আজকের পৃথিবীতে সকল দেশের সংবিধানেরই কম–বেশী সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে৷ সংবিধান প্রসঙ্গে কতকগুলো বিশেষ বিশেষ সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে৷
(১) মন্ত্রিসভা বা সংসদকে রদ্ করা বা বাতিল করা–রাষ্ট্রপতি বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে মন্ত্রিসভা বাতিল করতে পারেন বা সংসদ ভেঙ্গে দিতে পারেন, যদি দেশের অভ্যন্তরে কোন অন্তর্ঘাতমূলক ক্রিয়াকলাপের ফলে কোন জরুরী অবস্থার উদ্ভব হয়৷ অথবা, যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, অথবা বহিঃশক্তির শত্রুতামূলক আচরণের ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে, অথবা যদি কোন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত শাসকদল সংসদে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে সংখ্যালঘুদলে পরিণত হয়৷
মন্ত্রিসভা যেদিন বাতিল করা হবে, তার থেকে এক মাসের মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে সংসদের সামনে তাঁর কাজের জন্যে উপযুক্ত কৈফিয়ৎ দাখিল করতে হবে৷ যদি সংসদ ইতঃপূর্বেই বাতিল বলে ঘোষিত হয়, তাহলে রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙ্গে ফেলার ছয় মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের বন্দোবস্ত করতে হবে, ও নবনির্বাচিত সাংসদ ভবনে নির্বাচনের এক মাসের মধ্যে সমস্ত পরিস্থিতির ব্যাখ্যা পেশ করতে হবে৷
(২) জরুরী অবস্থা বিষয়ক সংশোধন ঃ রাষ্ট্রপতি সংসদের অনুমতিসাপেক্ষে কোন উপদ্রুত এলাকায় ছয় মাসের জন্যে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন তবে সংসদের অনুমতি নিয়েও রাষ্ট্রপতি কোন স্থানে দু’বছরের বেশী জরুরী অবস্থা চালু রাখতে পারেন না৷
(৩) অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রি সভা ন্ত্রপ্পন্দ্ব–স্তুব্ভন্ত্ প্পনুন্ব্দব্ধব্জম্ভগ্গ্–রাষ্ট্রপতি অস্থায়ী অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিপরিষদের উপদেশ বা নির্দেশ মানতেও পারেন, নাও পারেন৷ যদি রাষ্ট্রপতি ওই অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভার উপদেশ অগ্রাহ্য করেন, তাহলে ওই সংসদ স্বাভাবিকভাবেই ভেঙ্গে যাবে, আর সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে নোতুন সংসদ নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রপতি এক মাসের মধ্যে নবনির্বাচিত সংসদের সমক্ষে স্বয়ং যাবতীয় পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করবেন৷
(৪) রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নৈতিক মান ও আচরণ ঃ রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই এক উচ্চ নৈতিক মান ও আচরণের প্রতিভূ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে৷ তাই রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পদে থাকাকালীন তাঁরা কেউ বিবাহ–বিচ্ছেদ করতে পারবেন না, অথবা বিবাহ–বিচ্ছেদের অধিকার প্রাপ্ত কোন নারী বা পুরুষকে বিবাহ করতে পারবেন না৷ রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকতে কোন অবস্থাতেই দ্বিতীয় পতি বা পত্নী থাকবে না৷
(৫) বিবৃতিদান প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ঃ সাধারণ অবস্থায় বিবৃতিদান প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা অবশ্যই নিরঙ্কুশ হওয়া উচিত নয়৷ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সংসদ অথবা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ না করে তিনি কোন প্রকার বিবৃতি দেবেন না৷ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যখন মন্ত্রিপরিষদ বলবৎ থাকবে, তখন রাষ্ট্রপতিকে মন্ত্রিপরিষদের উপদেশ অনুযায়ী কাজ করতে হবে৷
(৬) গণপরিষদ ড্রপ্সুব্দব্ধন্ব্ধব্ভন্ ট্টব্দব্দন্দ্বপ্পত্ব্প্ত্ ঃ সংসদ গণপরিষদের ভূমিকাও পালন করতে পারে যদি সংসদের শাসক দলের ৭–৮ ভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে কারণ ঘন ঘন সংবিধান সংশোধন বা পরিবর্ত্তন করলে সংবিধানের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়৷
(৭) ভাষা ঃ দেশের সমস্ত জীবিত ভাষাকেই রাষ্ট্র বা সরকারকে সমান মর্যাদা দিতে হবে৷
(৮) সকল নাগরিকের সমানাধিকার–রাষ্ট্রর সকল নাগরিককে আইনের চক্ষে সমান অধিকার দিতে হবে৷ সকল নাগরিকের নূ্যনতম প্রয়োজনপূর্ত্তির সমানাধিকার দিতে হবে, যাতে প্রত্যেকেই বৈয়ষ্টিক ও সামূহিক জীবনে প্রমাসীনতায় বা ভারসাম্যে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে৷
(৯) সমীক্ষক সংস্থা–সংশ্লিষ্ট দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রগতির মান পর্যালোচনার জন্যে রাষ্ট্রপতি এক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সমীক্ষক সংস্থা নিয়োগ করবেন৷ মন্ত্রিমণ্ডলী ও সমীক্ষক সংস্থার মধ্যে মত পার্থক্য দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি সংসদের উপদেশ অনুযায়ী চলবেন৷ আবার সংসদ ও সমীক্ষক সংস্থার মধ্যে মতভেদ দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের ত্রব্ভহ্মব্জন্দ্বপ্পন্ ড্রপ্সব্ভব্জব্ধগ্গ উপদেশ চাইবেন৷ এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালত সংবিধান অনুযায়ী যে আনুষ্ঠানিক উপদেশ দেবেন রাষ্ট্রপতি তদনুযায়ী চলবেন৷
(১০) রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা ঃ আইন ও সংবিধানের দৃষ্টিতে সকল নাগরিকেরই সমান অধিকার৷ তাই দেশের সর্বোচ্চ আদালতে দেশের যে কোন মানুষের বিরুদ্ধেই মামলা রুজু করা যেতে পারে৷ এমন কি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও করা যেতে পারে৷
(১১) আত্মনিয়ন্ত্রণ ও গণভোটের অধিকার–দেশের কোন একটি অঞ্চলের গণভোটের ভিত্তিতেই আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার মেনে নেওয়া যেতে পারে৷ আর সেই গণভোটকে পরিচালনা করবে গণ–পরিষদ৷ কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে ও মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের ব্যবস্থাপনায় ওই গণভোট পরিচালিত হবে৷
(১২) শিক্ষা ঃ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রে সকল নাগরিকের জন্যেই প্রাথমিক শিক্ষার গ্যারাণ্টি দিতে হবে৷ শিক্ষাকে সর্বপ্রকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বাইরে রাখতে হবে৷
(১৩) রাষ্ট্রব্যাপী একই আইন ও সংবিধান ঃ এক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সর্বত্র একই আইন (ন্ত্রভ্র) ও সংবিধান (ড্রপ্সুব্দব্ধন্ব্ধব্ভব্) প্রচলিত থাকা উচিত৷ কারণ আইন ও সংবিধানের দৃষ্টিতে প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার স্বীকৃত৷ এটাই সংগত যে একই রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীরা একই ধরণের আইনগত ও সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করবেন৷ এ বিচারে কশ্মীর যে বিশেষ অধিকার ও সুযোগ–সুবিধা ভোগ করে, সেটা আদৌ সমীচীন নয়৷ এটা অত্যন্ত বিসদৃশ যে একজন কশ্মীরের অধিবাসী ৰাঙলা বা মহারাষ্ট্রে গিয়ে জমিজমা কিনে বাড়ি ঘর তৈরী করে সুবিধামত বসবাস করতে পারৰেন কিন্তু একজন মহারাষ্ট্রী বা ৰাঙালী একই রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও সেই সুযোগ–সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকৰেন–এ ধরণের বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা যুক্তিসঙ্গত কি?
(১৪) বিশ্বরাষ্ট্র–বিশ্বরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যে একটা বিশ্ব সংবিধানেরও প্রয়োজন৷ তাই এই ধরণের সংবিধানে এমন অনেকগুলি রীতি ও অধিকারের তালিকা (ট্ট ন্তুড়্ত্রব্জ্ত্রন্তুব্ধন্দ্ প্সন্দ্র ত্নব্জনুন্তুন্হ্মপ্তন্দ্ প্সব্জ ন্প্তপ্ত প্সন্দ্র ত্মন্ন্ধড়ব্ধব্দ) সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত যাতে অন্ততঃ চারটি বিষয় অবশ্যই অন্তর্ভুক্তি হয় ঃ
(ক) আমাদের এই পৃথিবী–গ্রহের যাবতীয় জীবজন্তু ও উদ্ভিদবর্গের পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চিততা দিতে হৰে
(খ) সকল দেশকেই সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতার নিশ্চিততা দিতে হৰে
(গ) সকল দেশের সংবিধানেই সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের অন্ততঃ চারটি মৌলিক অধিকারের নিশ্চিততা দিতে হৰে–
() ধর্মানুশীলনের অধিকার () সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার অধিকার () শিক্ষা ও মাতৃভাষায় ব্যক্তীকরণের অধিকার (ন্ল) উল্লিখিত তিনটি অধিকারের কোন একটির সঙ্গে মৌল মানবীয় নীতির বিরোধ দেখা দিলে সংশিশ্লষ্ট অধিকারটিকে তৎক্ষণাৎ সংকুচিত করতে হৰে, অর্থাৎ সর্বাবস্থাতেই মৌল মানবিক নীতিকেই সর্বাগ্রে স্থান দিতে হবে৷
পরিশেষে আবার ৰলছি পৃথিবীর সৰ দেশের সংবিধানেই কিছু কিছু দোষ–ত্রুটি রয়েছে৷ সংবিধান–রচয়িতাদে কাছে আমার অনুরোধ রইল তাঁরা যেন নিজের নিজের দেশের সাংবিধানিক ত্রুটি–বিচ্যুতিগুলোকে দূর করার সময় উল্লিখিত বিষয়গুলির দিকে একটু দৃষ্টি দেন৷