‘সৎ’ কী ও ‘অসৎ’ কী– এ সম্পর্কে যে বিচারৰোধ তাকে সদাসৎ বিবেক বলে, যা ‘সৎ’–কে ‘অসৎ’ থেকে ও ‘অসৎ’–কে ‘সৎ’ থেকে পৃথক করে দেয়৷ ‘সৎ’ কী? লৌকিক ভাষায় ‘সৎ’ মানে ভালো– সৎ ব্যষ্টি, সজ্জন ব্যষ্টি৷ আর আধ্যাত্মিক অর্থে ‘সৎ’ মানে অপরিণামী সত্তা– যাতে কোনো পরিবর্তন হয় না৷ আর ‘অসৎ’ মানে যা পরিণামী, যার অবস্থান্তর ঘটে৷ ‘সৎ’ বস্তু একই, বাদবাকী সব অসৎ৷ ‘অসৎ’ মানে খারাপ নয়, পরিবর্তনশীল৷
প্রকৃতি যেখানে ক্রিয়াশীলা সেখানে দেশ–কাল–পাত্র গত ভেদ আছে৷ কোনো বস্তুতে যখন দৈশিক, কালিক অথবা পাত্রিক ভেদ এসে যায় তখন তা পরিবর্ত্তিত হয়ে যায়৷ অর্থাৎ আগের রূপ আর থাকে না৷ আর, এই যে বাস্তব জগৎ, এখানে সবকিছুই দেশ–কাল–পাত্রের ওপর নির্ভরশীল, সবকিছু আপেক্ষিক, কারণ যুক্ত৷ ব্যক্তজগতে আমরা যা কিছু দেখি তার কারণ আছে, কী করে হ’ল তার কারণ আছে খুঁজলে কারণ পাওয়া যাবে৷ কোনো পরিণাম দেখে মানুষ যখন তার কারণ খোঁজে, তখন খুঁজতে খুঁজতে মূল কারণে পঁৌছে যায়৷ এফেক্ট থেকে কজ........এফেক্ট থেকে কজ.......এফেক্ট থেকে কজ করতে করতে যখন আমরা মূল কারণে পঁৌছাই– যার পরে আর কোনো কারণ পাই না– সেটা হ’ল সুপ্রীম কজ– তিনিই পরমাত্মা৷ একেই বলে জ্ঞানবিচার৷ কিন্তু এ ধরনের জ্ঞানচর্চার দ্বারা মানুষ পরমাত্মাকে পেতে পারে না৷ কারণ, কার্য থেকে কারণ.........কার্য থেকে কারণ করে করে মানুষ আর কত দূর যেতে পারে এরজন্যে কমপক্ষে কয়েক কোটি জন্মের দরকার৷ এটা কেউই চাইবে না৷
যেমন ধর, ‘অ’ একজন ভালো মানুষ৷ ‘অ’র ছেলে ‘ৰ’, ‘ৰ’–র ছেলে ‘স’, ‘স’–র ছেলে ‘দ’, ‘দ’–র ছেলে ‘ক’–মনে কর ‘ক’–র সঙ্গে তোমার পরিচয় হ’ল৷ এখন পেছনের দিকে চল৷ ‘ক’–র পরে ‘দ’–তে পঁৌছাও৷ শ্রীশ্যামাচরণ, তাঁর পিতা হরিচরণ, তাঁর পিতা যদুনাথ, যদুনাথের পিতা জগন্নাথ, এই করতে করতে শ্রী ‘অ’ যিনি, তিনিই আদি পরমাত্মা৷ এমন করে কত পেছনে চলবে? কিন্তু এর নামই জ্ঞানচর্চা৷ অবশেষে পেছনের দিকে চলতে চলতে মানুষ এমন কারণে পঁৌছে যায় যে কাজের পেছনে আর কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না–অর্থাৎ একটা কারণ রহিত প্সু–ন্তুত্রব্দব্ভ্ত্রপ্ত্ ন্দ্বুব্ধন্ব্ধম্ভগ্গ সত্তায় পৌঁছে যাই৷ এটা কেমন? যেমন, গাছ গাছের কারণ কী? একটা ৰীজ৷ এই ৰীজের কারণ কী– আর একটা গাছ, তার কারণ আর একটা ৰীজ৷ এমনি দেখতে দেখতে এমন একটা ৰীজ আছে যার কারণ গাছ নয়, মানুষ৷ আরও পেছনে চলে যাও৷ মানুষটির লৌকিক পিতা হলেন আর একজন মানুষ, তাঁর লৌকিক পিতা হলেন আর একজন মানুষ.......এমনি করে চলতে চলতে দেখবে সেই যে শেষের মানুষটি তাঁর পিতা মানুষ নয়– তাঁর পিতা ছিলেন অষ্ট্রালোপোথিসিয়ান নামক এক বানর জাতির পশু৷ যত অষ্ট্রালোপোথিসিয়ান ছিল তাদের যে সন্তান হতো সবাই অষ্ট্রালোপোথিসিয়ান, কিন্তু হঠাৎ দেখা গেল একটা অষ্ট্রালোপোথিসিয়ানের যে সন্তান তার হাত একটু ছোট, ক্রেনিয়ম– যাতে মস্তিষ্ক থাকে– একটু বড় হয়ে গেছে৷ সামনে সে ততটা ঝোঁকে না, কিছুটা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ শরীরে রোঁয়াও বেশী নেই ৰুদ্ধি কিছুটা বেড়ে গেছে, অভিব্যক্তি শক্তি কিছুটা বেশী হয়ে গেছে.......আর অন্য অষ্ট্রালোপোথিসিয়ান যত ছিল, সব চিৎকার করে বলতে লাগল– দেখ, দেখ, এর সন্তান তো অদ্ভূত রকমের৷ আমাদের মত নয়, কেমন যেন হয়ে গেছে৷ চারদিকে সাড়া পড়ে গেল৷ সে–ই ছিল প্রথম মানুষ৷ ঠিক তেমনি অষ্ট্রালোপোথিসিয়ানের পিতা অষ্ট্রালোপোথিসিয়ান, তার পিতা অষ্ট্রালোপোথিসিয়ান৷ তন্ত্রে একে বলে ‘স্বরূপ পরিণাম’ ব্দন্প্পন্প্ত্ত্রব্জ ন্দ্বন্দ্রন্দ্রন্দ্বন্তুব্৷ এমনি হতে হতে একটা ‘অসমান পরিণাম’ স্তুন্ব্দব্দন্প্পন্প্ত্ত্র ন্দ্বন্দ্রন্দ্রন্দ্বন্তুব্ হয়ে যায়৷ আমরা পৃথিবীতে এমন ধরনের অনেক কিছুই দেখতে পাই৷ অনেক জীবও এ ধরনের হয়৷
এদিকে ‘খেসারী’ নামে এক ধরনের ডাল হয়– যার কোনো ইংরেজী প্রতিশব্দ নেই৷ অরহরের মত ছোট ছোট হয়, কিছুটা গন্ধ থাকে৷ এটাও কোনো পুরাতন ডাল নয়৷ দেড়–দু’শ বছর আগে বিহারে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল৷ সেখানকার মুখ্য ফসল হ’ল ধান৷ এক বছর বৃষ্টি হ’ল অক্টোবর মাসে৷ সে সময় ধানের ৰীজতলা ছিল না৷ জলের অভাবে সব জ্বলে গেল৷ বৃষ্টি হতে, তা পচে গিয়ে তা থেকে খেসারীর জন্ম হ’ল৷ এই হ’ল খেসারীর ইতিহাস৷ এটা কী? এটা হ’ল ‘স্বরূপ পরিণামে’র এক ব্যুৎপত্তি স্তুন্দ্বব্জন্ল্ত্রব্ধন্প্৷ এইভাবে আসতে আসতে যখন আমরা মূল কারণে এসে যাই, যার পেছনে আর অন্য কোনো কারণ পাই না অর্থাৎ কার্য–কারণ সিদ্ধান্ত যেখানে শেষ হয়ে যায়, তা–ই হ’ল কারণ–রহিত সত্তা প্সু–ন্তুত্রব্দব্ভ্ত্রপ্ত্৷ এই কারণ–রহিত সত্তাতেও তোমরা দেখবে উপাদান চাই৷ একটা মূল উপাদান ব্জব্ভস্তুন্প্পন্দ্বুব্ধ্ত্ ব্দব্ধব্ভন্দ্রন্দ্রগ্গ থেকে সবকিছু হবে আর দরকার এক কর্মকারী তত্ত্ব প্সহ্মন্দ্বব্জ্ত্রব্ধন্ল্ হ্মব্জনুন্তুন্হ্মপ্তন্দ্ – যার দ্বারা তৈরী হবে৷ তা মূলে দু’টো তত্ত্ব পাওয়া যায়৷ এই যে রুডিমেন্টাল বা ফাণ্ডামেন্টাল ষ্টাফ যার পেছনে আমরা আর কোনো কারণ খুঁজে পাই না, তন্ত্রে তাকে বলা হয় আদি পিতা বা আদি পুরুষ৷ আর যে কার্যকরী শক্তি প্সহ্মন্দ্বব্জ্ত্রব্ধন্ল্ হ্মব্জনুন্তুন্হ্মপ্তন্দ্ সবকিছু তৈরী করে তাকে বলা হয় আদ্যাশক্তি৷
এই আদি পুরুষ বা আদ্যাশক্তি কার্য–কারণ শক্তির দ্বারা পরিচালিত হন না৷ তাই সৎবস্তু এক–ই, আর তিনি হলেন পরমপুরুষ– তাঁর পিছনে কোনো কারণ সত্তা কাজ করে না৷ কারণ সত্তা সেখানেই কাজ করে যেখানে প্রকৃতি ব্যক্তা৷ তিনি ছাড়া বাকী সব বস্তুতেই কার্য–কারণ তত্ত্ব কাজ করবে৷ এর থেকে নিস্তার পাওয়ার কোনো উপায় নেই৷ কার্য–কারণ তত্ত্বের জন্যে বস্তুর মধ্যে যে পরিবর্তন আসে, তাকে বলে মৃত্যু৷ মৃত্যু মানে ‘চেঞ্জ অব্ কণ্ডিশন’–এক অবস্থা ছিল, অন্য অবস্থা এসে গেল৷ এক্ষেত্রে বলব পূর্ব অবস্থার মৃত্যু হ’ল৷ ‘মৃত্যু’ মানে পরিবর্তন, বৈবহারিক জগতে যা অবশ্যম্ভাবী৷ কারণ সেখানে কার্য–কারণ তত্ত্ব কাজ করতে থাকবে৷ মানুষ বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার দ্বারা বা ৰুদ্ধি সম্প্রয়োগের দ্বারা এই পরিবর্তনকে অল্প কিছুটা বিলম্বিত করতে পারে মাত্র৷