শোষণমুক্তির আন্দোলন ভারতই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারতবর্ষ মূলতঃ ইংরেজ শাসনের অধীনে একটি একচ্ছত্র সাম্রাজ্য হিসাবে পৃথিবীতে স্বীকৃতি লাভ  করে৷ তার আগে মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল এক ছিন্ন ভিন্ন রাজত্ব হিসাবেই৷ তবে দিল্লির মুঘল বাদশাহের অধীনে তার আগে সুলতানী রাজ্য ছিল স্বাধীন হিসাবে৷  দেশের অধিকাংশ রাজা পরস্পর কলহে  লিপ্ত ছিল৷ চিরকালই বিদেশী মুসলমানগণ ও সাম্রাজ্যবাদী বণিক জাতি ইংরেজ সেই সুযোগে অর্থাৎ এদেশের মীরজাফরদের মতো দেশদ্রোহীদের কব্জা করে শাসন লাভ করে৷ পলাশীর আম্রকুঞ্জে সিরাজউদ্দল্লার সঙ্গে ইংরেজ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর এক  যুদ্ধ যুদ্ধ বিশ্বাসঘাতকতার খেলা হয় যে খেলায় সেনাপতি মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় যুদ্ধক্ষেত্রে সিরাজের পঞ্চাশ হাজার পদাতিক সৈন্য পরাজিত হয়৷ ঘোষনা করা হয় নবাব পরাজিত হয়েছেন ইংরেজের কামানের কাছে৷ এটা ডাহা মিথ্যা৷ নবাবের কামান দাগার বারুদের স্তূপে মীরজাফরের বেইমানরা জল ঢেলে ভিজিয়ে দেয়৷ তার প্রতিদানে মীরজাফর নবাব হন ও ইংরেজ পরোক্ষভাবে বাংলা বিহার ঊড়িষ্যার শাসন লাভ করে৷ মীরজাফরের মনিবেগমের পুত্র বজ্রাঘাতে মারা যান৷

এই বেইমান ইংরেজ শাসক ভারতবর্ষে ছাড়ে  বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে ১৫ই আগষ্ট দেশকে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে সেই অতীতে যে মুসলমান শাসন ছিল ভারতবর্ষে তাদের হাতে পাকিস্তান হিসাবে উত্তর ভারতবর্ষের  পূর্ব দিকের বৃহত্তম বাংলার দুই-এর তৃতীয়াংশ পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিমদিকে পঞ্জাব ও তার পার্শ্ববর্ত্তী এলাকা পশ্চিম পাকিস্তান হিসাবে টুকরো করে আর মধ্য অংশকে ভারতযুক্ত রাষ্ট্র হিসাবে ভাগ করে দিয়ে৷  এদেশের বুকে আরো অনেক বছর পরোক্ষভাবে হাতে রাখতে এই স্বাধীনতা কংগ্রেস-এর মাননীয় জহরলাল নেহেরু ও পাকিস্তানের মাননীয় মি. জিন্নার হাতে তুলে দিয়ে৷ ভারতের মুসলমানদের সংখ্যা অনেক থাকায় নিছক হিন্দুদের রাষ্ট্র না ঘোষণা করে সংবিধান সকলের জন্য এই দেশকে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়৷ সেই গণতান্ত্রিক শাসনের আজ ৭৫ বছর পূর্ণ হয়ে গেল প্রায়৷

দেশভাগের ফলে সেই বিরাট ভারতবর্ষটাই খণ্ডখণ্ড হলো আর পাকিস্তানে বসবাসকারী অমুসলমানগণ নির্মমভাবে বিতাড়িত হয়ে এই ভারতযুক্ত রাষ্ট্র নামে ঘোষিত অংশে এলো নিছক উদ্বাস্তু হয়ে নিজেদের মাতৃভূমি হারিয়ে৷  তাতে এই ভারত যুক্তরাষ্ট্রটা অত্যধিক জনসংখ্যায় আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে হয়ে গেল অত্যন্ত  দুর্বল ও সমস্যা সংকূল এক বিরাট দেশ৷ এটাই হলো অতি চতুর ইংরেজ সরকারের দেওয়া স্বাধীনতা আর সেই চিরকালই স্বাধীন ভারত হয়ে রইল ইংরেজের কমনওয়েলথের সদস্য হিসাবে৷ এদিকে  ভারতের  মুষ্টিমেয় ধনীরা আরো ধনী হলো কারণ তারাই দলগুলির রক্ষাকর্তা৷ অর্থ দিয়ে তারাই রাজনৈতিক দলগুলি বাঁচিয়ে রেখেছে আর সাধারণ নির্বাচনে টাকা ঢালছে৷ ধনী ব্যবসাদারগণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে গরিব মারার কল খুলেছে৷ তাদের সেবক হয়ে বসেছে রাজনৈতিক দলের শাসকেরা৷ নামে গণতন্ত্রের শাসকমাত্র ঐসব দলছুট নেতা যাঁরা মন্ত্রী হয়ে বসেছেন রাজ্যগুলিতে ও বিশেষ করে কেন্দ্রের দিল্লীর সিংহাসনে৷

অতীতের মুনি ঋষিগণের আদর্শ ভুলে গেলে চলবে না কারণ তাঁরা সমগ্র মানুষকে অমৃতের সন্তান বলে ঘোষনা করে গেছেন৷ তাই মানবতাকে রক্ষা করতেই হবে৷ কারণ  ভারতবর্ষ বাঁচলে তবেই পৃথিবী বাঁচবে৷

তাই ভারতের মানবতাবাদ ও বিশ্বৈকতাবাদকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে হবে ভারতীয়দেরই৷ যেমন করেছিলেন অতীতে স্বামী বিবেকানন্দ-এর মতো বিশ্ববরেণ্য মহানায়করা৷ এ কাজে ব্রতী  হতে হবে ভারতবর্ষের সন্তানদেরই৷ তাই ভারতকে এমনভাবে সেবা দিয়ে উন্নত করতে হবে যা ভারতীয় যুবক-যুবতীদের দেখে সারা পৃথিবী এগিয়ে আসবে, বিশ্ববোধে উদ্বুদ্ধ হবে৷

তাই যারা নিছক দলবাজি করে দেশ ও দশের স্বার্থ ভুলে নিজেদের দলীয় স্বার্থকে চরিতার্থ করে চলেছে সেটার দিকে নজর দিতে হবে৷  বিশ্বকে লড়াই ও বিশ্বযুদ্ধ থেকে বাঁচিয়ে সার্থক পৃথিবী গড়ে তোলার সংকল্প নিতে হবেই ভারতীয়দের৷ ভোগবাদ আর জড়বাদ কখনোই সার্থক মানুষের জীবনে এর লক্ষ্য হতে পারে না৷

স্মরণে রাখতে হবে সাম্প্রদায়িকতা ও জাত পাতের ভিত্তিতে সমাজকে ভাগ করে যারা দেশ শাসন করে দলবাজীতেই মত্ত তাঁরা কখনোই মানবতাবাদী ও জগতের সেবক হতে পারে না৷