ব্রাহ্মী–Bacopa monierri; Centella asiatica ঃ
ব্রাহ্মী ও তারই প্রজাতিবিশেষ থানকুনি ও থুন্কুড়ি (ভোজপুরীতে পাতাল নিম) প্রভৃতি শাকেরা স্নায়ুরোগের পুষ্টি বিধায়ক, স্মরণশক্তি ৰর্দ্ধক ও শুক্ররোগের ঔষধ৷ ব্রাহ্মী ও থানকুনি উভয়েরই পাতা ঔষধ হিসেবে ব্যবহূত হয়৷ স্নায়ুদৌর্বল্য রোগেও এটা উত্তম ঔষধ৷ সকল প্রকারের স্নায়বিক রোগ ও মানসিক ভারসাম্যহীনতা রোগে এর ব্যবহার আছে৷ ব্রাহ্মীঘৃত (অথবা ব্রাহ্মী সিরাপ) পরীক্ষার্থীদের বিশেষ সহায়ক৷ ব্রাহ্মী ও থানকুনি উভয়েই লতানে উদ্ভিদ৷
পেটের অসুখে থানকুনি ঃ থানকুনি পাতার রস চীনী সহ খেলে পেটের অসুখে ভাল ফল দেয়৷
ছাত্র–ছাত্রাদের স্মরণ শক্তি ৰাড়ানোর উপায় ঃ
(১) শাঁখালুর রস প্রত্যহ পান করা
(২)Repeatation- প্রয়োগ অর্থাৎ মুখস্থ করা বিষয় লেখা বা অন্যকে শোণানো
(৩) পাঠ্যবিষয় এমন ভাবে পড়া যাতে কানও শুণতে পায়
(৪) অধীত (পাঠ্য বিষয় যা আয়ত্ত করা হয়েছে) বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ catch-word একটা ছন্দের মধ্যে সাজিয়ে নিয়ে মনে রাখা
(৫) প্রাক্–প্রত্যুষে যখন বাহ্যিক পরিবেশ শান্ত থাকে তখন অবশ্যই পড়ার অভ্যাস তৈরী করা
(৬) কয়েকটি আসন যেমন মৎস্যমুদ্রা, জ্ঞানাসন, শশঙ্গাসন অভ্যাস করা (আচার্য শেখাবেন)
(৭) মাঝে মাঝে ব্রাহ্মী শাক, স্বল্প পরিমাণে তেঁতুল খাওয়া (৮) গুরুধ্যান৷
কলম্বী বা কলমী–Ipomoea reptans Linn.ঃ
‘ক’ মানে জল৷ ‘ক’–এতে বা জলে লম্বা হয়ে যে শুয়ে থাকে সে কলম্বী বা কলমী৷ ডাঙ্গার কলমী মানসিক উন্নতির পক্ষে ক্ষতিকারক কারণ সে তামসিক৷ জলের কলমীকেই কলম্বী বলা হবে–ডাঙ্গার কলমীকে নয়৷ ডাঙ্গার কলমীকে বলা হয় নালিতা শাক (নালিকা শাক নয়–নালিতা শাক বা নালতে শাক)৷ জলের কলমী সাত্ত্বিক৷ এটি একাধারে পেটকে ঠাণ্ডা রাখে, স্নায়ুকে সুস্থ রাখে, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষের মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে৷ (সাধারণতঃ অল্প তেলে রান্না করে মাঝে মাঝে খেলে ভাল ফল পাওয়া যায়৷) তবে ডাঙ্গার কলমী বা নালিতা শাক সর্বথা পরিত্যাজ্য–
‘‘কুসুম্ভনালিতা শাক–বৃন্তাকং পোতকীস্তথা
ভক্ষয়ন্ পতিতোস্তু স্যাদপি বেদান্তগঃ দ্বিজঃ৷৷’’
বর্ষাকালে লোকে কলমী শাক খায় না৷ বর্ষাকালে কলমী শাকের পাতায় ও ডাঁটায় এক ধরনের কীট জন্মায়৷ লোককে যুক্তি দিয়ে ৰোঝালেও অনেক সময় তারা মানতে–ৰুঝতে চায় না৷ তাই ভয় দেখিয়ে ৰলা হয় সোজা রথের দিন থেকে উল্টো রথের দিন পর্যন্ত জগন্নাথের জ্বর হয়৷ তিনি কলমী পাতায় শুয়ে থাকেন৷ তাই ওই সময় কলমী শাক খেতে নেই–খেলে পাপ হয়৷
অন্যান্য রোগে কলমী ঃ কলমী শাক, লাউ, ছাঁচি কুমড়ো সুপ্তিস্খলন ও যৌন অক্ষমতা তথা ক্লীবতা রোগে অত্যন্ত সুপথ্য৷ ‘‘কলমী শাকের ডগা ছেঁচে প্রত্যহ প্রত্যুষে এক ছটাক মাত্রায় পান করলে সিফিলিস বা উপদংশ রোগের ৰীজ বিনষ্ট হয়৷’’২৭
শুশুনি শাক–Blepharis edulis Pers. ঃ
শুশুনি বা শিখিও এক জলজ শাক৷ পুষ্করিণীর পার্শ্বদেশে অল্প জলে এর চাষ করতে হয়৷ প্রাচীন ৰাংলায় শুশুনি শব্দের অর্থ ছিল যে শুয়ে আছে৷ এই শাক খেলে ভাল রকমের নিদ্রা হয় বলেই একে এই নাম দেওয়া হয়েছিল৷ বাঁকুড়া জেলার ছাতনা থানায় শুশুনিয়া পাহাড় রয়েছে৷ দূরে থেকে দেখলে মনে হয় যেন কিছু শুয়ে রয়েছে৷ শুশুনি শাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে, তাই খেতে মিষ্টি মিষ্টি লাগে৷
Insomnia বা নিদ্রাহীনতা ব্যাধিতে এ মহৌষধ৷ মৃৎপাত্রে শুশুনি শাক রান্না করলে তার গুণ আরো বেশী হয়৷
ঘিয়ে ভাজা শুশুনি শাক পাকস্থলির ক্ষত ও আন্ত্রিক ক্ষত রোগে (ডেওডেনাল আলসার ও গ্যাসট্রিক আলসার) ও চক্ষূ রোগের উত্তম ঔষধ৷ শুশুনি শাকের পাতার রস দিয়ে তৈরী ঘৃত নিদ্রাহীনতায় ভাল কাজ দেয়৷ গীমা শাক–Mollugo oppositifolia Linn.ঃ
গীমা শাক লিবারের ঔষধ, রক্ত পরিষ্কারক, স্নায়ুর পক্ষে ও স্মৃতিশক্তির পক্ষে ভাল৷ এই শাক পেটের রোগ (উদরাময়), যকৃৎ ও শোথ রোগের পক্ষেও উপকারী৷ গীমা শাকের ফুল ভাতের সঙ্গে প্রথম পাতে খেলে মস্তিষ্কের পক্ষে খুবই উপকারী৷ এতে চর্মের বিবর্ণতা দোষও নষ্ট হয়৷
গীমা শাক রান্না করা তরকারী হিসেবে খেলেই ভাল ফল পাওয়া যায়৷ গীমা শাকের এই ব্যবহার কুষ্ঠ রোগেও ভাল ফল দেয়৷ শ্বেত কুষ্ঠ বা ধবল রোগীর পক্ষে গীমা, ব্রাহ্মী প্রভৃতি শাকের ব্যঞ্জন অত্যন্ত হিতকর৷ (‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’ থেকে)