‘কুলাল’–এর একটি অর্থ হচ্ছে শিল্পগত বা ভাবগত বা আদর্শগত ব্যাপারে যাঁর বৈদগ্ধ্যিক স্বাতন্ত্র্য রয়েছে ও যিনি তদনুযায়ী পরিকল্পনা করে এগিয়ে চলেছেন৷ এই ধরণের স্বাতন্ত্র্য বা পরিকল্পনা–মুখরতা ভীত হয়ে অনেকেই–বিশেষ করে বিরুদ্ধবাদী মতবাদের বাহকেরা অনেক সময় অযথা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন ও কুলালের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন৷ এ ব্যাপারে বিচারকের বা সমালোচকের তটস্থ ৰুদ্ধি নিয়েই গবেষণা চালাতে হৰে৷
ভারতের স্বাধীনতার প্রাক্কালে যে উদগ্র কুলাল–চেতনা এখানকার জনমতকে আলোড়িত, আন্দোলিত ও প্রমথিত করেছিল সেটা ছিল রাজনৈতিক জগতে সুভাষ ৰোসের কৌলালিক ভূমিকা৷ যাঁরা বিচার–বিমর্ষে নিরপেক্ষ হয়ে থাকতে ভালবাসেন তাঁদের আজ জিনিসটা অনুধাবন করবার দিন এসেছে৷ সেকালের ভারতের নেতৃবর্গের প্রতি তিলমাত্র অশ্রদ্ধা না জানিয়েই ৰলতে পারি, তাঁদের মধ্যে সমাজচেতনা ও বৈপ্লবিক চেতনার অভাব তো ছিলই, কোন দৃঢ়নিৰদ্ধ অর্থনৈতিক চেতনা বা সংরচনাগত কুলালত্বও ছিল না৷ তাঁরা চেয়েছিলেন, বিভিন্নভাবে জনমত গড়ে তুলে ৰ্রিটিশকে তিক্ত–বিরক্ত করে তাঁদের হাত থেকে স্বাধীনতারূপী ফসলটি আলতোভাবে কাস্তে চালিয়েই তুলে নিয়ে মরাই–জাত করে নেওয়া৷ এতে সাপও মরৰে না.....লাঠিও ভাঙ্গবে না৷ যারা ভাবেন, অহিংসানীতি কোন নীতিই নয়, ........অনন্যোপায় মানুষের একটি রাজনৈতিক চাল তাঁদের মনে রাখা উচিত যে সেদিনের নেতাদের সেই মানসিকতা ঠিক অনন্যোপায় অবস্থা–প্রসূত ছিল না৷ জনগণের ওপর তাঁদের যে প্রভাব ছিল সেই প্রভাবের সাহায্যে তাঁরা গণচেতনাকে ব্যাপকভাবে আন্দোলিত করে স্বাধীনতা হাসিল করার চেষ্টা করতে পারতেন৷ একথা অনস্বীকার্য যে মহাত্মা গান্ধী গণজাগরণ আনিয়েছিলেন কিন্তু উদ্বুদ্ধ গণচেতনাকে সংগ্রামের পথে পরিচালনা করেন নি৷ ৰলতে পারা যায় যে তাঁদের সকল নীতির মৌলিকত্ব একধরণের নেতিবাদে ও সংগ্রামের পথে পরিচালনা করেন নি৷ ৰলতে পারা যায় যে তাঁদের সকল নীতির মৌলিকত্ব একধরণের নেতিবাদে ও সংগ্রামহীনতাতেই আবর্ত্তিত ছিল৷ সুভাষ ৰোসের কুলালত্ব ভিন্নধর্মী৷ তিনি চেয়েছিলেন অবস্থার সুযোগ নিয়ে, আরও স্পষ্ট ৰাংলায় ঝোপ ৰুঝে কোপ মেরে প্রতিপক্ষকে বিবশ করে স্বাধীনতা হাসিল করা৷ এইখানেই ছিল তাঁর তৎকালীণ নেতৃত্বের সঙ্গে কুলালত্বগত বিরোধ বা বৈষম্য৷
গান্ধীবাদের তথাকথিত অহিংসা–মন্ত্রে সরলতার ষোল আনা অভাব না থাকলেও কিছুটা অভাব ছিল৷ বৈয়ষ্টিক জীবনে গান্ধীজী যতটা সরল ছিলেন হয়তো বা তাঁর অনুগামীরা ততটা ছিলেন না যার ফলে এই কুলালত্বগত ভেদটা লোকলোচনে আরও প্রকট হয়ে উঠেছিল৷ কংগ্রেস সভাপতি পদে (কংগ্রেস সভাপতিকে সেকালে রাষ্ট্রপতি ৰলা হত৷ ৰলাটা একটু হাস্যকর নয় কি! রাষ্ট্রই নেই, তার আবার রাষ্ট্রপতি! মাথা নেই, তার মাথার মুকুট!) পট্টভি সীতারামাইয়ার সঙ্গে সুভাষ ৰোসের যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল তা ছিল এই কুলালত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতা৷ গান্ধীজী সরল মানুষ ছিলেন৷ তাই সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুভাষ ৰোসের জয়ে তথা সীতারামাইয়ার পরাজয়ে তিনি স্পষ্ট ভাষাতেই ৰলেছিলেন–সীতারামাইয়ার পরাজয় আমার পরাজয় (ত্রন্ব্ধ্ত্রব্জ্ত্রপ্প্ত্রন্ স্তুন্দ্বন্দ্রন্দ্ব্ত্রব্ধ ন্ব্দ প্পম্ভ স্তুন্দ্বন্দ্রন্দ্ব্ত্রব্ধ)৷ সুভাষ ৰোস গান্ধীজীর সঙ্গে এই কুলালত্বগত বিষমতাকে কখনও বৈয়ষ্টিক স্তরে নেৰে আসতে দেননি৷ গান্ধীজীও তা’ দেননি৷ কিন্তু কংগ্রেসের কিছু উচ্চাশাবাদী (প্পত্ব্ন্ব্ধন্প্সব্ভব্দ) নেতা তা’ দিয়েছিলেন৷ আর তাঁদের এই বৈয়ষ্টিক গরলের অভিপ্রকাশ তথা অহিংসার অজগর–পাশ সুভাষ ৰোসের দেশত্যাগের অনেক কারণের মধ্যে একটি কারণ৷ রাজনীতির মর্মমূলে প্রবেশ না করেও ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে অথবা ভিন্ন ধরণের উদ্দেশ্য–প্রণোদিত হয়ে যারা সুভাষ ৰোসকে কুলঘ্ণ বা ভ্রান্ত দেশপ্রেমিক (প্পন্ব্দন্ধব্ভন্স্তুন্দ্ব্ হ্ম্ত্রব্ধব্জন্প্সব্ধ) ৰলত তারা হয়তো এটুকু খতিয়েও দেখেনি যে দৈশিক স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে অর্থনৈতিক মতবাদে ভিন্নমেরু হওয়া সত্ত্বেও রুশের সঙ্গে ৰ্রিটেন, ফ্রান্স ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র যদি এক পঙ্ক্তিতে বসে ফলার করতে পারে তাহলে একটি সামরিক শক্তিবিহীন স্বাধীনতাকামী দেশের পক্ষে অক্ষ শক্তির (জার্মানী, জাপান ও ইতালী) সহায়তা নিয়ে সুভাষ ৰোস এমন কি মহাভারত অশুদ্ধ করেছিলেন! আসলে যুদ্ধটা তো ছিল দু’টি সাম্রাজ্যবাদী তথা সম্প্রসারণবাদী শক্তির মধ্যে৷ কোন পক্ষই গঙ্গাজলে ধোয়া তাঁৰা–তুলসীপাতা ছিল না৷ দেশের স্বাধীনতার জন্যে সুভাষ ৰোস যে পক্ষেই যোগদান করতেন, প্রতিপক্ষ তাঁকে নিন্দা করতই৷ যাঁরা সুভাষ ৰোসের কর্মপন্থা বা ভাব–সরণকে সুভাষবাদ ৰলেন তাঁরা ভুল করেন৷ ‘সুভাষবাদ’ ৰলে কোন মতবাদ নেই৷ সুভাষ বোস দেশের স্বাধীনতা চেয়েছিলেন.....আর তা চেয়েছিলেন উদগ্রভাবেই৷ তাই তিনি এ ব্যাপারে প্রকৃত সুযোগ–সন্ধানীর ভূমিকাতেই নেৰেছিলেন৷ এতে কেউ যদি তাঁর নিন্দা করে তাহলে ৰুঝতে হৰে সে রাজনৈতিক জীবনে গায়ে আঁচড়টি না লাগিয়েই সস্তায় কিস্তী মাৎ করতে চেয়েছিল৷