকের মুখোশ খুলে যাবে৷ যার মধ্যে বিশ্বের উচ্চতম গুজরাটি মূর্ত্তিটিও আছে৷ অটল বিহারী বাজপেয়ীর  আমলে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের মৃত্যু-তদন্তকে কেন্দ্র করে মুখার্জি কমিশন বসানো হয়েছিলো৷ মাননীয় বিচারক মুখার্জির সেই ফাইলও আজ পর্যন্ত জনতার দরবারে আনা হয়নি৷ তাকে বস্তা চাপা দিয়ে রাখা হলো৷ মুখার্জি কমিশনের আগে দুটি নেতাজী সংক্রান্ত কমিশন নিয়োজিত করে ছিলো কংগ্রেস সরকার৷ এই দুই কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল গান্ধী ও নেহেরু তথা অন্যান্য কংগ্রেস নেতৃত্বের নেতাজী-বিরোধী কুটিল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকে ধামাচাপা দেওয়া৷ তৎকালীন ভারতের নেতৃবর্গ ব্রিটিশের সঙ্গে স্বাধীনতার নামে লোক দেখানো আন্দোলন করেছিলো, তা ছিলো মূলতঃ ছেলে ভোলানো আন্দোলন৷ সেই সময়  কংগ্রেস, কমিউনিষ্ট ও আর.এস.এস এর রাজনৈতিক  দল জনসংঘ  ও বিজেপির সক্রীয় কর্মীরা বাঙালী বিপ্লবীদের ব্রিটিশের হাতে ধরিয়ে দিতো৷ এই দলগুলো কখনোই ভারতের অর্থনৈতিক গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা চায়নি৷ দুই শত বছরের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করতে করতে নেতৃত্ব দেখলো বেশী দিন আর বেঁচে থাকার সময় থাকবে না৷ তাই মৃত্যুর আগে ভারতের গদিতে না বসতে পারলে জীবনটাই বৃথা হয়ে যাবে৷ অথচ, ভারতের স্বাধীনতায় মূলতঃ বাঙালীরা প্রত্যক্ষভাবে  আন্দোলন করেছিলেন৷ আর তাতে পূর্ণমাত্রায় অনুপ্রেরণা ছিলো নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের নিষ্ঠা, সাহসিকতা ও অদম্য মনোবল৷ ভারতের নেতৃত্ব যে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করলো তারজন্য  বাঙালীস্তান ও পঞ্জাবের সাধারণ মানুষের উদ্বাস্তু হওয়ারকরুণ দশা ওইসব নেতৃবর্গকে ভোগ করতে হয়নি৷ অথচ স্বাধীনতার প্রাক মূহুর্তে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস ভারতীয় নেতৃত্বকে চিঠির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছিলেন ব্রিটিশের সূর্য অস্তগামী, যেকোনো মুহুর্তে সমগ্র পৃথিবীতে তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব ধবংস হতে চলেছে৷ আমরা একটু অপেক্ষা করলে অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা পাবো, তার সঙ্গে আমরা রাজনৈতিক গণতন্ত্রও অর্জন করবো৷

আজ ভারত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে মুক্ত হলেও তাদের ঔরসজাত বেনিয়া বংশধর গুজরাটের বেনিয়াদের শোষণ, শাসন ও তৎসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের থেকেও আরো নিষ্ঠুর রূপ ধারণ করেছে৷ ভারতের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আজ দিশেহারা৷ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই৷ মানুষ আজ নৈতিক ও মানবিক দিক থেকে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে৷ ভারতীয়দের কাছে একটা নতুন প্রশ্ণ ব্রিটিশ বেনিয়াদের শোষণের থেকেও ভয়ঙ্কর স্বদেশী ও গুজরাটী বেনিয়াদের সাম্রাজ্যবাদী মনস্তাত্ত্বিক শোষণ থেকে আমরা কি মুক্তি পাবো না?

মহান দার্শনিক ঋষি শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তার সময়োপযোগী ‘‘প্রাউট’’ দর্শনে বলেছেন’ রাজনৈতিক ধোঁকাবাজ নয়, চাই অর্থনৈতিক গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো৷ আসুন আমরা নেতাজীর অমোঘ স্লোগানকে সামনে রেখে এগিয়ে চলি৷ রাজনৈতিক গণতন্ত্র নয় চাই অর্থনৈতিক গণতন্ত্র৷ নেতাজীর  স্বপ্ণপূরণের উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদ ও  ঔপনিবেশবাদ নির্মূল করতে ও প্রাউটের  আলোকে শোষণমুক্ত মানব সমাজ গড়তে  সকলের এগিয়ে আসা দরকার৷ তবেই নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষ্যে নানা বহিঃমুখী অনুষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করা থেকেও  তাঁর  আদর্শের মূল্যায়ণ করা ও বাস্তবায়ন করা-ই নেতাজীকে দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার হবে৷