পদ্মফুলের শোভা ও সৌন্দর্য্যে ও এর গন্ধে মউমাছি, ভ্রমরা, কীটপতঙ্গেরা আকৃষ্ট হয়৷ অন্যান্য পদ্মের তুলনায় শ্বেতপদ্মের গন্ধ বেশী৷ পদ্মের মধু (বিশেষ করে শ্বেতপদ্মের মধু) সর্ববিধ চক্ষূরোগের মহৌষধ বিশেষ করে চোখের মণি সংক্রান্ত রোগে৷ ৰাংলায় এই পদ্মমধু নিয়ে চর্চা হলে ভাল হয়৷ চক্ষূরোগে গোলাপ জলের ব্যবহার হিতকর৷ এছাড়া ফুলকপি ও গাজর চক্ষূরোগে প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে৷
পদ্মের পরাগ সর্পবিষের প্রতিষেধক
পদ্মের পরাগ বিশেষ করে শ্বেতপদ্মের পরাগ সর্পবিষের প্রতিষেধক৷ এ নিয়েও চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের গবেষণা করা উচিত৷ পদ্মের পরাগ থেকে অন্য ঔষধও তৈরী হয়৷ পদ্ম ফোটার সময় পদ্মের কেশর সংগ্রহ করে ঠিকভাবে রেখে দিতে হয়–কেননা প্রয়োজনের সময় প্রস্ফুটিত শ্বেতপদ্ম নাও পাওয়া যেতে পারে৷ এই কেশর ৰেটে রোগীকে খাইয়ে দিতে হয়৷
পদ্ম ৰীজ
পদ্মৰীজ মানুষের একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাদ্য৷ কশ্মীরে দেখেছি এই পদ্মের ৰীজ থেকে সুস্বাদু ডালনা ও কালিয়া তৈরী হয় কশ্মীরে পদ্মকে ৰলে পম্পোষ–এসেছে পদ্মপুষ্প থেকে৷ কশ্মীরে পদ্মের ডাটা থেকেও তরকারী তৈরী হয়৷ বাংলার শিশুরা সাগ্রহে পদ্মৰীজ খায়৷ তবে পদ্মৰীজের ব্যবহার ৰাংলার রন্ধনশালায় খুবই কম৷
অন্ধত্বের সম্ভাবনায়
চোখের সমস্যায় অন্ধত্বের সম্ভাবনা দেখা দিলে নিম্নোক্ত ঔষধ কাজে লাগবে ঃ গোল হরিতকি চূর্ণ, কালমেঘ (পাতার রস), বিশুদ্ধ নিম ফুলের বা পদ্মফুলের মধু–তিনটিই অর্দ্ধেক চামচ করে নিয়ে যে ঔষধ তৈরী হ’ল তা দিনে দু’বার সেব্য৷ দিনে কয়েকবার মুখে জল নিয়ে, জল মুখ থেকে না ফেলে চোখে অন্ততঃ ১২ বার জলের ঝাপটা দিলে সর্ববিধ চক্ষূরোগে ভাল ফল পাওয়া যায়৷
হাতিশুঁড়োর উপকারিতা
হাতিশুঁড়ো গ্রাম ৰাংলার পথে ঘাটে বর্ষায় প্রচুর পরিমাণে জন্মায়৷ হাতিশুঁড়ো পাতার রস (বাহ্যিক ব্যবহার) চক্ষূরোগের ঔষধ৷ চক্ষূরোগ ছাড়াও হাতিশুঁড়ো পাতার অন্য রোগে ব্যবহার আছে৷ আ–ফলা হাতিশুঁড়োর পাতা জলে ৰেটে প্রলেপ দিলে বা এর শেকড়ের ছাল ৰেটে প্রলেপ দিলে উপদংশের বাগীর (soft cancer) চিকিৎসায় সুফল পাওয়া যায়৷
চক্ষূব্যাধি বা Conjunctivites
ড্রপ্সুন্দব্ভুন্তুব্ধন্ল্ ব্যাধিটি নেগেটিব মাইক্রোবাইটাম সঞ্জাত৷ এই ধরনের নেগেটিব মাইক্রোবাইটাম মুখ্যতঃ রূপতন্মাত্রের দ্বারা বাহিত হয়৷ যার এই রোগ হয়েছে তার চোখের দিকে তাকানোর পর চোখ করকর করবার আগেই গুনে গুনে অন্ততঃ পঁচিশবার চোখে জলের ঝাপটা দিলে তবে সেই রোগ প্রতিরোধ করা যায়৷
ছানি পড়া
বেশী পরিমাণ স্নেহজাতীয় বস্তু ও শর্করা জাতীয় বস্তু খেলে পরিণত বয়সে, ৩৯ বৎসরের পরে মানুষের রক্তে শর্করার ভাগ ৰেড়ে যায়৷ রক্তে শর্করার ভাগ ৰাড়লে চোখে ছানি পড়ে৷ শর্করাধিক্যেরই একটি বিবর্ত্তিত তলানি থেকে আসে এই ছানি৷ ৩৯ বছর বয়সের পর চোখে ছানি পড়ুক বা না পড়ুক, রক্তে শর্করার আধিক্য হোক বা না হোক, রক্ত কিছুটা দুর্বল হয়ে যাওয়ায় দৃষ্টিশক্তির হেরফের হবেই–কারো বেশী, কারো কম৷ অনেককে তাই এই বয়সে ধনাত্মক শক্তির গ্গ চশমা নিতে হয়৷ এই যে চোখে সামান্য ত্রুটি যা সাধারণতঃ ৩৯ বছর বয়সে এসে থাকে, কথ্য বাংলায় তাকে ৰলে থাকি ‘চাল্শে’ (চল্লিশিয়া)৷
কচি তেলাকুচা পাতার রস চোখে ছানি হওয়ার শুরুর দিকে দিনে দু’–তিনবার করে দিলে উপকার পাওয়া যাবে৷
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’ থেকে)