সততার সাধক

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের নাম তোমরা সকলেই শুনেছো---তাই না? তিনি একটি পত্রিকা পরিচালনা করতেন৷ পত্রিকাটির নাম ‘নারায়ণ’৷ তাতে লিখতেন তৎকালীন বড় বড় নামজাদা লেখকরা৷ একবার এক খ্যাতনামা উপন্যাসিকও সেই পত্রিকায় কয়েকটি মূল্যবান প্রবন্ধ লিখলেন৷ প্রবন্ধগুলোর বিষয়বস্তু ছিল রাজনৈতিক৷ যেমন ‘শিক্ষার বিরোধ’, ‘মহাত্মাজী’ ইত্যাদি৷

‘নারায়ণ’-পত্রিকায় যারা লিখতেন দেশবন্ধু তাদের প্রত্যেককেই টাকা দিতেন৷ কিন্তু সেই উপন্যাসিককে টাকা দিতে গিয়ে তিনি মহামুশকিলে পড়লেন৷ অতোগুলো শক্তিশালী লেখার জন্য ঠিক কত টাকা দেওয়া উচিত তা তিনি স্থির করতে পারলেন না৷ কিছুদিন ভেবেচিন্তে অবশেষে তিনি এক অদ্ভুত কাজ করে বসলেন৷ টাকার ঘরটা শূন্য রেখে গোটা চেকটাই পাঠিয়ে দিলেন উপন্যাসিকের কাছে৷ উপন্যাসিক এবার ইচ্ছামতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে নিতে পারেন৷

চেকখানি হাতে পেয়ে যৎপরোনাস্তি বিস্মিত হলেন উপন্যাসিক৷ কত সরল মনে, মানুষের প্রতি কতখানি বিশ্বাস নিয়ে দেশবন্ধু এ কাজ করেছেন তা ভেবে তিনি সত্যিই মুগ্ধ হলেন৷ পরমূহূর্তে আবার ভাবলেন, এটাই তো স্বাভাবিক, মানুষ মানুষকে বিশ্বাস করবে না তো কি পশুকে করবে?

যাইহোক, নির্দিষ্ট দিনে চেকে টাকার ঘরে ন্যায্য সংখ্যা বসিয়ে ব্যাঙ্কে গেলেন৷ চেক ভাঙবার সময় দেখা হলো এখ বন্ধুর সাথে৷ বন্ধু সব শুনে জিজ্ঞেস করলেন, তা চেকে তুমি কত লিখেছো?

উপন্যাসিক বললেন, একশ টাকা৷ ‘মাত্র! ঠোঁট বেঁকিয়ে বন্ধুটি বললেন, তুমি দেখছি নিতান্তই বেকুব৷ আরে দেশবন্ধুর কি টাকার অভাব? কম করে পাঁচশ’ লেখা উচিত ছিল৷’

উপন্যাসিক এবার একটু গম্ভীর হয়ে গেলেন৷ বললেন, ‘দেখো, পাঁচশ লিখলে চিত্তবাবুর থলির ওয়েট বিশেষ কিছুই কমতোনা জানি এবং তার চিত্তেও এতটুকু আঁচড় পড়তোনা, কিন্তু তাতে করে আমার চিত্তে যে কালি পড়তো তা মুছবার উপায় তুমি আমায় বাৎলে দিতে পারো’?

বন্ধুটি নীরব৷ লজ্জায় মাথা হেঁট৷ কিছুক্ষণ পরে আমতা আমতা করে অন্য প্রসংগ তুলে পালিয়ে গেলেন৷ বলতো কে এই উপন্যাসিকটি? উপন্যাসিকই হলেন আমাদের শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়৷ তাঁর জীবনী পড়ে তাঁর যে জিনিসটি দেখে আমি মুগ্দ হয়েছি তা হলো তাঁর সততার সাধনা৷ তোমরা কি পারবে না এইরকম সততার পরিচয় দিতে?