শুধু ক্ষমতার হাত বদলে দেশ বাঁচবে না - বস্তা পচা অর্থনীতির ভোল বদল চাই

লেখক
আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

২০২৪ সালের নির্বাচনে মোদি সরকারের পতন ঘটাতে দেশের প্রধান বিরোধী দলগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইন্ডিয়া নামে মহাজোট ঘটন করেছে৷ যদিও  নির্বাচনের সময় পশ্চিমবঙ্গের মত কিছু কিছু রাজ্যে জোট কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় থাকলেও এই জোট সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর অসৌজন্যমূলক মন্তব্যে একটা কথা স্পষ্ট এই জোট কেন্দ্রীয় শাসকদলের মনে আতঙ্ক ধরিয়েছে৷

বিভিন্ন রাজ্যে বিরোধী দলগুলির সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালকে ব্যবহার করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোদি সরকার যে দুর্ব্যবহার করছে, নানা অসাংবিধানিক উপায়ে সরকার ফেলার ষড়যন্ত্র করছে, আর্থিকভাবে পর্যদস্তু করার চেষ্টা করছে তাতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ণ উঠছে৷ এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলগুলি জোটবদ্ধ হয়েছে মোদি সরকারকে হটাতে৷ এতে মোদি সরকারের আতঙ্কের যথেষ্ট কারণ আছে৷ ২০১৯ সালের আসন সংখ্যার হিসাবে বিজেপি বড় জয় পেলেও ভোট পেয়েছিল মাত্র ৩৮ শতাংশের কাছাকাছি৷ তাই বিরোধী দলগুলি জোটবদ্ধ হলে বিজেপির আতঙ্কিত হবারই কথা৷

মোদি সরকার গেলে সাধারণ মানুষ সাময়িক স্বস্তি পাবে ঠিকই কিন্তু মানুষ আর্থিক দুরাবস্থা থেকে কতটা মুক্তি পাবে? ভারতবর্ষের মত দেশ যেখানে আজও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সামাজিক, অর্থনৈতিক রাজনৈতিক বিষয়ে শুধু অসচেতনই নয়, বরং অজ্ঞ বলাই ভালো৷ এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো ধনকুবেরদের হাতের পুতুল হয়ে যায়,কারণ নির্বাচনে জয়-পরাজয় জনমত অপেক্ষা অর্থের প্রভাব অনেক বেশী কার্যকর৷ তাই যে বা যারাই শাসন ক্ষমতায় আসুক নেপথ্য থেকে ধনকুবেরদের অঙ্গুলী হেলনেই তাদের চলতে হয়৷ তাই ক্ষমতার হাত বদল হলেও জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না৷ জনগণ যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই পড়ে থাকে৷ ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট মধ্যরাতে জাতীয় কংগ্রেসের ‘ব’কলমে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশীয় পুঁজিপতিদের হাতে৷ গত ৭৫ বছরে বেশ কয়েকবার ক্ষমতার হাত বদল হয়েছে, কিন্তু কোন সরকারই পুঁজিবাদ নির্ভর কেন্দ্রীত অর্থনৈতিক পরিকাঠামোয় পরিবর্তনের চিন্তা করেনি৷

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে কর কাঠামোয় পরিবর্তন এনে জিএসটি (গুড্‌স এণ্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স) চালু করেন৷ সম্প্রতি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অমিত মিত্রের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনকে লিখিত পত্রে স্পষ্ট হয়েছে একদিকে যেমন আর্থিকক্ষেত্রে অবাধ প্রতারনার দ্বার খুলে দিয়েছে তেমনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের গ্রাস করে নিচ্ছে বৃহৎ পুঁজির ব্যবসায়ীরা৷

রাজ্যসভায় মোদি সরকার এক তথ্য পেশ করে জানিয়েছে ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে জিএস.টি প্রতারনার পরিমান ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা৷ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে লিখিত পত্রে অমিত মিত্র জানিয়েছেন জি.এস.টিতে প্রতারনার এই অঙ্কটা হিমশৈলের চূড়া৷ প্রতারনার প্রকৃত তথ্য সামনে এলে অঙ্কটা কোথায় দাঁড়াবে তা কল্পনার অতীত৷ চিঠিতে এও জানিয়েছেন জি.এস.টি জটিলতার শিকার হচ্ছে ছোট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প৷ পাঁচ বছরেই জি.এস.টি-বিধি বদল হয়েছে ১২৯টি৷ এই হারে নিয়মের বদল মানিয়ে চলা ছোট শিল্পের পক্ষে সম্ভব নয়৷ এতে একটা কথা স্পষ্ট জি.এস.টির এই কারসাজি বৃহৎ পুঁজিপতি গোষ্ঠীর চক্রান্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে গিলে খাবার৷ ভারতবর্ষের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো এই পুঁজিপতিদের অঙ্গুলি হেলনেই চলে৷ তাই দিল্লীর সিংহাসনে পালা বদল হলেও জনগণের হাল বদল হয় না৷ বর্তমান অর্থনীতি প্রসঙ্গে প্রাউট প্রবক্তা বলেছেন---‘‘আজ অর্থনীতি বস্তাপচা তত্ত্ব কথার কচকচানি ছাড়া আর কিছুই নয়৷ একে অধিকতর বাস্তবমুখী করতে হবে৷ অর্থনীতি হবে একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ ও প্রয়োগ ভৌমিক বিজ্ঞান, আর একে বিশ্বের সর্বস্তরের মানুষ, সর্বজীবের তথা সর্ব অস্তিত্বের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে বিকশিত করতে হবে৷

বর্তমান সরকার মুখে ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ বললেও কাজে ‘সবকা সাথ পুঁজিপতিকা বিকাশ’ করে চলেছে৷ এই পরিস্থিতিতে শুধু রাজনৈতিক পালা বদল করলেই দেশ বাঁচবে না, দেশের জনগণের সার্বিক কল্যাণ করতে হলে অর্থনীতির ভোল বদল করতে হবে৷ এক্ষেত্রে প্রাউটই পথ দেখাবে৷

প্রাউটের বিকেন্দ্রিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় অর্থনীতির ভিত গড়ে উঠবে ব্লকস্তর থেকে৷ যার প্রাথমিক লক্ষ্য থাকবে প্রতিটি মানুষের হাতে জীবন ধারণের নূ্যনতম প্রয়োজন (অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা) পূর্ত্তির ক্রয়ক্ষমতা দেওয়া৷ এরপর সার্বিক বিকাশের জন্যে পরিকল্পনা গড়ে তুলতে হবে৷