স্বাস্থ্য বিজ্ঞান

বাঁশপাতাও তার ঔষধীয় গুণ

পরিচয় ও প্রজাতি ঃ তৃণ বর্গের সবচেয়ে বৃহৎ প্রজাতি হচ্ছে বাঁশ৷ জাওল বাঁশ, মুঠি বাঁশ, মূলী বাঁশ, তলতা বাঁশ, পলকা বাঁশ–এরা সবাই অতি দীর্ঘকায় তৃণ ছাড়া আর কিছুই নয়৷ সেই সকল বৃহৎ তৃণকে বাঁশ বলি যাদের ফুল–বীজ হোক না হোক, পাশ থেকে কোঁড় বের হয়, ঝুড়ি তৈরী হয় ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভেতরটা থাকে ফাঁপা৷ সাধারণতঃ যে সকল বাঁশ বেশী দীর্ঘকায় হয় তারা বেশী ফাঁপা৷ যে সকল বাঁশেরা ছোট (এই ধরনের বাঁশ থেকেই লাঠি তৈরী হয়) তারা আকারে অতি ৰৃহৎ হয় না–ওজনে হয় ভারী৷ গাছগুলিও লোহার মত শক্ত৷

শশা ও তার উপকারিতা

পরিচয় ও প্রজাতি ঃ তোমরা অনেকেই হয়ত জান যে শশা সৃষ্ট জগতের একটি প্রাচীন অবদান৷ মানুষের উদ্ভূতির অনেক আগেই শশা এসেছে এই জগতে৷ বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন আবহাওয়ায় এই ফলটিকে জন্মাতে দেখা যায়৷ সর্বত্রই এটি বেশ জনপ্রিয়৷ ইংরেজী ন্তুব্ভন্তুব্ভপ্পত্ব্ন্দ্ব্ শব্দটি আপাতদৃষ্টিতে এ্যাংলো–স্যাক্সন মূলের বলে মনে হলেও এটি একটি ৰ্রাইটন শব্দ৷ ইংরেজীর সহযোগী ভাষাগুলি কেউ কেউ এটি ব্যবহার করলেও এর উদ্ভূতি ব্রিটানিতে [Brittany-France]৷

পোস্তর গুণাগুণ

ওপিয়াম পপির বীজকোরক সাধারণ পপি থেকে বড় ও পুষ্ট৷ এর গা চিরে দিলে এর থেকে রস বা আঠা বেরোয়৷ তাই হল কাঁচা আফিং৷ এই ওপিয়াম পপির বীজকোরকে যে বীজ থাকে তার রঙ ফিকে ঘি–রঙের, তাকে আমরা পোস্ত বলে থাকি৷ কী অদ্ভুত ব্যাপার, পোস্তর বীজকোরকের আঠা বড় রকমের নেশা ও অধিক মাত্রায় সেবন করলে বড় রকমের বিষ, অথচ ভেতরকার বীজ পোস্তর দানা, যা একটি সত্ত্বগুণসম্পন্ন বস্তু, তা শরীরের স্নিগ্ধতা বজায় রাখতে সাহায্য করে৷

কৃশতা

কারণ ঃ শারীরিক কৃশতার কারণ নানাবিধ ঃ

১) দুর্বল বা অসুবস্থ পুং বা স্ত্রীবীজ থেকে যে সকল শিশুর দেহ সৃষ্টি হয়েছে, তারা স্বভাবতই শক্তিহীন ও কৃশকায় হয়ে থাকে৷

২) শিশু যদি যথেষ্ট পরিমাণে মাতৃস্তন্য না পায় সেক্ষেত্রেও সে সাধারণতঃ কৃশকায় হয়ে থাকে৷

৩) দারিদ্র্য নিবন্ধন যে সকল পিতা–মাতা সন্তান–সন্ততিদের জন্যে যথেষ্ট পরিমাণে দুগ্ধের ব্যবস্থা করতে পারেন না ও অল্প বয়স থেকে তদের জন্যে ভাত, ডাল বা সাবু–বার্লি দেওয়া হয়, তাদের যকৃৎ ও পরিপাক যন্ত্রগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা কৃশকায় হয়ে পড়ে৷

মানুষ, প্রকৃতি ও ঔষধ

খাদ্যের মাধ্যমে ঃ যে সকল ঔষধ অতিরিক্ত তিক্ত বা বিস্বাদ (সুজির মোহনভোগের সঙ্গে বিস্বাদ ঔষধ মিশিয়ে দিয়ে মোগল যুগে হেকিমরা তৈরী করতেন সুমধুর ‘হল্বা’, বাংলায় যাকে ভুল করে ‘হালুয়া’ উচ্চারণ করা হয়) সম্ভব ক্ষেত্রে সেগুলিকে রন্ধন করে ভাত বা অন্য কোন প্রধান খাদ্যের সঙ্গে মিশিয়ে মানুষ ঔষধ সেবনের এক নবতর পদ্ধতি আবিষ্কার করল৷ এই ভাবে ঔষধীয় গুণসম্পন্ন নিম্বপত্র (নিমপাতা), উৎসিকা (উচ্ছে), পটোল লতা (পলতা), গন্ধিকা (গাঁদাল) প্রভৃতি ঔষধকে মানুষ প্রধান খাদ্যের সঙ্গে, যেমন বাংলায় ভাতের সঙ্গে খেয়ে ঔষধের গুণ আহরণ করতে লাগল৷

তৃণভোজী জীব, মাংসাশী জীব, মানুষ

তোমরা জান জীবজন্তুরা মুখ্যতঃ তৃণভোজী (graminivorous) ও মাংসভোজী (carnivorous) –এই দু’টি মুখ্য শাখায় বিভক্ত৷ তৃণভোজীদের দাঁতগুলো থাকে মুক্তোর মত ধবধবে শাদা ও সাজানো৷ যারা মাংসভোজী জীব তাদের দাঁতগুলি হয় খোঁচা খোঁচা, ঈষৎ হল্দেটে অথবা লালচে মেশানো হলদেটে৷ মুখের দুই পাশে থাকে মাংস কাটবার কর্ত্তন দন্ত (canine teeth)৷

ভেজানো (বা অঙ্কুরিত) ছোলার উপকারিতা

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

ছোলার খোলা না ছাড়িয়ে জলে ভিজিয়ে ফুলিয়ে নিলে তাকে বলা হয় ‘সিক্তচনকং’৷ ছোলা কিছুটা গুরুপাক হলেও গুড়–আদার সঙ্গে ভিজে–ছোলা মিশিয়ে খেলে তা কিছুটা সহজ পাচ্য হয়৷ ‘লবণেন সহ সিক্তচনকং’–অর্থাৎ নুন দিয়ে ভিজে ছোলা  কিডনী রোগের ঔষধ৷ যাঁরা কোন কর্মে উৎসাহ পান না, যাঁরা দীর্ঘসূত্রী বা অলস, তাঁরা গুড়, ছোলা–ভিজে ও আদা একসঙ্গে কিছুদিন খেলে কর্মোদ্যম ফিরে পাবেন৷ যথেষ্ট খাদ্যগুণ–সমৃদ্ধ হওয়ায়, যাঁরা নিরামিষ আহার করেন, তাঁদের যদি পেটে সহ্য হয়, তবে সকালে নিয়মিতভাবে ভিজানো বা অঙ্কুরিত ছোলা খাওয়া খুবই উপকারী৷ ভিজে ছোলা পেট পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করে৷

বহুমূত্র (ডায়াবেটিস) রোগের নিরাময়

লক্ষণ ও কারণ ঃ প্রাচীনকালে ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগটিকে সংস্কৃতে মধুমেহ বলা হত৷ বহুমূত্র–ও বলা হত৷ তবে দু’টো এক নয়৷ বহুমূত্র মানে যে রোগে বারবার মূত্রত্যাগ করা হয়৷ মধুমেহ মানে মূত্রে শর্করার ভাগ বেড়ে যাওয়া৷ আসলে শর্করাযুক্ত বহুমূত্র রোগকে মধুমেহ বলা হয়৷ প্রাচীন বৈদ্যকশাস্ত্রে কোন পাত্রে মূত্র রেখে ওপরের অংশকে পৃথক করে, পৃথক ভাবে ওপরের অংশ ও নীচের অংশকে পরীক্ষা করা হত৷ তবেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যেত রোগীর মধুমেহ বা ডায়াবেটিস আছে কিনা৷ তারপর নিশ্চিত ভাবে রোগ ধরা পড়ত যখন কোন প্রকাশ্য স্থানে মূত্র (গুহ্যনিষ্যন্দ) ঢেলে দেওয়া হত৷ যদি দেখা যেত যে কিছু সময়ের মধ্যে তাতে পিঁপড়ে এসে বসেছে, তাতে নিঃসন্দেহ