আমার বাঙলা

লেখক
একর্ষি

পূর্ব প্রকাশিতের পর,

ইতিহাসের সুলুক সন্ধানে --- নানা তথ্য সূত্রে বুঝতে বাকি থাকে না যে বাঙালী জনগোষ্ঠী নিঃসন্দেহে পৃথিবীর অন্যতম অতি প্রাচীন সভ্য-সমুন্নত জনগোষ্ঠী৷ এই জনগোষ্ঠী একটা নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চল জুড়ে বহু সহস্রাব্দ ধরে রাজনৈতিক ভাঙাগড়া নিরপেক্ষে বসবাস করে আসছে৷ এই নির্দিষ্ট বিশিষ্ট স্বতন্ত্র ভূতাত্বিক সংরচনাগত ও ভৌগোলিক বা প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের অঞ্চলকে (সাবেক বাঙলাকে) প্রাকবৈদিক যুগে ভৌগোলিক বিভিন্নতা ও শাসনতান্ত্রিক সুবিধার্থে ‘পঞ্চগৌড়’ নামে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ ১) ভাগীরথীর পশ্চিমে রাঢ়, ২) ভাগীরথী ও মধুমতী মধ্যবর্তী অঞ্চলে সমতট বা বাগড়ি, ৩) পদ্মার উত্তরে বরেন্দ্র, ৪) মধুমতীর পূর্বে বঙ্গ বা ডবাক, ৫) পদ্মার উত্তরে ও কোশীর পশ্চিমে মিথিলা৷ এ ছাড়াও সবার পূর্বে ছিল উপবঙ্গ বা শ্রীভূমি৷ সবগুলো ভাগ নিয়েই একসঙ্গে বলা হোত ‘পঞ্চগৌড়’৷

গৌড় ও তার পাঁচটি ভাগের নামকরণেও ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে৷ প্রথমে আসা যাক গৌড় নামকরণে ৷ আদি বা সাবেক বাঙলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নাম হচ্ছে ‘গৌড়দেশ’৷ এককালে এই দেশ গুড় উৎপাদনে সারা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছিল তাই এই দেশকে নাম দেয়া হয়েছিল ‘গৌড়’৷ কত রকমের গুড়ই না এদেশে তৈরী হ’ত! আখের গুড়, খেজুর গুড়, তালের গুড়, নারকোল গড়, গোল গুর (গোল গাছের রস থেকে তৈরী), শাঁকালু গুড়, মহুয়া ফুলের গুড়৷ শুধু গুড় নয়,পাটাশ্যাওলার সাহায্যে নানান ধরণের ও মানের চীনীও তৈরী হ’ত৷ বিশ্বের বাজারে বিভিন্ন গুড় থেকে তৈরী চীনী, পাটালী বা নবাতের চাহিদাও ছিল খুব৷

পঞ্চ গৌড়ের আর এক নাম ছিল ‘পুণ্ড্র ’৷ পুণ্ড্র শব্দের মানে হচ্ছে ‘ইক্ষু’, বিশিষ্টার্থে ইক্ষু উৎপাদক দেশ, আর জনগোষ্ঠীটা হচ্ছে ‘পৌণ্ড্র’৷ তাই প্রাচীন বাংলাকে পুণ্ড্রভূমি বা পৌণ্ড্রবর্ধনও বলা হ’ত ৷

পঞ্চগৌড়ের পরিচয় জানতে তার উৎপত্তির ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসটাও অন্বেষার বিষয়৷ ভূপৃষ্টে --- তথা পৃথিবীর প্রাকৃতিক মানচিত্রে প্রায় পঁয়ষট্টি কোটি বৎসর পূর্বের একটা চিত্র৷ নিরক্ষরেখার উত্তরে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর প্রসারিত এক অগভীর মহাসাগর, নাম তার ‘টেথিস’৷ আর তার উত্তরে ও দক্ষিণে দুই আদি স্থলভাগ---উত্তরে ‘আঙ্গারাল্যাণ্ড’ ও দক্ষিণে ‘গণ্ডোয়ানাল্যাণ্ড’৷ কোটি কোটি বছর ধরে প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তির প্রভাবে টেথিসের দু’পাশের পার্বত্য স্থলভাগ ক্ষয় পেয়ে পেয়ে উচ্চতা হারাতে লাগল৷ আর ক্ষয়ীভূত পদার্থগুলো টেথিসের তলদেশে জমতে থাকল কটি কোটি বছর ধরে৷ এদিকে ক্ষয়প্রাপ্ত তরাঙ্গায়িত গঙ্গোয়ানার পূর্বাঞ্চল পরিচয় পেল ‘ রাঢ় ‘নামে, গিরিভূমি রাঢ়৷ (‘রাঢ় ’---প্রাচীন অষ্ট্রিক ভাষার শব্দ, মানে ---রক্তমৃত্তিকার দেশ )৷ এ রাঢ় অবশ্যই পশ্চিম রাঢ়৷ এও প্রায় ৩০কোটি বছর আগের ঘটনা৷ তারপর লক্ষ - লক্ষ, কোটি কোটি বছর কেটে গেল৷ পশ্চিম রাঢ়ের ওপর দিয়ে বয়ে আসা অনেক নদ - নদী - জলধারা নুড়ি-বালি-পলি বয়ে এনে গণ্ডোয়ানার পূবের, পশ্চিম রাঢ়ের পূর্বের সাগরের বুকে সঞ্চয় করে গড়ে তুলল পূর্ব রাঢ়৷ হিমালয়ের জন্ম তখনো হয়নি৷ পূর্ব রাঢ় গঠনের বহু কটি বছর পরে, আজ থেকে আনুমানিক দশ কোটি পছর পূর্বে, টেথিসের তলদেশে জমা হওয়া বিশাল পলিরাশির পাথরে রূপান্তরিত হয়ে তলদেশে প্রভূত চাপের সৃষ্টি করে৷ ফলে শুরু হয় গিরিজনি পক্রিয়া৷ প্রতিফল হসেবে, মহীখাত ও পাতসংস্থান তত্ত্ব অনুসারে টেথিসের বুক চিরে উঠে এল পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতমালা হিমালয়৷ তার অনেক পরে হিমালয় থেকে বেরিয়ে এলো গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ও অন্যান্য নদ নদী, সঙ্গে বহন করতে থাকল নুড়ি --- বালি - পলি, লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বছর ধরে সঞ্চয় করতে থাকল হিমালয় ও গণ্ডোয়ানাল্যাণ্ডের মধ্যবর্তী সাগরে ৷ সঞ্চিত পলি দুই উচ্চ ভূমির মাঝে তৈরি করল উত্তরভারত ও বিদেহ -বরেন্দ্রভূমি৷

নদ-নদীর ক্ষয়-বহন-সঞ্চয় কাজ তো চলতেই থাকে৷ বরেন্দ্রভূমি সৃষ্টি অনেক পরে রাঢ় থেকে উৎপন্ন নদ- নদী ও হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদ-নদী বাহিত পলিতে সৃষ্টি হল সমতট, তারপর একই প্রক্রিয়ায় তৈরী হল বঙ্গ-ডবাক৷ আরো পরে সৃষ্টি হল উপবঙ্গ বা শ্রীভূমি৷ মোট কথা, বাঙালীস্তানের ভূ-পরিচয়ে পশ্চিম রাঢ় সবচেয়ে প্রাচীন ভু-ভাগ--- কমপক্ষে ৩০কোটি বছরের প্রাচীন ভূ-খণ্ড৷ পূর্ব রাঢ়ের বয়স ১০ কোটিরও বেশী৷ কেননা তা হিমালয় সৃষ্টির আগেই তৈরী হয়ে গেছে৷ সেই তুলনায় বরেন্দ্র অনেক নবীন৷ সমতট---ডবাক -শ্রীভূমি আরো আরো অনেক নবীন৷ এই ভাবেই গড়ে উঠল পঞ্চগৌড়, বাঙালীস্তান,সাবেক বাঙলা৷ মোটকথা বাঙলা বিভিন্ন গিরিবেষ্টিত---নদীমেখলার নদীবাহিত পললভৌম দেশ৷ সম্ভবত এই কারণেই বৈদিকযুগে বাঙলাকে বঙ্গও বলা হ’ত, আবার মহাসংস্থানও বলা হ’ত৷বৌদ্ধযুগে পঞ্চগৌড় সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্ণিত হয়েছিল --- রাঢ়, সমতট, বঙ্গ, বরেন্দ্র, মিথিলা৷ আরো সুনির্দিষ্টভাবে নামকরণ করা হয়ে ছিল তৎকালীন পঞ্চগৌড়ের রাজধানী ‘মহাস্থানগড়’ নামের মাধ্যমে৷ স্থানটির ভগ্ণাবশেষ আজও রয়েছে বর্তমান বাঙলাদেশের বগুড়া জেলার করোতোয়া নদীর বেলাভূমিতে৷ তাই বাঙলা আর্যাবর্তের উপাঙ্গ নয়, বাঙলা মহাচীনের পরিশিষ্টাঙ্গও নয়, আবার বাঙলা অষ্ট্রিক-দ্রাবিড়ের একক পতাকাবাহীও নয়৷ বাঙলার পরিচিতি তার নদীমাতৃক অস্তিত্বেই নিহিত রয়েছে৷ ---এই মাটি তার স্বকীয়তায় ভস্বর, তার অস্তিত্বে প্রাণোচ্ছল৷ সে তার নিজের পরিচয়েই স্বয়ং সপূর্ণ৷                                           (চলবে )

12

পাকিস্তানের দূষণ ঠেকাতে নামানো হতে পারে কৃত্রিম বৃষ্টি

পি.এন.এ ঃ এ নিয়ে দ্বিতীয় বার লাহোরকে বিশ্বের দূষিত শহর বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷ শীতের আগে ঘন কুয়াশার আস্তরণে ঢেকেছে পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক রাজধানী৷ নিঃশ্বাস নিতেই কষ্ট হচ্ছে বাসিন্দাদের৷ চোখ জ্বালা, শরীরে প্রদাহের মতো শারীরিক সমস্যা হচ্ছে৷ এই পরিস্থিতিতে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করল প্রশাসন৷ মঙ্গলবার পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশ থেকে ওই কথা বলা হয়েছে৷

এখন লাহোরে বাতাসের গুণগত মান বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ৩৯৪৷ ভয়ানক দূষণের জন্য গত বছরেও এক বার কৃত্রিম উপায়ে মেঘ সৃষ্টি করা হয়েছিল লাহোরে৷ নামানো হয়েছিল বৃষ্টি৷ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরেও একিউআই ছিল ‘অতি ভয়ানক’৷ সে বার বৃষ্টি নামাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে পাকিস্তানকে৷ আবারও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে পাক প্রশাসন৷ সোমবারই লাহোরকে বিশ্বের দূষিত শহর বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷ একিউআই ছাড়িয়েছে ৩৯৪৷ একিউআই ৪৫০ ছাড়ালে দূষণের মাত্রা ‘অতি ভয়ানক’ বলে ধরা হয়৷ ওই অবস্থায় যাওয়ার আগে পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে প্রশাসন৷ পঞ্জাবের তথ্যমন্ত্রী আজমা বোখারি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি দেখে বেশ কিছু ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ আমরা কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর পরিকল্পনা করছি৷’’ যদিও কৃত্রিম বৃষ্টির তারিখ বলেননি তিনি৷

দূষণ ঠেকাতে ইতিমধ্যে ‘অ্যান্টি-স্মগ স্কোয়াড’ তৈরি করা হয়েছে৷ তারা দূষণ নিয়ন্ত্রণে নানা বিষয় দেখছে৷ কৃষকদের বোঝাচ্ছেন, তাঁরা যাতে নাড়া পোড়ানো বন্ধ রাখেন৷ এতে কেবল পরের বার চাষের ক্ষতিই হয় না, শিশুদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়৷ লাহোরবাসীদের বেশির ভাগই এখন ভুগছেন চোখের সমস্যায়৷ চোখ জ্বালা, ত্বকে জ্বালা, শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা, সর্দি-কাশি এখন ঘরে ঘরে৷ সকলেই খুঁজছেন পরিত্রাণ৷ তবে সাম্প্রতিক আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যে কৃত্রিম বৃষ্টি নামাতে আবার বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হবে প্রশাসনকে৷