‘কৃষক’ শব্দটি ভুল, হবে ‘কর্ষক’
এমনিতে যাঁরা চাষবাস নিয়ে থাকেন তাঁদের জন্যে সংস্কৃত ভাষায় বেশি প্রচলিত শব্দ দু’টি রয়েছে–কৃষীবল ও কর্ষক৷ ‘কর্ষক’ শব্দটি কৃষ ধাতু থেকে উৎপন্ন৷ যাঁরা এই কর্ষককে ‘কৃষক’ বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা না জেনেই এই ভুল করেছেন৷ আর যাঁরা আজও ‘কৃষক’ লেখেন তাঁরা ভুলকে ভুল না জেনেই লেখেন৷ আমরা ‘আকর্ষক’ ‘বিকর্ষক’ বলবার সময় ঠিক বলি কিন্তু কেন বুঝি না ‘কর্ষক’ বলবার সময় ভুল করে কৃষক বলে ফেলি৷
‘অপসংস্কৃতি’ শব্দটি ভুল, হবে ‘অসংস্কৃতি’
‘সংস্কৃতি’র বিপরীত শব্দ ‘অপকৃতি’ চলতে পারে, তবে ‘অপসংস্কৃতি’ চলতে পারে না৷ কারণ ‘সংস্কৃতি’ (সম্–কৃ + ক্তিন্ = সংস্কৃতি যার মানে যা মানুষকে সূক্ষ্মত্বের দিকে, রুচিবোধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়) মানেই ‘কৃতি’–র উন্নতাবস্থায় অধিরোহণ৷ ‘অপ’ মানে অবনত অবস্থা৷ একসঙ্গে দু’টো চলবে কি করে এ সোণার পাথর বাটি হয়ে গেল যে আবার ‘অপকৃতি’–র মানে ‘কুকার্য’ও হয়৷ তাই সংস্কৃতির বিপরীত শব্দ হিসেবে বরং ‘অসংস্কৃতি’ শব্দটা চলতে পারে৷ কেননা ‘সম্’ উপসর্গ সাধারণতঃ ভাল বা শুভ অর্থে প্রযোজ্য হয়৷ তাই ‘অপসংস্কৃতি’ শব্দটি অশুদ্ধ৷
‘অ্যা’ না ‘এ্যা’ – কোনটা ঠিক?
দীর্ঘদিন ধরে একটা বড় রকমের প্রশ্ণ প্রায় অনুত্তরিতই থেকে গেছে৷ সেটা হচ্ছে বাঙলার ‘এ্যা’ উচ্চারণটি সংক্রান্ত৷ সংস্কৃত ভাষায় ‘এ্যা’ উচ্চারণটি নেই৷ অধিকাংশ ভারতীয় ভাষাতেও নেই, কিন্তু ইংরাজীতে আছে৷ উচ্চারণটি ইংরাজীতে ant শব্দের ‘a’ অক্ষরটির মতো৷ ‘এ্যা’ উচ্চারণটি বাংলা ‘এ’ অক্ষরটি বিকৃত বা বিবৃত উচ্চারণ৷ যেমন ‘বেলা’ (Bela) না বলে যদি ‘ব্যালা’ বলি তাহলে ‘এ’ অক্ষরটিই বিকৃত বা বিবৃত উচ্চারণ করলুম, অন্য কোন স্বরবর্ণের নয়৷ সেই জন্য বাংলা ‘এ’ অক্ষরটিতে ‘য’–ফলা ও ‘আ’– কার দিয়ে ধ্বনিটি প্রকাশ করা উচিত৷ কিছু কিছু লোক ‘অ’–য়ে ‘য’–ফলা ও ‘আ’–কার দিয়ে ধ্বনিটি প্রকাশ করার চেষ্টা করেন৷ সেটি দু’টি কারণে সঙ্গত নয়৷ প্রথমতঃ ‘এ্যা’ উচ্চারণটি ‘এ’ অক্ষরটিরই বিকৃত বা বিবৃত রূপ, ‘অ’ অক্ষরের নয়৷ দ্বিতীয়তঃ সংস্কৃত ধ্বনি বিজ্ঞান মতে ‘অ’ অক্ষরটিতে ‘য’–ফলা ‘আ’–কার দিয়ে বানান করলে তার উচ্চারণ হবে ‘ইয়া’ অথচ আমরা চাইছি ইংরাজীর 'ant'-র ‘a’ উচ্চারণটি জানাতে৷
তাই 'academy- এ্যাকাডেমী’, তেমনি account = এ্যাক্কাউণ্ট, actor = এ্যাক্টর, admission = এ্যাডমিশান ইত্যাদি৷ (সূত্র ঃ ‘প্রভাতরঞ্জনের ব্যকরণ বিজ্ঞান’)