অভিনব ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ

লেখক
বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়

 কথা দিয়ে কথা না রাখার ব্যাপারে রাজনীতিকদের জুড়ি মেলা ভার৷ এখনকার আমজনতা তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের কথা বা প্রতিশ্রুতি কে ততটা গুরুত্ব দেয়না৷ এমনকি সহজে কেউ বিশ্বাস ও করতে চায়না৷ এরকম একটা সময়ে লোকসভা নির্বাচনের আগে ঘাটালের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী দীপক অধিকারী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ঘোষণা করেন যত বোট vote) তিনি পাবেন তত গাছ তিনি লাগাবেন তাঁর সংসদীয় এলাকায় অর্থাৎ সাতটি বিধানসভা ক্ষেত্রে৷ এক্ষেত্রেও দীপক অধিকারীর প্রতিশ্রুতিকে তাঁর এলাকার বোটাররা voter) তেমন গুরুত্ব দেয়নি৷ অন্য আর পাঁচটা প্রতিশ্রুতির মতো এটাও বলে ধরে নেয় মানুষ৷ যাইহোক এবারের লোকসভা নির্বাচনেও তিনি জয়লাভ করে তৃতীয়বারের জন্য সাংসদ হয়েছেন৷ নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি তাঁর পূর্বের দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে ঘোষণা করেন - যত বৈধ বোট vote) ঘাটাল লোকসভার সব প্রার্থী মিলিতভাবে পেয়েছেন তত গাছ তিনি লাগাবেন আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে৷ তাঁর লক্ষ্য সবুজ ঘাটাল তৈরী করা৷ হিসেব করে দেখা গেছে তাঁকে মোট ১৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ১৬টি গাছ লাগাতে হবে৷ নির্বাচনের সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতি মত সেই কাজ শুরু হয়েছে ৯ই জুন সবং থেকে৷ সবং ছাড়া তাঁর সংসদীয় এলাকার অন্যত্রও তিনি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু করেছেন৷ পাশাপাশি গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ও নেবেন বলে জানিয়েছেন৷

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে যেখানে প্রতিনিয়ত জীবজগত নানান প্রতিকূলতার মুখোমুখি, সেইসময় আমাদের দেশের প্রথম কোনো সাংসদ পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়৷ ইতিপূর্বে আর কোনো নির্বাচন প্রার্থী বা সাংসদের মুখ থেকে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসার কথা শোনা যায় নি৷ এদিক থেকে বলা যেতে পারে পরিবেশ বিষয়ে দীপক অধিকারীর প্রচেষ্টা ও কর্মসূচি গ্রহণ অভিনব ও প্রশংসনীয়৷ বাংলায় আরও যে ৪১ জন সাংসদ রয়েছেন,দলমত নির্বিশেষে সবাই যদি এই একই রকম কর্মসূচি গ্রহণ করেন তাহলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলা পরিবেশ রক্ষায় অনেকটাই এগিয়ে যাবে৷ তাপপ্রবাহের হাত থেকে বাঁচতে বা অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও মরুভূমি সৃষ্টির সম্ভাবনা থেকে পরিবেশকে বাঁচানোর সহজতম ও প্রকৃষ্ট উপায় হল - ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপণ করা৷ তবে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতামত অবশ্যই নেওয়া প্রয়োজন জরুরী ভিত্তিতে কোন কোন বৃক্ষ লাগানো দরকার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে৷ সাথে সাথে নদী নালা খাল বিল পুকুরেরপাড়ে ব্যাপকভাবে গাছ লাগাতে হবে৷ জলাশয়ের পাড়ে অবশ্য ফলের গাছ লাগানো ভালো৷ এতে ভূমিক্ষয় রোধের পাশাপাশি মাটি সরস থাকবে ও জলাশয় গুলিতে সারা বছরই জল থাকবে৷

ঘাটালের সাংসদ দীপক অধিকারীর এই উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্য রাখতে হবে তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি শেষ পর্যন্ত পূরণ করলেন কিনা৷ তাঁর এই উদ্যোগ কে মডেল করে সারা দেশের সকল সাংসদ যদি সচেষ্ট হন পরিস্থিতি বদল হতে বাধ্য৷ আর বিশ্বের সামনে ভারত একটা নজির স্থাপন করবে৷ লাভ হবে পরিবেশের৷ বাঁচবে জীবজগত৷৷