আমেরিকায় ভারতীয় খুন---এ এক জঘন্য বর্ণবিদ্বেষ!!

আমেরিকার গণতন্ত্রে স্ট্যাচু অব্ লিবার্টি-র এক সময়ে যে মর্যাদা ও সম্মান ছিল সেটা কি ধীরে ধীরে অস্বীকৃত হচ্ছে৷ এ প্রশ্ণ আজ সারা বিশ্বের ভিন্ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে৷ কানসাসে ভারতীয় খুনের ঘটনার জন্য দুই তরুণ ভারতীয় শ্রীনিবাস ও মাদাসানি যাঁদের বয়স ৪০-এর নীচে, আক্রান্ত হন পানশালার এক শেতাঙ্গ নৌবাহিনীর অফিসারের দ্বারা৷ অফিসারটি মনে করেছিলেন যে, এই কৃষ্ণাঙ্গেরা মধ্যপ্রাচ্যের অধিবাসী, তারা আমেরিকার নয়৷ যেহেতু বিদেশী কৃষ্ণাঙ্গ ও আমেরিকায় কর্মরত তাই তিনি তাদের গুলি করেন ফলে একজন নিহত হন ও আর একজন মৃত্যুরর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে৷
সম্প্রতি আমেরিকায় যে নির্বাচন হয়ে গেল তাতে রিপাবলিকান দলের পক্ষে বিজয়ী হন মিঃ ট্রাম্প৷ তিনি আমেরিকানদের আমেরিকা এই নীতি ঘোষণা করেন৷ এই ধরণের হিংস্র নির্মম ঘটনা সেই নীতিরই কুফল বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন৷ আমেরিকার উদারনীতি একসময়ে সারা বিশ্বকে আকর্ষণ করেছিল কারণ আমেরিকার নীতিই ছিল আমেরিকা অভিবাসীদেরই দেশ৷ সফর করা, কাজ করা, পড়াশুনো করা ও বসবাস করার জন্য আমেরিকা সারা বিশ্বের মানুষকে স্বাগত জানায়৷ সেই কারণে স্ট্যাচু অব্ লিবার্টি-র সৃষ্টি হয়৷ কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেণ্ট হওয়ার পর তাঁর কিছু বক্তব্য যেমন আমেরিকানদের বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য অভিবাসন নীতির পরিবর্তন, চাকুরীতে স্থানীয় মাটির সন্তানদের অগ্রাধিকার দেওয়া ইত্যাদির দ্বারা উৎসাহিত হয়ে ২০১৬-এর নির্বাচনের পর মার্কিন দেশের উদার নীতির ঐতিহ্য ধীরে ধীরে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আঁচ করা হয়েছিল৷ বর্তমানে সেটাই যেন ঘটতে চলেছে বলে বহির্বিশ্বের রাষ্ট্রগুলি আশঙ্কা প্রকাশ করছে৷ তবে মার্কিন প্রশাসন বিশেষ করে হোয়াইট হাউস কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের কথার সঙ্গে কানসাসের হত্যাকাণ্ডের সম্পর্ক দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করেছে৷ মার্কিন প্রশাসনের এফ বি আই তদন্তের জন্য পৃথিবীকে অপেক্ষা করতে হবে, যদিও স্থানীয়ভাবে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু হয়ে গেছে সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসন দিল্লীকে জানিয়ে দিয়েছে যে, ওই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি নিছকই একটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনা মাত্র৷ মার্কিন পুলিশ হত্যাকারীকে গ্রেফ্তার করেছে ও তার তদন্ত চলছে৷ হত্যাকারী অ্যাডাম পুড়িটন পানশালায় নাকি মধ্যপ্রাচ্যের লোক মনে করে (বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের) তাকে দেশ ছেড়ে যাওয়ার হুমকী দিয়ে গুলি চালায়---এটা মোটেই মেনে নেওয়া যায় না৷ তবে আমেরিকায় যে সাদা কালো চামড়ার একটা ভেদাভেদ মাঝে মধ্যেই নানা ঘটনার মধ্যে দেখা যায় সেটাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷
এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে মনে রেখে আমেরিকায় বহির্দেশের লোকদের একটি বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন অবশ্যই করতে হবে৷ শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের নিছক ভাগ্যান্বেষণে ও ব্যষ্টিজীবনের ভোগ লালসা চরিতার্থ করতে আমেরিকায় পাড়ি দেওয়ার যে প্রবণতা তাকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন৷ যে সমস্ত মেধাবী শিক্ষিত বহির্দেশীয় তরুণ-তরুণী আমেরিকায় নিজেদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলেছেন তাঁরা আপন আপন দেশের উন্নতির জন্য কৃচ্ছসাধন করুন ও নিজেদের উন্নয়নে ব্রতী হোন৷ মার্কিন দেশের শিল্পপতিরা অল্প বেতনে বাইরের দেশের মেধা কিনে নিয়ে লাভবান হন ফলে সেই দেশের ভূমি সন্তানেরা কর্মলাভে সক্ষম হন না, কারণ তাদেরকে নিয়োগ করতে গেলে শিল্পপতিদের অনেক বেশী বেতন খরচ করতে হবে৷ এটাই নাকি স্থানীয়দের ক্ষোভ৷ বর্তমান সরকার সেদিকেই নজর দিচ্ছেন ও অভিবাসন নীতি ও অন্যান্য বিষয়ে আরও কঠোর হচ্ছেন৷ প্রকৃতপক্ষে এটা হল সেই দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার৷ একথা ইংল্যাণ্ডের প্রধানমন্ত্রীও উল্লেখ করেছেন আমাদের দেশের সরকারকে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যার ফলে ভারতের মেধা যেন ভাগ্যান্বেষণে বাইরে না চলে যায়৷ ভারতের উন্নয়নে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রারা যেন তাঁদের মেধাকে কাজে লাগাবার সুযোগ পান৷ যাঁরা ইতোমধ্যে আমেরিকায় চলে গেছেন তাঁরাও আমাদের দেশেরই সম্পদ ও এই পরিস্থিতিতে তাঁরা স্বদেশে ফিরে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করুন---তাতে আমাদের দেশেরই মঙ্গল৷
প্রতিটি দেশকে প্রাউট (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব)-এর আদর্শে সব দিক দিয়ে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে উঠতে হবে৷ কোন দেশেরই মেধা যেন অন্য দেশের স্বার্থে ব্যবহৃত না হয় ও বৌদ্ধিক শোষণমুক্ত হয়ে সমগ্র বিশ্ব সার্বিক দিক দিয়ে উন্নত ও শোষণমুক্ত হোক৷ এই বিষয়ে সারা পৃথিবীকে সচেতন হতে হবে ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার সর্বাত্মক প্রয়াস চালাতে হবে৷ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি সারা পৃথিবীর মানুষ ও সমাজকে শোষণ করেই নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করেছে৷ আমেরিকা তাদেরই মধ্যে প্রধান৷ মিঃ ট্রাম্পের স্মরণে রাখা প্রয়োজন যে, আমেরিকার উন্নতির মূলে আছে বাইরের দেশেরই উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা৷ তাঁদের মেধা ও বৌদ্ধিক শক্তি তাঁর দেশের সম্মান ও সম্পদকে উত্তরোত্তর বৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছে৷ মর্মান্তিক এই হত্যাকাণ্ডে সমগ্র ভারতের জনগণ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত৷ এই ধরনের বর্বরোচিত ও হিংস্র ঘটনা যেন আর না ঘটে তার দিকে ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক নজর রাখতে হবে৷ হতভাগ্য তরুণের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে মার্কিন প্রশাসনকে৷