পূর্ব প্রকাশিতের পর
গণতন্ত্রের আওতায় এই ধরণের আদর্শের প্রতিষ্ঠা মোটেই সম্ভব নয়, কেন না সেখানে বোটপাবার জন্যে চোর, ডাকাত তথা নানান ধরণের সমাজ-বিরোধী মানুষের দ্বারস্থ হতে হয়৷ জাতিভেদ, প্রাদেশিকতা, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদির ধুয়া তুলে সমর্থ ও যোগ্য প্রার্থীদের পরাজিত করা হয় আর যারা রাজনীতি, শাসন পরিচালনা, শিক্ষা, দ্ধিমত্তা, নীতি ইত্যাদি বিষয়ে একেবারে অনভিজ্ঞ, তারাই প্রতিনিধিদের ভাগ্য নির্ধারণ করার দায়িত্ব পেয়ে থাকে৷
সদ্বিপ্রের দ্বারা বিজ্ঞানের যথার্থ অনুশীলনের ফলে ব্যষ্টিগত তথা সামাজিক বহু সমস্যার সুন্দর সমাধান হতে পারে৷ পৃথিবীর সকল দেশেই আজও কমর্েশী যে ভূমি-সমস্যা রয়েচে, বিজ্ঞান অনেকাংশে তার একটা সহজ সমাধান করে দিতে সবম৷ খাদ্য-সামগ্রীর প্রয়োজনীয়তা কম থাকলেই ভূমির গুরুত্ব তথা মূল্য আপনিই কমে যার্ে৷ মানুষের ক্ষুধা নিবারণের জন্যে একটা বটিকাই যথেষ্ট হতে পারে৷ বৈজ্ঞানিকের গবেষণাগারে এই ধরণের অনেক পরিমাণ বটিকা উৎপাদন ধনী-দরিদ্রের ভেদও অনেক ঘুচিয়ে দের্ে, কারণ পাকস্থলীর জ্বালা দূর করার জন্যেই গরীবেরা বাধ্য হয়ে ধনীর দাসত্ব স্বীকার করে ও এভাবেই তার অধিকতর ধনাগমের সুযোগ করে দেয়৷ অবশ্য এরকমের সূক্ষ্ম খাদ্য উৎপত্তির আগে থেকেই বিজ্ঞান নানান উপায়ে খাদ্য-সমস্যার সমাধানে সহায়তা করছে৷ জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে, তার তুলনায় জমির প্ররিমাণ বাড়ছে না৷ এই সীমিত ভূ-ভাগ নিয়েই লোকেরা বিজ্ঞানের সহায়তায় উন্নত ধরণের সার, শস্যবীজ, জলসেচ-ব্যবস্থা ইত্যাদির মাধ্যমে খাদ্যোৎপাদনের পরিমাণ াড়িয়ে নিচ্ছে৷ তাহলেই দেখছি, মানব-প্রগতির পক্ষে বিজ্ঞান অত্যাবশ্যক, নতুবা পৃথিবীর অর্ধেক মানুষকে আজ অনাহারে শুকিয়ে মরতে হ’ত৷
আমরা জানি, চিকিৎসা-বিজ্ঞান অতীতেও মানুষকে প্রচুর সাহায্য করেছে, বর্তমানেও করছে ও অনুরূপভাবে ভবিষ্যতেও করবে৷ উন্নত ঔষধ ও শল্যচিকিৎসা মানুষকে দীর্ঘায়ু করার জন্যে অতীতে ও বর্তমানে সমানভাবে সহায়তা করেছে ও করছে৷ মানুষ যদি দেহের পুরানো গ্রন্থিকে বাদ দিয়ে নোতুন গ্রন্থি সংযোজিত করতে পারে তো চাই কি---মানুষ বার্ধক্য ও মৃত্যুকেও ঠেকিয়ে রাখতে পারে৷ চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ তাও সাফল্যের সঙ্গে করেছে ও করছে৷ জীবদেহের মৃত্যু ঘটে তার দেহস্থিত গ্রন্থিগুলো পুরানো ও দুল হয়ে পড়ে লে৷ কাজেই এগুলোকে পাল্টানোর ফলে মৃত্যুকেও পিছু হঠতে হয়৷
অবশ্য জীবৎকালটাকে কিঞ্চিৎ দীর্ঘ করে বা সাময়িকভাবে মৃত্যুকে ঠেকিয়ে রেখে মানুষ কিন্তু অমর হবে না৷ কারণ তার আরও একটা জিনিস রয়েছে---মস্তিষ্ক৷ এই মস্তিষ্ক থেকেই মানুষের ‘‘আমি আছি’’, ‘‘আমি করছি’’ ইত্যাদি মানসিক ভাবগুলো উদ্ভূত হয়ে থাকে৷ প্রাচীনতা তথা ক্রমাগত ব্যবহারের দরুণ মস্তিষ্কের মধ্যে অবক্ষয়-র্নিন্ধন বিকৃতি দেখা দেওয়া স্বাভাবিক৷ যদি এই মস্তিষ্কটাকে পালটিয়ে ফেলা হয়, সেক্ষেত্রে মানুষের পুরো ব্যষ্টিত্বটাই পরিবর্তিত হয়ে অন্য রূপ নের্ে৷ তখন কিন্তু পুর্বের মানুষটার মৃত্যু হয়ে নোতুন মানুষের জন্ম হয়েছে---এই রকম মনে করতে হবে৷ উপযুক্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণার দ্বারা, মানবদেহে গ্রন্থিগত পরিবর্তন ঘটানো যায়৷ ফলতঃ অসৎকেও সৎ মানুষে পরিণত করা যায়৷ কিন্তু এর দ্বারা মানুষের পূর্বার্জিত সংস্কারের কোন পরিবর্তন সাধন হবে না৷ অবশ্য এতে জীবের প্রত্যয়মূলক কর্মের ধারাকে বদলানো যেতে পারে কিন্তু সংস্কারমূলক কর্মের ধারাকে রোধ করা যাবে না৷ মস্তিষ্ক মনের আধার, আর মন হচ্ছে সংস্কারগুলোর অধিষ্ঠানস্থল৷ এখন মস্তিষ্কের পরিবর্তনের ফলে মন তার সমস্ত সংস্কার সমেত নোতুন একটা আশ্রয় নের্ে ও সেক্ষেত্রে সেটা হবে সম্পূর্ণ নোতুন একটা সত্তা৷ বিজ্ঞানের লে মানুষের মস্তিষ্কটাকে দলে দিয়ে যদি বানরের মস্তিষ্ক সংযুক্ত করা হয়, তাহলে সেই পূর্বেকার মানব-দেহটার মালিক এখন থেকে আর সে নয়৷ মনস্তত্ত্বের দিক থেকে বিচার করলে দেখা যাবে, সে মোটেই মানুষ নয় আর তার গ্রন্থিগুলো থেকে রসবরণও ানরদেহের গ্রন্থির রসবরণের অনুরূপই হচ্ছে৷ ঠিক এইভার্েই পুরুষকে স্ত্রীতে ও স্ত্রীলোককে পুরুষে পরিণত করা আদৌ অসম্ভব নয়৷ শুধু তাই নয়, শক্তিশালী মানসিক ভাবগ্রহণের মাধ্যমে গ্রন্থির রসবরণেও পরিবর্তন আনা যেতে পারে৷ ফলে পুরুষ নারীতে ও নারী পুরুষে রূপান্তরিত হতে পারে৷ আর গ্রন্থিগুলোর আংশিক পরিবর্তনের দ্বারা পুরুষের পক্ষে গর্ভধারণ করা অসর্ম্ভ হবে না৷ কিন্তু বিজ্ঞান মানুষের সংস্কারকে কদাপি পরিবর্তিত করতে পারে না৷ কাজেই মানুষের পক্ষে ব্যষ্টিত্ব-বিকাশের জন্যে আধ্যাত্মিক সাধনা ছাড়া গত্যন্তর নেই৷
মানব-প্রগতির জন্যেই আমরা বিজ্ঞানচর্চাকে অভিনন্দন জানাই৷ কিন্তু এই বিজ্ঞান-চর্চা অবশ্যই সদবিপ্রদের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়৷
এমন একদিন আসর্ে যখন মানুষ বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার থেকেই মানবশিশুর জন্ম দেবে৷ শুধু তাই নয় সেখান থেকেই শুক্রকীট ও ডিম্বকোষের উদ্ভব হবে৷ তখন ধীরে ধীরে মানুষ সন্তান-জননশক্তি হারিয়ে ফেলবে কিন্তু তার সর্জন-ধর্মী আবেগ কোনদিনই মন থেকে নষ্ট হবে না৷ যেহেতু মূল স্রষ্টা সগুণ-ন্মের মধ্যে সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, সেই হেতু তাঁতেই বিধৃত সমস্ত মানুষের মধ্যেই সৃষ্টির জ থাকা সম্ভব৷ সেই শুভদিনে মানুষ কামময় কোষের ড়ো ডিঙ্গিয়ে সূক্ষ্মত্বের অনুশীলনের মধ্য দিয়ে তার সৃষ্টির ইচ্ছাকে চরিতার্থ করর্ে৷ সেদিনের মানুষগুলো সুন্দরতর সমাজ তৈরী করে মহান্ সাহিত্য, অধিকতর প্রগতিশীল শিল্প-কলার জন্ম দের্ে৷
আমার ব্যষ্টিগত মত এই যে, আণবিক বোমা কখনও মানব সভ্যতাকে পরিপূর্ণ ধবংস করতে পারে না কারণ মানুষ দ্ধির দিক থেকে এখনও সসম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে যায় নি৷ মানব-মনে বিদ্যা-অবিদ্যার সংগ্রাম এখন বেশ সুন্দরভাবে চলছে৷ সেইজন্যে আমি এই পরিষ্কার সিদ্ধান্তে না পৌঁছে পারি না যে, অতি অদূর ভবিষ্যতে মানুষ আণবিক বোমা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করবেই ও সেই সঙ্গে বিজ্ঞানের যে মানবকল্যাণের ক্ষেত্রে একটা মহান ভূমিকা রয়েছে তারও প্রতিষ্ঠা হবে৷