লক্ষণ ঃ বার বার মলের বেগ আসা ও অল্প পরিমাণে মল নিঃসারিত হওয়া, কুন্থনের ইচ্ছা, নাভির নিকটে যন্ত্রণা প্রভৃতি৷
কারণ ঃ অজীর্ণ, অর্ধসিদ্ধ বা অসিদ্ধ মাংস বা দাল বা অনুরূপ বস্তু যখন উদরস্থ দূষিত বায়ুর সঙ্গে মিলিত হয়ে অন্ত্রে অস্বাভাবিক ধরণের প্রতিক্রিয়া ঘটায় ও পাচক পিত্তরস সমস্ত প্রচেষ্টার সাহায্যেও তাকে জীর্ণ করতে পারে না তখন সেই দূষিত বস্তুগুলি তরল ভেদাকারে নির্গত হয়ে যায়৷ কিন্তু এই তরল মল যদি স্বাভাবিক গতিপথ না পায় তখন তা অন্ত্রের অভ্যন্তরে বিশ্রী ভাবে পচতে আরম্ভ করে ও শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীগুলিকে পচাতে আরম্ভ করে, সে অবস্থায় শরীরের বিভিন্ন রসস্রাবী গ্রন্থগুলি অধিকতর পরিমাণে রসক্ষরণ করে দেহাভ্যন্তরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনবার চেষ্টায় রত হয়৷ ওই রসগুলি অজীর্ণ খাদ্য ও অভ্যন্তরস্থ অন্যান্য দূষিত বস্তুর সংস্পর্শে এসে কফাকার প্রাপ্ত হয়, আর তাই আমাশয় রোগীর মল কফযুক্ত হয়ে থাকে৷ এই কফ নিজে কোন রোগ নয়, এরা রোগ সারাবার প্রাকৃতিক ব্যবস্থা মাত্র৷
চিকিৎসা ঃ (আসন ও মুদ্রা)
প্রাতে ঃ উৎক্ষেপ মুদ্রা, পদহস্তাসন, অগ্ণিসার, উড্ডয়ন, আগ্ণেয়ী মুদ্রা বা আগ্ণেয়ী প্রাণায়াম৷
সন্ধ্যায় ঃ ওই৷
পথ্য ঃ আমাশয়ে খালি পেটে থাকা একেবারেই নিষিদ্ধ৷ সমস্ত রকমের ভাজা, পোড়া, দাল ও আমিষ খাদ্য ও ঘৃত, তৈল ও চর্বি জাতীয় জিনিস অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিত্যাগ করা উচিত৷ জ্বর থাক বা না থাক, রোগাক্রমণের প্রথমের দিকে নেবুর রস–মিশ্রিত (কমলা হলেই ভাল হয়) জল ব্যতীত আর কিছুই পান করা উচিত নয়৷ এই ভাবে দু’–এক দিন পাকস্থলীকে বিশ্রাম দেবার পর ধীরে ধীরে অন্যান্য খাদ্য গহণ করবে৷ টাটকা গরম ভাত আধ মিনিটের মত সময় জলে ভিজিয়ে তুলে নিয়ে তার সঙ্গে অল্প পটোল, গাঁদাল, তেলাকুচা বা থাককুনি পাতার ঝোল, ঘোল প্রভৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে৷ সর্বদা মনে রাখতে হবে যে এই রোগে ওষধ অপেক্ষা পথ্যে বেশী নজর রাখতে হয়৷ জলখাবার হিসাবে ইক্ষুগুড়ের সঙ্গে বেলপোড়া, অথবা সুপক্ক কলা খোসা ছাড়িয়ে ঘিয়ে ভেজে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ এই গুলি আহার ও ঔষধ দু’য়েরই কাজ করে৷ রোগ যাদের বেশী পুরোণো তারা রাত্রে (অবশ্যই রাত্রি ৯টার মধ্যে) সামান্য লবণ সহ গরম গরম নুচি খেতে পারে৷ জলখাবার হিসাবে পুরাতন রোগী গরম জিলিপি ব্যবহার করতে পারে৷ রোগী আহারের সময় খুব অল্প পরিমাণ (দু’ তোলার বেশী নয়) পুরাতন তেঁতুলের চাটনি, বিশেষ করে পাকা কলার সঙ্গে পুরাতন তেঁতুলের চাটনি ব্যবহার করলে বেশ সুফল পাবে৷
বিধি–নিষেধ ঃ আমাশয় রোগীর পক্ষে নিম্নোদরে ঠাণ্ডা লাগানো অত্যন্ত ক্ষতিকর৷ রোগীর পক্ষে দুগ্ধ অপেক্ষা দধি, ও দধি অপেক্ষা ঘোল বেশী উপকারী৷ রোগের বাড়াবাড়ি অবস্থায় তল পেটে ফ্লানেল জড়িয়ে রাখলে ফল ভাল হয়ে থাকে৷
কয়েকটি ব্যবস্থা ঃ
১) রোগের বাড়াবাড়ি অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে থাকলে প্রাতে, অথবা প্রাতে ও সন্ধ্যায় দু’বেলাই রোগীকে অল্প পরিমাণ দুর্বার রস বা কুক্সিমা (কুকুরশোঁকা) পাতার রস খাইয়ে দিলে বেশ সুফল পাওয়া যায়৷
২) সিকি তোলা বাবলা কুঁড়ি বাতাসার সঙ্গে পিষে চুষে চুষে খেলে আমাশয়ে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়৷
৩) আধ তোলা বটের ঝুরি (কচি অংশ) চাল–ধোয়া জলের সঙ্গে বেটে খেলে–
অথবা
৪) আমপাতা, জামপাতা ও আমরুল পাতার রস দু’তোলা আন্দাজ ছাগ দুগ্ধের সঙ্গে খেলে–
অথবা
৫) প্রাতে চীনী সহ কিছুটা আমরুল পাতার রস খালি পেটে খেলে–
অথবা
৬) একটু মৌরী, একটু মুসুরির ডাল সামান্য মিছরির সঙ্গে পাথরের বা কাঁচের পাত্রে পূর্ব দিন রাত্রে ভিজিয়ে রেখে পর দিন সকালে সেগুলিকে একত্রে বেটে সরবতের মত পানকরলে ও অনুরূপভাবে সকালে ভিজিয়ে রেখে সধ্যায় পান করলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিশেষ ফল পাওয়া যায়৷